তহবিলের সংকটের কারণে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের প্রাণ রক্ষায় নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফগার্ডের সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে। ফলে ১ অক্টোবর থেকে সমুদ্রে গোসলে নামা পর্যটকদের ঝুঁকি বাড়বে। সাগরে নেমে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধারে থাকবে না কোনো তৎপরতা। পাশাপাশি চাকরি হারাবেন ২৭ জন লাইফগার্ডসহ ৩৫ জন।

আন্তর্জাতিক (ইউকে) সংস্থা ‘রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউট’–এর (আরএনএলআই) অর্থায়নে ২০১২ সাল থেকে সি-সেফ লাইফগার্ড সৈকতে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গত ১২ বছরে ২৭ জন লাইফগার্ড কর্মী সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ার সময় অন্তত ৮০৭ পর্যটককে উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচিয়েছেন। একই সময় গুপ্তখাল কিংবা স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে নিহত ৬৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

সি-সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, গত সোম ও মঙ্গলবার সৈকতের সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে ভেসে যাওয়ার সময় পাঁচজনকে উদ্ধার করে প্রাণে রক্ষা করা হয়। চলতি বছরের আট মাসে সৈকতে গোসলে নেমে মারা গেছেন ১১ জন পর্যটক। এ ছাড়া ভেসে যাওয়ার সময় উদ্ধার করা হয় আরও ১১ জনকে।

সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটায় সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হয় বগুড়ার কলেজছাত্র জুহায়ের আয়মান (১৭)। সে ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের খালাতো ভাই মো.

শরিফুল ইসলামের ছেলে। পরের দিন সমিতিপাড়া সৈকতে তার লাশ ভেসে আসে।

৭ জুলাই সকাল পৌনে সাতটার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপের হিমছড়ির সৈকত এলাকায় সাগরে গোসলে নেমে ভেসে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান, কে এম সাদমান রহমান ও আসিফ আহমেদ। দুই ঘণ্টা পর হিমছড়ি সৈকতেই কে এম সাদমান রহমানের লাশ ভেসে আসে। পরদিন ৮ জুলাই সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলের প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেক শুঁটকিমহাল সৈকতে পাওয়া যায় আসিফ আহমেদের লাশ; কিন্তু দুই মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও অরিত্র হাসানের সন্ধান মেলেনি। সেবা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার খবরে লাইফগার্ড কর্মীরা যেমন বিপাকে, তেমনি পর্যটকেরাও হতাশ।

সমুদ্রে কোনো পর্যটক ভেসে গেলে আমরা ঝুঁকি নিয়ে জীবন বাঁচাই, এখন আমাদের জীবনটাই ঝুঁকিতে পড়ে গেল। আমাদের বাঁচানোর কেউ নেইমো. ওসমান, লাইফগার্ড কর্মী

হোটেলমালিকদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিবছর কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে আসেন অন্তত ৭০ লাখ মানুষ। পাঁচ কিলোমিটারে লাইফগার্ড সেবা থাকলেও আরও ১১৫ কিলোমিটার সৈকত অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকছে।

সি সেফ লাইফ গার্ডের সদস্যরা কক্সবাজার সৈকতের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন গত এক যুগ ধরে। ৩০ সেপ্টেম্বর বন্ধ হচ্ছে তাদের কার্যক্রম

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইফগ র ড র স কত স কত র

এছাড়াও পড়ুন:

সৈকতে নারী পর্যটকদের গোসলের ভিডিও ধারণ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কারাদণ্ড

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গোসলরত নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণ করার দায়ে রুবেল (৩০) নামে এক কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসিন সাদীক। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রুবেল বরগুনা সদর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি মুদি দোকানের ব্যবসার পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরি করেন।

সৈকতের ফটোগ্রাফার আরিফ মিয়া  বলেন, ‘‘রুবেল নারীদের গোসলের ভিডিও করছিলেন। প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। বিষয়টি দেখত পেয়ে তাকে আটক করি।’’

অপর ফটোগ্রাফার রাসেল বলেন, “রুবেলের মোবাইল চেক করে দেখি, অনেক ভিডিও। সঙ্গে সঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশকে খবর দেই। পরে তাদের কাছে সোপর্দ করি।’’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসিন সাদেক বলেন, “অনুমতি ছাড়া নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণের দায়ে রুবেলকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’’

ঢাকা/ইমরান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাতারগুলের বর্ণনা দিয়ে, গজল গেয়ে পর্যটক টানেন সিফত মাঝি
  • সৈকতে নারী পর্যটকদের গোসলের ভিডিও ধারণ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কারাদণ্ড