জীবিকার জন্য পরিশ্রম করা ইবাদত
Published: 19th, September 2025 GMT
শ্রমের মর্যাদা ইসলামে এমন, যা কেবল জীবিকার পথ দেখায় না, বরং হৃদয়কে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়। ইসলামে সৎ শ্রম কেবল একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, এটি একটি ইবাদত।
মহানবী মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়েছেন, হালাল উপার্জন একটি মহৎ কাজ, যা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের কল্যাণে অবদান রাখে। তাঁর জীবনের দুটি গল্প আমাদের এই পাঠ মনে করিয়ে দেয়।
নবীজির শিক্ষাএকটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.
বোঝা যায়, শ্রমের মর্যাদা কতখানি। নিজের ও অন্যের জন্য কাজ করা, জীবিকা অর্জন করা—এটি মসজিদে ইবাদতের চেয়েও মহৎ হতে পারে, যদি তা সমাজের কল্যাণে কাজে আসে।
নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বা সেবামূলক কাজ—প্রতিটি সৎ শ্রম আল্লাহর দৃষ্টিতে মূল্যবান। এই হাদিস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শ্রম কেবল জীবিকা নয়, এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব।
আরও পড়ুননিজের যত্নও একটি ইবাদত১১ আগস্ট ২০২৫আরেকটি হাদিসে আছে, একজন ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর কাছে বললেন, ‘আমার ভাই বাড়িতে বসে থাকে, কাজ করে না, আর আমি কাজ করে তাঁকে সহায়তা করি।’ নবীজি উত্তর দিলেন, ‘হয়তো তোমার রিজিক তাঁর কারণেই দেওয়া হচ্ছে।’ (তাবারানি, আল-মুজাম আল-কাবির, হাদিস: ১০,৯৪৯; আল-হাকিম, আল-মুস্তাদরাক, ২/১২০)
এখানে লোকটির ভাই ছিলেন দুর্বল। অপারগ বা অসুস্থ থাকায় কাজ করতে পারেন না তিনি। কিন্তু তাঁর দোয়া নিশ্চয় তাঁর শ্রমজীবী ভাইয়ের সঙ্গে আছে। আমাদের শ্রমের পেছনে অন্যের দোয়া বা নিষ্ঠার অদৃশ্য আশীর্বাদ থাকতে পারে।
ইসলামে শ্রম কেবল পেশা নয়, এটি আল্লাহর কাছে যাওয়ার পথ। নবীজি (সা.) নিজে কাজ করেছেন, ব্যবসা করেছেন, আর শ্রমের মর্যাদাকে উঁচুতে তুলে ধরেছেন।ইসলাম শ্রমের সম্মানের পাশাপাশি আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসার পাঠ দেয়। আমাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি প্রচেষ্টা আল্লাহর হাতে, আর তিনিই সবকিছুর উৎস। (সুরা আনফাল, আয়াত: ১৭)
শ্রমের মধ্যে ইবাদতইসলামে শ্রম কেবল পেশা নয়, এটি আল্লাহর কাছে যাওয়ার পথ। নবীজি (সা.) নিজে কাজ করেছেন, ব্যবসা করেছেন, আর শ্রমের মর্যাদাকে উঁচুতে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কারও জন্য তার নিজের হাতে উপার্জিত খাবারের চেয়ে উত্তম খাবার আর নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,০৭২)
আরও পড়ুনযখন নীরবতাই ইবাদত২৯ আগস্ট ২০২৫প্রতিটি সৎ কাজ, প্রতিটি পরিশ্রম আল্লাহর দৃষ্টিতে মূল্যবান। যখন একজন শ্রমিক তাঁর পরিবারের জন্য কাজ করেন, সমাজের জন্য অবদান রাখেন, তখন তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ যেন একটি ইবাদত, যা তাঁর হৃদয়কে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়।
ইসলাম আমাদের শেখায়, শ্রমের মধ্যে সম্মান আছে। একজন কৃষক যিনি মাটিতে ঘাম ঝরান, একজন শিক্ষক যিনি ছাত্রদের জ্ঞানের আলো দেন, একজন নির্মাণশ্রমিক যিনি শহর গড়েন—প্রত্যেকের শ্রম আল্লাহর কাছে প্রিয়।
এই শ্রম কেবল জীবনধারণের জন্য নয়, এটি সমাজকে একত্র করে, হৃদয়ে হৃদয়ে সেতুবন্ধ গড়ে।ইমাম আল-গাজ্জালি, ইহইয়া উলুমুদ্দিনএই শ্রম কেবল জীবনধারণের জন্য নয়, এটি সমাজকে একত্র করে, হৃদয়ে হৃদয়ে সেতুবন্ধ গড়ে। (ইমাম আল-গাজ্জালি, ইহইয়া উলুমুদ্দিন, ২/২৪৫, দার আল-মিনহাজ, জেদ্দা, ১৯৮০)
আমরা যখন যুদ্ধ ও হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন আমাদের শ্রমের মর্যাদাও মনে রাখতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে আমাদের একতা, করুণা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ইসলাম আমাদের শেখায়, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করো এবং ন্যায়বিচারের পথে অটল থাকো।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৩৮)
আল্লাহ আমাদের শ্রমকে বরকত দিন, আমাদের প্রচেষ্টাকে সম্মান দিন, আর আমাদের হৃদয়ে শান্তি আনুন।
আরও পড়ুনপার্থিব জাঁকজমক যেন আধ্যাত্মিকতার বাধা না হয়০৭ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র শ ক বল জ ব আল ল হ র জন য কর ছ ন ক জ কর ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই দলের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন পাঁচ জন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে এই রণক্ষেত্র তৈরি হয় সদর উপজেলার আলোকবালী এলাকায়।
সংঘর্ষে নিহতের নাম ইদন মিয়া (৫৫)। তিনি সদর উপজেলার মুরাদনগর গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের তাৎক্ষণিক পরিচয় জানা না গেলেও তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদী থেকে বালু উত্তোলন, জমি দখল এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্ব আরো ঘনীভূত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে এই সংঘর্ষ বাধে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উভয়পক্ষই দেশীয় অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ইদন মিয়াকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্ভাব্য নতুন সংঘর্ষের আশঙ্কায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা বা আটকসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, “ঘটনার বিস্তারিত জানতে তদন্ত চলছে। শুনেছি একজন নিহত হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।”
ঢাকা/হৃদয়/এস