রাত
বাবা আমার ভেতরে রুয়ে দিয়েছেন এক অচেনা গণিত,
অসুখের পাঠশালা, নিরন্তর কোলাহল,
ক্রমাগত ব্যর্থ হবার তীব্র প্রবণতা,
বিপদের অন্ধকারে কুঁজো হয়ে খুঁজে যাওয়া
সামান্য দেশলাই, আগুনের উদ্যাপন,
মানুষের মাঝখানে ঝাঁপ মেরে সাঁতরে বেড়ানোর কৌশল,
প্রস্তুত রাখা বেনামি অশ্রু মুছে ফেলার রুমাল।
তাই বকেয়া টাকার দোষে ইলেকট্রিসিটি কেটে দিলেও
আমাদের ঘরে স্বর্গের পর্যাপ্ত আলো,
লাফিং বুদ্ধের গুণে হো হো হেসে ওঠা রাত।
স্কুল ছুটি হলে ইউনিফর্ম পরা এক মেয়ে
গির্জায় ঢুকে আজও প্রার্থনা করে:
আকাশের তারা থেকে ফিরে এসো মা,
আজই রাতে, ফাঁকা বাড়ির ছাদে।
বাসায় ফেরার পথে সাইকেল চাকায় তখন
বিকেল ফুরাচ্ছে।
পাশেই মৃত নদী, তার শিয়রে বসে
ছোট্ট এক ব্রিজ
হাত বোলাচ্ছে।
একটা অমীমাংসিত আপেল রেখে আমি চলে যাব
ভিন্ন জুয়াড়ি; খুলে রেখে যাব এই খয়েরি পোশাক।
সাদা সাদা আপেলের ত্বক হলুদ হবে প্রয়োজনে—
একাকী আপেল শরীরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে আদি পাপ!
এদিকে হেনস্তা মেনে জ্যাম-জেলির বিজ্ঞাপনে মূল্যছাড়
দাঁতের মজুরি দিতে সরব হচ্ছে রোজ টুথব্রাশ।
ঈদের ছুটিতে এবার গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি না।
বাবা ফোন করেছে: তবুও যদি আসতে পারো—
উঠানের সব কটি আমগাছেই এবার দারুণ মুকুল,
টিনের চালটার একপাশটা ফুটো হয়ে গেছে।
ব্যালকনিতে বসে ছোট ছেলেটা জলরং ঢালছে,
একটা কুঁড়েঘর, তার সামনে বয়ে চলা নদী।
সাঁতার জানি না বলেই আমি সেই নদী পার হতে পারি না।
ছেলেকে বললাম: ‘একটা সাঁকো আঁকো, সাঁকো।’
কোনো প্রত্যাশাই আজকাল আলো জ্বালতে পারে না,
যেকোনো উচ্চতা থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ে।
নিজের নিখোঁজ ছায়া খুঁজতে খুঁজতে কারা
হারিয়ে গেল জঙ্গলের গভীরে।
তাদের নীল টুপি আবিষ্কারের পর
আরও নিঃসঙ্গ হলো বনাঞ্চল।
সামান্য শখের নদী পেরোতে গিয়ে পায়ে
এত অপমান!
অথচ, স্বচ্ছ জলে রঙিন মাছেদের এখন
অকুণ্ঠ উৎসব।
এত সব সৌন্দর্য চাইনি ঈশ্বর, এত সব শিল্পসফলতা!
কোনো রকম স্বীকৃতিহীন আলোয় শেষবেলা রক্তাক্ত একা
নিজের পুরোনো লেখাকে থুতু ছিটিয়ে যেন
ফিরে আসতে পারি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।