যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় মঙ্গলবার গভীর রাতে দুই দিনের সফরে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। দেশটিতে এটি তাঁর দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর, যা কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য নজিরবিহীন।

সফরে দুই দেশ অনেকগুলো বিনিয়োগ চুক্তি সই করবে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরের মধ্য দিয়ে লন্ডন-ওয়াশিংটনের ‘বিশেষ সম্পর্ক’ জোরদার হয়েছে বলে প্রচার করতে চেষ্টা করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

ট্রাম্প লন্ডনে পৌঁছার আগে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য অর্থনীতিবিষয়ক চুক্তির কাজ এগিয়ে রেখেছেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে একটি ‘ট্রান্সআটলান্টিক টাস্কফোর্স’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।

স্থানীয় সময় বুধবার উইনসর ক্যাসেলে রাজা তৃতীয় চার্লস ট্রাম্পকে স্বাগত জানাবেন। রাজকীয় আড়ম্বরে ট্রাম্পকে বরণ করা হবে। সেখানে তিনি ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পসহ নৈশভোজে অংশ নেবেন। 

দুই নেতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্বস্তি

এই সফর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এক ধরনের মানসিক স্বস্তির মতো। কারণ সফরের এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র ও রক্ষণশীল সংগঠন চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড ট্রাম্পকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।

অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারও চাইছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু যেন ভূরাজনীতি ও বিনিয়োগের দিকেই ঘুরে যায়। কারণ গত কয়েক সপ্তাহ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে তাঁকে বেশ কঠিন সময় পার করতে হয়েছে।

সম্প্রতি নিজের ডেপুটিকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছেন স্টারমার। এর মাত্র ছয় দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত পিটার ম্যান্ডেলসনকেও পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন তিনি। ম্যান্ডেলসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, যৌন নিপীড়ক ও নারী পাচারকারী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।

স্টারমার এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্পকে বহনকারী মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট এয়ার ফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে করে উত্তর লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রোটোকল কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূত মোনিকা ক্রাউলি স্বাগত জানান। রাজার পক্ষে স্বাগত জানান ভিসকাউন্ট হুড।

এরপর ট্রাম্প ও মেলানিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি হেলিকপ্টার মেরিন ওয়ানে করে কেন্দ্রীয় লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রিজেন্টস পার্কে অবস্থিত উইনফিল্ড হাউসে তাঁরা রাত কাটাবেন। এটি  যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবন। বুধবার সকালে উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজা ও রানির আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের সফরের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।

সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও স্টারমার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি গ্রামীণ বাসভবনে বৈঠক করবেন। সেখানে উভয় দেশের বিখ্যাত কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারও যোগ দেবেন। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেনসেন হুয়াং এবং ওপেনএআই এর স্যাম অল্টম্যান অন্যতম। ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মাইক্রোসফট জানিয়েছে, আগামী চার বছরে তারা যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করবে। গুগল বলেছে, তারা ৫০০ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করবে। এসব বিনিয়োগের একটি বড় অংশ লন্ডনে একটি নতুন ডেটা সেন্টার তৈরিতে ব্যয় করা হবে। কেন্দ্রটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক সেবার বাড়তি চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে।

দায়িত্ব পালনকালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুক্তরাজ্যে দুইবার রাষ্ট্রীয় সফর বিরল ঘটনা। ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালের জুনে প্রথমবার যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র ষ ট র য় সফর য ক তর জ য কর মকর ত র য ক তর র জন য সফর র

এছাড়াও পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির। 

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটসকে বলেন, “আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে।”

আরো পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।

ট্রাম্প এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান মাদক বন্ধ করার লক্ষ্যে নয়, বরং ট্রাম্প বিরোধী মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ‘অনেক কিছু’ সম্পর্কে।

বিবিসির মার্কিন নিউজ পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।

সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন হামলায় আপনি যেসব নৌযানে বিস্ফোরণ হতে দেখেন, তার প্রতিটিতে অন্তত ২৫ হাজার মাদকদ্রব্য ধ্বংস হয়। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সরবরাহের জন্য দায়ী।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথে ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনা করছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি এটা বলতে চাই না যে আমি এটা করব...আমি ভেনেজুয়েলার সাথে কী করব, আমি তা করব কিনা, তা আমি বলব না।”

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর অভিযোগ, নৌযানগুলোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় ‘আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করছে।

ট্রাম্প জানান, তার সরকার ‘সারা বিশ্ব থেকে’ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ‘আসতে’ দেবে না।

তিনি বলেন, “তারা কঙ্গো থেকে আসে, তারা সারা বিশ্ব থেকে আসে, তারা আসছে, কেবল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নয়। তবে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা- খারাপ। তাদের গ্যাং আছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার’ নাম উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করেন।

জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ