বন্ধ হচ্ছে লাইফগার্ড সেবা, সাগরে গোসলে নামা পর্যটকদের কী হবে
Published: 19th, September 2025 GMT
তহবিলের সংকটের কারণে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের প্রাণ রক্ষায় নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফগার্ডের সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে। ফলে ১ অক্টোবর থেকে সমুদ্রে গোসলে নামা পর্যটকদের ঝুঁকি বাড়বে। সাগরে নেমে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধারে থাকবে না কোনো তৎপরতা। পাশাপাশি চাকরি হারাবেন ২৭ জন লাইফগার্ডসহ ৩৫ জন।
আন্তর্জাতিক (ইউকে) সংস্থা ‘রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউট’–এর (আরএনএলআই) অর্থায়নে ২০১২ সাল থেকে সি-সেফ লাইফগার্ড সৈকতে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গত ১২ বছরে ২৭ জন লাইফগার্ড কর্মী সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ার সময় অন্তত ৮০৭ পর্যটককে উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচিয়েছেন। একই সময় গুপ্তখাল কিংবা স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে নিহত ৬৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
সি-সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, গত সোম ও মঙ্গলবার সৈকতের সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে ভেসে যাওয়ার সময় পাঁচজনকে উদ্ধার করে প্রাণে রক্ষা করা হয়। চলতি বছরের আট মাসে সৈকতে গোসলে নেমে মারা গেছেন ১১ জন পর্যটক। এ ছাড়া ভেসে যাওয়ার সময় উদ্ধার করা হয় আরও ১১ জনকে।
সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটায় সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হয় বগুড়ার কলেজছাত্র জুহায়ের আয়মান (১৭)। সে ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের খালাতো ভাই মো.
৭ জুলাই সকাল পৌনে সাতটার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপের হিমছড়ির সৈকত এলাকায় সাগরে গোসলে নেমে ভেসে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান, কে এম সাদমান রহমান ও আসিফ আহমেদ। দুই ঘণ্টা পর হিমছড়ি সৈকতেই কে এম সাদমান রহমানের লাশ ভেসে আসে। পরদিন ৮ জুলাই সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলের প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেক শুঁটকিমহাল সৈকতে পাওয়া যায় আসিফ আহমেদের লাশ; কিন্তু দুই মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও অরিত্র হাসানের সন্ধান মেলেনি। সেবা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার খবরে লাইফগার্ড কর্মীরা যেমন বিপাকে, তেমনি পর্যটকেরাও হতাশ।
সমুদ্রে কোনো পর্যটক ভেসে গেলে আমরা ঝুঁকি নিয়ে জীবন বাঁচাই, এখন আমাদের জীবনটাই ঝুঁকিতে পড়ে গেল। আমাদের বাঁচানোর কেউ নেইমো. ওসমান, লাইফগার্ড কর্মীহোটেলমালিকদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিবছর কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে আসেন অন্তত ৭০ লাখ মানুষ। পাঁচ কিলোমিটারে লাইফগার্ড সেবা থাকলেও আরও ১১৫ কিলোমিটার সৈকত অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকছে।
সি সেফ লাইফ গার্ডের সদস্যরা কক্সবাজার সৈকতের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন গত এক যুগ ধরে। ৩০ সেপ্টেম্বর বন্ধ হচ্ছে তাদের কার্যক্রমউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইফগ র ড র স কত স কত র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস