নাটোরের ছাত্রলীগ নেতা মাসুম ঈশ্বরদী থেকে গ্রেপ্তার
Published: 17th, January 2025 GMT
নিষিদ্ধষোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নাটোরের জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিয়াজুল ইসলাম মাসুম নাটোর সদর আসনের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের ঘনিষ্ঠ সহচর বলে পরিচিত।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই বিক্ষুব্ধ জনতা রিয়াজুল ইসলাম মাসুমের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। তবে ছাত্রলীগের এই সাবেক নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরব ছিলেন।
নাটোর সদর থানার ওসি মাহাবুর রহমান নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা মাসুমকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পাবনার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় রিয়াজুল ইসলাম মাসুমকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে নাটোরের কয়েকজন লোক। এরপর তারা খবর দিলে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাসুমকে গ্রেপ্তার করে নাটোরে আনে।
ওসি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত মাসুমের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, নির্যাতন ও হত্যাসহ সাতটি মামলা রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র য় জ ল ইসল ম ম স ম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ চূড়ান্ত হচ্ছে, আইনি ভিত্তি নিয়ে কী ভাবছে দলগুলো
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। এখন ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছে কমিশন। তবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রথম ধাপের আলোচনায় যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো ইতিমধ্যে লিখিত আকারে রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপেরগুলোও শিগগিরই পাঠানো হবে। দলগুলোর পরামর্শ বা সংশোধনী নিয়ে সেগুলো সমন্বয় করে জুলাই সনদ খুব দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে। এরপর সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সই নেওয়া হবে।
এরপর জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেটা নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এ বিষয়ে আগামীকাল রোববার ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানা গেছে।
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবার কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হবে। এরপর তা দলগুলোকে দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশন দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করবে। এর বাইরেও যতটুকু প্রয়োজন, সবাইকে সমন্বিত করে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। তার আগে জাতীয় সনদকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া দরকার। আগামী কয়েক দিন কমিশন সে কাজ করবে। তারপর বাস্তবায়নের পথ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হতে পারে।
দলগুলোর প্রতিক্রিয়া‘জুলাই জাতীয় সনদ’ খুব দ্রুতই হবে বলে আশাবাদী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি যখনই চূড়ান্ত হয়ে আমাদের কাছে আসবে, আমরা স্বাক্ষর করব। এই সনদ যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই জন্য আমরা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সালাহউদ্দিন আহমদ বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের এক কর্মসূচিতেও জুলাই সনদ নিয়ে কথা বলেন। জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়ে সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই সনদে যেসব সুপারিশ থাকবে, সেগুলো দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বলে সব রাজনৈতিক দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান, আইন ও বিধিবিধানের যেসব সংশোধনী প্রয়োজন হবে, সেগুলো আমরা করব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনা এবং তাতে সব ঘরানার দলের উপস্থিতিকে খুবই ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তবে তিনি মনে করেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কী হবে, এর বাস্তবায়ন কীভাবে ও কখন হবে, এ বিষয়ে বিরাট ফাঁক রয়ে গেছে। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের অসহায়ত্ব প্রকাশ পুরো প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ করে দেবে। কারণ, শুধু পরামর্শের জন্য এত আলোচনার দরকার ছিল না।
জামায়াতের পক্ষ থেকে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া এই নেতা প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া যায়। এটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, অধ্যাদেশ, গণভোট বা ফরমান জারির মাধ্যমে হতে পারে। এই সংস্কারের মাধ্যমেই আগামী নির্বাচন হওয়া দরকার, এটাই আমাদের দাবি।’
জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (আইনগত কাঠামো আদেশ), গণপরিষদ নির্বাচন অথবা গণভোট—যেকোনো পদ্ধতিতে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। কোন পদ্ধতিতে সেটি হবে, সেটা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই।’
এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপি বলছে, তারা এটাকে রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছে, সাংবিধানিক স্বীকৃতি নয়। অর্থাৎ, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তারা দিতে চাচ্ছে না। আইনি ভিত্তির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব কি না, সেটা পুনর্বিবেচনা করব।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শেষে জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে গতকাল শুক্রবার পর্যালোচনা বৈঠক করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনূছ আহমাদের সভাপতিত্বে বৈঠকে সংসদের নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) বিষয়টি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার এজেন্ডায় না রাখায় নিন্দা জানানো হয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিশনগুলোর মধ্যে ছয়টি কমিশনের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে (২০ মার্চ-১৯ মে) দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করে কমিশন। প্রথম পর্বে ঐকমত্য হয়নি, এমন ২০টির মতো মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গত ৩ জুন থেকে সব দলকে একসঙ্গে নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন, যা গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়। ২৩ দিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় মৌলিক সংস্কারের ১৯টি প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ৮টি বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে। বাকি ১২টিতে বিভিন্ন দলের ভিন্নমত বা মন্তব্যসহ সিদ্ধান্ত হয়েছে।