ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশে সোপর্দ
Published: 13th, January 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতা মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে গেলে তাঁকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন শিক্ষার্থীরা। মামুন অর রশিদ নামের ওই ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী।
আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডি, বিভাগের শিক্ষক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা তাঁকে উদ্ধার করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় সোপর্দ করেন
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মামুন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছিলেন। আন্দোলন–পরবর্তী সময়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানা যায়, সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নেন মামুন অর রশিদ। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা ভবনের তৃতীয় তলায় ৩১৫ নম্বর কক্ষের সামনে জড়ো হয়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দেন। পরে প্রক্টরিয়াল বডি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা তাঁকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে থানায় সোপর্দ করেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের কিল-ঘুষি ও চড়থাপ্পড়ের শিকার হন তিনি।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘মামুন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। পরে আমি তাঁকে আসতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আজকে সে কখন এসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, তা বুঝতে পারিনি। পরে প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র উপদেষ্টা ও সমন্বয়কেরা তাকে থানায় দিয়েছে।’
প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা সহকারী অধ্যাপক ফকরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় তাঁকে পরীক্ষা দিতে আসতে নিষেধ করলেও পরীক্ষা দিতে এসেছে। পুলিশি তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে পুলিশ হেফাজতে দিয়েছে। নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠনের নেতা মামুন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় আহত আরমান মীর নামের একজন গত ৩০ অক্টোবর কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করেন। ওই মামলায় মামুন অর রশিদ ১৮ নম্বর আসামি। গত ৩১ ডিসেম্বর ওই মামলায় হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। পরে ৭ জানুয়ারি তিনি জামিন পান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নোবিপ্রবির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা স্থায়ী বহিষ্কার
আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়াকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অশ্লীল ও শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করায় স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আরো পড়ুন:
জুলাই বিরোধিতা: ইবির ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার
সোমবার (৩ নভেম্বর) নোবিপ্রবির রেজিষ্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো. তামজীদ হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত বিদেশে গমন করেন, যা সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর ধারা ২(চ) অনুযায়ী ‘পলায়ন’ ।
এছাড়া একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করায় ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ,২০০১’ এর ধারা ৪৭(৫) এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, গত ২৮ মে আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলে সেটির জবাব যথাযথ হয়নি। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি আপনাকে পুনরায় ৭ জুলাই বিজ্ঞ আইনজীবীর মতামত এবং ৩১ জুলাই প্রেরিত নোটিশের জবাব না দেয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭ তম সভার আলোচ্যসূচি-১৮ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ৪৭(৮) ধারা অনুযায়ী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও (গ) অনুযায়ী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সহকারী পরিচালক (সামরিক বরখাস্ত) পদ থেকে চূড়ান্ত বা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো লেনদেন থাকলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতির বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে থাকেন এই কর্মকর্তা।
ঢাকা/শফিউল্লাহ/মেহেদী