Prothomalo:
2025-11-04@04:15:58 GMT

জীবিকার জন্য পরিশ্রম করা ইবাদত

Published: 19th, September 2025 GMT

শ্রমের মর্যাদা ইসলামে এমন, যা কেবল জীবিকার পথ দেখায় না, বরং হৃদয়কে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়। ইসলামে সৎ শ্রম কেবল একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, এটি একটি ইবাদত।

মহানবী মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়েছেন, হালাল উপার্জন একটি মহৎ কাজ, যা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের কল্যাণে অবদান রাখে। তাঁর জীবনের দুটি গল্প আমাদের এই পাঠ মনে করিয়ে দেয়।

নবীজির শিক্ষা

একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.

) একজন ব্যক্তিকে দেখলেন যে সে সব সময় মসজিদে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই ব্যক্তি কে? জানা গেল, তাঁর ভাই কাজ করে তাঁকে সহায়তা করেন। নবীজি বললেন, ‘তাঁর ভাই তাঁর চেয়ে উত্তম।’ (আল-বায়হাকি, শুআব আল-ইমান, হাদিস: ৫,৩০০)

কারও জন্য তার নিজের হাতে উপার্জিত খাবারের চেয়ে উত্তম খাবার আর নেই।সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,০৭২

বোঝা যায়, শ্রমের মর্যাদা কতখানি। নিজের ও অন্যের জন্য কাজ করা, জীবিকা অর্জন করা—এটি মসজিদে ইবাদতের চেয়েও মহৎ হতে পারে, যদি তা সমাজের কল্যাণে কাজে আসে।

নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বা সেবামূলক কাজ—প্রতিটি সৎ শ্রম আল্লাহর দৃষ্টিতে মূল্যবান। এই হাদিস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শ্রম কেবল জীবিকা নয়, এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব।

আরও পড়ুননিজের যত্নও একটি ইবাদত১১ আগস্ট ২০২৫

আরেকটি হাদিসে আছে, একজন ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর কাছে বললেন, ‘আমার ভাই বাড়িতে বসে থাকে, কাজ করে না, আর আমি কাজ করে তাঁকে সহায়তা করি।’ নবীজি উত্তর দিলেন, ‘হয়তো তোমার রিজিক তাঁর কারণেই দেওয়া হচ্ছে।’ (তাবারানি, আল-মুজাম আল-কাবির, হাদিস: ১০,৯৪৯; আল-হাকিম, আল-মুস্তাদরাক, ২/১২০)

এখানে লোকটির ভাই ছিলেন দুর্বল। অপারগ বা অসুস্থ থাকায় কাজ করতে পারেন না তিনি। কিন্তু তাঁর দোয়া নিশ্চয় তাঁর শ্রমজীবী ভাইয়ের সঙ্গে আছে। আমাদের শ্রমের পেছনে অন্যের দোয়া বা নিষ্ঠার অদৃশ্য আশীর্বাদ থাকতে পারে।

ইসলামে শ্রম কেবল পেশা নয়, এটি আল্লাহর কাছে যাওয়ার পথ। নবীজি (সা.) নিজে কাজ করেছেন, ব্যবসা করেছেন, আর শ্রমের মর্যাদাকে উঁচুতে তুলে ধরেছেন।

ইসলাম শ্রমের সম্মানের পাশাপাশি আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসার পাঠ দেয়। আমাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি প্রচেষ্টা আল্লাহর হাতে, আর তিনিই সবকিছুর উৎস। (সুরা আনফাল, আয়াত: ১৭)

শ্রমের মধ্যে ইবাদত

ইসলামে শ্রম কেবল পেশা নয়, এটি আল্লাহর কাছে যাওয়ার পথ। নবীজি (সা.) নিজে কাজ করেছেন, ব্যবসা করেছেন, আর শ্রমের মর্যাদাকে উঁচুতে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কারও জন্য তার নিজের হাতে উপার্জিত খাবারের চেয়ে উত্তম খাবার আর নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,০৭২)

আরও পড়ুনযখন নীরবতাই ইবাদত২৯ আগস্ট ২০২৫

প্রতিটি সৎ কাজ, প্রতিটি পরিশ্রম আল্লাহর দৃষ্টিতে মূল্যবান। যখন একজন শ্রমিক তাঁর পরিবারের জন্য কাজ করেন, সমাজের জন্য অবদান রাখেন, তখন তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ যেন একটি ইবাদত, যা তাঁর হৃদয়কে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়।

ইসলাম আমাদের শেখায়, শ্রমের মধ্যে সম্মান আছে। একজন কৃষক যিনি মাটিতে ঘাম ঝরান, একজন শিক্ষক যিনি ছাত্রদের জ্ঞানের আলো দেন, একজন নির্মাণশ্রমিক যিনি শহর গড়েন—প্রত্যেকের শ্রম আল্লাহর কাছে প্রিয়।

এই শ্রম কেবল জীবনধারণের জন্য নয়, এটি সমাজকে একত্র করে, হৃদয়ে হৃদয়ে সেতুবন্ধ গড়ে।ইমাম আল-গাজ্জালি, ইহইয়া উলুমুদ্দিন

এই শ্রম কেবল জীবনধারণের জন্য নয়, এটি সমাজকে একত্র করে, হৃদয়ে হৃদয়ে সেতুবন্ধ গড়ে। (ইমাম আল-গাজ্জালি, ইহইয়া উলুমুদ্দিন, ২/২৪৫, দার আল-মিনহাজ, জেদ্দা, ১৯৮০)

আমরা যখন যুদ্ধ ও হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন আমাদের শ্রমের মর্যাদাও মনে রাখতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে আমাদের একতা, করুণা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ইসলাম আমাদের শেখায়, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করো এবং ন্যায়বিচারের পথে অটল থাকো।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৩৮)

আল্লাহ আমাদের শ্রমকে বরকত দিন, আমাদের প্রচেষ্টাকে সম্মান দিন, আর আমাদের হৃদয়ে শান্তি আনুন।

আরও পড়ুনপার্থিব জাঁকজমক যেন আধ্যাত্মিকতার বাধা না হয়০৭ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র শ ক বল জ ব আল ল হ র জন য কর ছ ন ক জ কর ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন

‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।

তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।

জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।

ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।

‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’

সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’

রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস, ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রসিকিউটর গ্রেপ্তার
  • ত্রাস সৃষ্টি, টার্গেট কিলিং: ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাবমূর্তি
  • ঢাবি থেকে ড. জাকির নায়েককে ডক্টরেট দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের
  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন