অনেক সময় কোমর থেকে নিতম্ব হয়ে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়া ব্যথাকে ‘সায়াটিকা’ মনে করা হয়ে থাকে। কিন্তু সব সায়াটিকা ডিস্ক সরে যাওয়া বা হেরনিয়েটেড ডিস্কের কারণে হয় না। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো পাইরিফরমিস সিনড্রোম।

পাইরিফরমিস একটি ছোট পেশি, যা নিতম্বের গভীরে থাকে। এর পাশ দিয়েই সায়াটিক নার্ভ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু পায়ে নেমে যায়। যদি এই পেশি অতিমাত্রায় সংকুচিত হয় বা ফুলে যায়, তবে এটি সায়াটিক নার্ভকে চেপে ধরে এবং কোমর থেকে নিতম্ব হয়ে পা পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুনঠিক কতটুকু ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে কাপড় হবে পরিষ্কার, অপচয়ও কমবে৪ ঘণ্টা আগেকেন হয়, উপসর্গ কী

পেশির অতিরিক্ত ব্যবহার, যেমন অনেক হাঁটা, দৌড়ানো, খেলাধুলার কারণে হয়ে থাকে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় বসে থাকা, নিতম্বে আঘাত বা পড়ে যাওয়া, পায়ের দৈর্ঘ্যের অমিল ও হাঁটার ভঙ্গির সমস্যার কারণেই এটা হয়।

নিতম্বে গভীর ব্যথা, যা বসলে বা হাঁটলে বেড়ে যাওয়া পাইরিফরমিস সিনড্রোমের প্রধান উপসর্গ। এ ছাড়া ব্যথা কোমর থেকে ঊরুর পেছনে এবং অনেক সময় পায়ের নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। নিতম্ব চেপে ধরলে ব্যথা বাড়ে। আবার কখনো কখনো ঝিনঝিন বা টানটান অনুভূতি হয়ে থাকে।

কিছু শারীরিক পরীক্ষা বা ক্লিনিক্যাল টেস্ট দিয়েই আঁচ করা যায় আপনি এই সিনড্রোমে আক্রান্ত কি না। মাসকুলোস্কেলিটাল আলট্রাসাউন্ড করলে দেখা যেতে পারে পেশি মোটা হয়ে গেছে বা সায়াটিক নার্ভে চাপ পড়েছে।

যদি অন্য কারণ, যেমন ডিস্ক প্রোলাপ্স হয়েছে বলে চিকিৎসক সন্দেহ করেন, তাহলে এমআরআই করে নিশ্চিত হতে হবে। পাইরিফরমিস লোকাল অ্যানেস্থেটিক দিয়ে ব্যথা কমে গেলে এটি রোগনির্ণয়ে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনসহজ এই ১২টি উপায় মানলে মস্তিষ্ক থাকবে চাঙা ও কর্মক্ষম১ ঘণ্টা আগেচিকিৎসা ও করণীয়

এই রোগের চিকিৎসার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষ্য হবে ব্যথা কমানো ও পেশি ঢিলা করা। নিতম্বে নড়াচড়া বাড়ানো ও হাঁটা উন্নত করা হবে মাঝারি পর্যায়ের লক্ষ্য। পুনরায় যেন সমস্যা না হয়, রোগী যেন ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হবে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য।

বিশ্রাম নিতে হবে। দীর্ঘ সময় বসে থাকা যাবে না। শক্ত মেঝেতে বসা যাবে না। কাত হয়ে ঘুমালে দুই হাঁটুর মাঝখানে বালিশ রাখবেন। অফিসে ব্যবহার করবেন আরামদায়ক চেয়ার।

গরম সেঁক বা আলট্রাসাউন্ড থেরাপি নিতে পারেন। ব্যথা কমাতে টেনস ব্যবহার করা যায়। পাইরিফরমিস স্ট্রেচিং, হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ এবং নিতম্ব ও কোমরের পেশি শক্ত করার ব্যায়াম করতে হবে।

মায়োফেসিয়াল রিলিজ ও ট্রিগার পয়েন্ট রিলিজের মতো ম্যানুয়েল থেরাপি বেশ কাজের। আলট্রাসনোগাইডেড লোকাল স্টেরয়েড বা বটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন দ্রুত আরাম দেয়। মনে রাখবেন, সঠিকভাবে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে এ ব্যথা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ডা.

সাকিব আল নাহিয়ান, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুননতুন আইফোন কেনার মতো টাকা আয় করতে যুক্তরাষ্ট্রে লাগবে ৫ দিন, বাংলাদেশে কত দিন১২ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র লক ষ য ন তম ব

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সবজি দেখলেই ভয় পান? তাহলে আপনারও আছে ল্যাকানোফোবিয়া
  • চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া