কার পরামর্শ আজীবন মেনে চলেছেন নায়করাজ রাজ্জাক
Published: 23rd, January 2025 GMT
বাংলা চলচ্চিত্রে যাঁদের হাত ধরে নবযুগের সূচনা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম নায়করাজ রাজ্জাক। জন্মস্থান কলকাতা হলেও ১৯৬৪ সালে তিনি পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন। শুরুর দিকে করতে হয়েছে অনেক কষ্ট। অভিনয়ে সুযোগের জন্য ঘুরতে হয়েছে অনেকের দ্বারে দ্বারে। অপেক্ষায় ছিলেন শুধু একটা সুযোগের। তাকে সেই সুযোগটি দেন দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও গল্পকার জহির রায়হান। এজন্যই বোধহয় রাজ্জাকের কাছে আজীবন স্মরণীয় ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন তিনি।
কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন আজ। বিশেষ এই দিনে সামনে এসেছে রাজ্জাকের পুরোনো একটি সাক্ষাৎকারে ভিডিও।
সেখানে রাজ্জাক বলেন, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। নাটক করেছি, টেলিভিশনে ছোট্ট অনুষ্ঠানও করাতাম। সেখান থেকে যে অর্থ পেতাম তাতেই সংসার কোনোরকম চলত। জীবনের সঙ্গে খুব যুদ্ধ করেছি। সেই যুদ্ধের সময় যে সেনাপতি আমাকে সৈনিক হিসেবে পথ দেখিয়েছিলেন তাঁকে যদি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ না করি তাহলে আমার জীবন ব্যর্থ। তিনি হলেন জহির রায়হান সাহেব। যিনি আমাকে চলচ্চিত্রে এনেছেন।’
প্রায় পাঁচ দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন রাজ্জাক। মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনি হয়েছেন নায়করাজ রাজ্জাক।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের স্মৃতিচারণ করে রাজ্জাক বলেন, “ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আমি যখন পাগলের মত ঘুরে বেড়াচ্ছি, বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তখন জহির রায়হান সাহেব আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। প্রথম দেখায় তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি আপনাকে নায়ক বানাবো’। তিনি আমাকে নায়ক বানানোর জন্য ‘হাজার বছর ধরে’ ছবিতে নেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নানা কারণে সিনেমাটি হয়নি। পরবর্তীতে তিনি ‘বেহুলা’ সিনেমায় আমাকে সুযোগ করে দেন।”
‘বেহুলা’ সিনেমার পর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে অভিনয় করে গেছেন। রাজ্জাক বলেন, ‘জহির রায়হান সাহেবের পরামর্শে আমি পরবর্তীতে এগিয়ে গেছি। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন, চলচ্চিত্রে লোভ করলে কিছুই পাওয়া যায় না, বরং ত্যাগ করতে হয়। তার এই বাণী আমি জীবনের প্রত্যেকটি পর্যায়ে মেনে চলেছি। তাই আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব জহির রায়হান সাহেব।’
চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে রাজ্জাকের বয়স যখন ৩৫ বছর তখনই এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয়। সেসময় তিনি বলেন, ‘৩৫ বছর হল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আমি নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি। আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া হল দেশের মানুষের স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা। কারণ, একজন শিল্পীকে এতোদিন ধরে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে রাখা পৃথিবীতে খুব বিরল। আমি একজন শিল্পী বা নায়ক যিনি দেশের মানুষের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে আছি। এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন য়কর জ র জ জ ক কর জ র জ জ ক চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।