যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রবাসী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী।

মাহফুজ আলমের ওপর হামলার বিষয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নীরবতারও সমালোচনা করেন তারা।

আরো পড়ুন:

চবিতে বাগছাস নেতা রাফির বিরুদ্ধে ২ শিক্ষার্থীর সংবাদ সম্মেলন

জবিতে শিক্ষার্থীদের টানা পঞ্চম দিনের অবস্থান কর্মসূচি

তারা বলছেন, মাহফুজ আলম জুলাই বিপ্লবের অন্যতম প্রধান নেতা ও চিন্তক। তাকে একঘরে করে দেওয়া যাবে না। তার পাশে জুলাই বিপ্লবের সুবিধভোগীরা না থাকলেও বিপ্লবী ছাত্রজনতা তার পাশে আছে ও থাকবে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে জুলাই বিপ্লবী তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলাকারী ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সন্ত্রাসবাদীদের দমনের দাবিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ থেকে এসব কথা বলা হয়।

‘জুলাই বিপ্লবী শিক্ষার্থী ও নাগরিকবৃন্দ’ এর ব্যানারে আয়োজিত এ বিক্ষোভে বক্তব্য দেন, জুলাই বিপ্লবের আহত যোদ্ধা মাওলানা শফিকুর রহমান, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, সহকারী সদস্য সচিব জিহাদী ইহসান, সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মুস্তাকিম ও সৌরভ অন্তর প্রমুখ।

আব্দুস সালাম বলেন, “জুলাই বিপ্লবের ১ বছর পরও বিপ্লবীদের উপর হামলা হচ্ছে। এই ১ বছরে অনেক সুশীলতা দেখেছি, ঠিক যেমন সুশীলতা হয়েছিল ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর। ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগকে ৭৫ সালেই নিষিদ্ধ করা দরকার ছিল। কিন্তু চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের পর এসে তাদের শুধু রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িক নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, বর্তমান সংবিধানকে বাতিল করে নতুন সংবিধান রচনা করে তাতে ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন এবং তাদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করুন। কারণ ফ্যাসিস্টরা জনগণের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে সেখানে সুখে শান্তিতে আছে এবং সেখান থেকে জুলাই বিপ্লবীদের ওপর হামলা পরিচালনা করছে।”

আবদুল ওয়াহেদ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো বরাবর বিপ্লবের ফল ভোগ করে, কিন্তু বিপ্লবীদের পাশে থাকে না। তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরিবর্তনের সুবিধা নিছেন। কিন্তু খুনি হাসিনা যখন তাদের ফাঁসি দিয়েছে তখন রাজনৈতিক দলগুলো চুপ ছিল। এবারো তারা জুলাই বিপ্লবের সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর আমেরিকায় বাংলাদেশ কন্স্যুলেট অফিসে হামলার পরে কিছু বলছে না।”

বিক্ষোভে উপস্থিত জুলাই যোদ্ধা মাওলানা শফিকুর রহমান দেখিয়ে ডাকসুর ভিপি প্রার্থী আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “প্রতিনিয়ত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজ থেকে ছবি প্রচার করে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আজ যেখানে তথ্য উপদেষ্টা হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না, সেখানে জুলাই যোদ্ধা মাওলানা শফিকুর রহমান কিভাবে বাঁচবেন? তাকে কে নিরাপত্তা দেবে?”

ফজলুর রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত আমেরিকা সরকারের কাছে জবাবদিহিতা দাবি করা। কেন একটি স্বাধীন দেশের মন্ত্রীর সমমর্যাদাসম্পন্ন অতিথিকে তারা সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলো, তা আমেরিকাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। সেইসঙ্গে হামলার সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”

ফজলুর রহমান ফ্যাসিবাদী জামানায় লুটপাটকৃত সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে দেশের উন্নয়ন, শহীদ পরিবার এবং আহত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে ব্যবহারের জোর দাবি জানান।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক র রহম ন সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ