নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাত্র কয়েক দিন হলো গদিতে বসেছেন। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে তাঁর সুর পরিবর্তন করেছেন। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ শেষ করার বাসনা তুলে ধরেছেন। এমনকি এ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারাভিযানও চালিয়েছেন। ঘোষণা অনুযায়ী, ক্ষমতা গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর এ সংঘাত বন্ধ করার কথা। কিন্তু সেটি ঘটেনি এবং ট্রাম্প তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে ইউক্রেনের কথাও উল্লেখ করেননি। বরং এর কিছুক্ষণ পরেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের লাভের চেয়ে ক্ষতির পাল্লা ভারী। 
ট্রাম্প বলেছেন, এ নিয়ে পুতিন রোমাঞ্চিত হতে পারেন না। তা ছাড়া তিনি এতটা ভালোও করছেন না। এর পর তিনি পুতিনের নেতৃত্বের সমালোচনা করেন। ‘রাশিয়া ইউক্রেনের চেয়ে বড়। ইউক্রেনকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের অনেক সৈন্য আছে, কিন্তু এটি দেশ চালানোর কোনো পথ হতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। পরদিন তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল সাইটের একটি পোস্টে ট্রাম্প আরও এগিয়ে যান– ‘যদি আমরা (যুদ্ধ শেষ করতে) চুক্তি না করি, তাহলে শিগগিরই রাশিয়াসহ অন্যান্য শরিক দেশের ওপর উচ্চ কর, শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।’ ইউক্রেনের যুদ্ধের খবর রাখেন এমন যে কেউ সচেতন– ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন ইতোমধ্যে এমন অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। কার্যত তাঁর প্রশাসন সব ধরনের রাশিয়ান পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল এবং প্রধান রাশিয়ান সংস্থা ও ব্যক্তিদের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

সুতরাং ট্রাম্প কি কেবল বাইডেনের নীতি অব্যাহত রাখারই ইঙ্গিত দিচ্ছেন? রাশিয়া অবশ্য সেটিই মনে করছে। ২৩ জানুয়ারি ট্রাম্পের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ান মিডিয়াকে বলেছেন, ‘আমরা এখানে নতুন বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না।’ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি অভ্যন্তরীণ নীতির মতো বদলে যায় না এবং বিদেশে আমেরিকান প্রতিশ্রুতি মূলত প্রেসিডেন্ট পরম্পরায় অব্যাহত থাকে। উদাহরণস্বরূপ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বারাক ওবামার মধ্যপ্রাচ্য নীতির ধারাবাহিকতা দেখুন। এ অঞ্চলে মার্কিন তৎপরতা সীমিত রেখে ট্রাম্প কিছুটা ব্যস্ততা দেখিয়েছিলেন। তবে ইউক্রেনের প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি অন্তত দুই দিক থেকে বাইডেনের চেয়ে ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে। প্রথমত, ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করতে ১০০ দিনের পরিমার্জিত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। আর রাশিয়া ও ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে আনতে তিনি বিশেষ দূত কিথ কেলগকে দায়িত্ব দিয়েছেন। 

ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য ইতোমধ্যে ক্রেমলিন যেসব শর্ত প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেগুলো ভেঙে দিতে চান বলে মনে হচ্ছে। এই শর্তের মধ্যে রয়েছে– ক্রিমিয়া ও চারটি পূর্ব প্রদেশের ওপর ইউক্রেনের দাবি প্রত্যাহার করে রাশিয়ার কাছে তুলে দেওয়া এবং ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্য না হওয়ার গ্যারান্টি। এ অবস্থায় ট্রাম্প চাপ প্রয়োগ ও রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন রাখার বাইডেন নীতি অব্যাহত রেখেছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাথমিক লক্ষ্য ইউক্রেনকে যুদ্ধে জিততে সাহায্য করা নয়, বরং ফলাফল নির্বিশেষে যুদ্ধ বন্ধ করা।

এর পর ট্রাম্প সুনির্দিষ্ট বিবরণ দেওয়ার আগে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য উভয় পক্ষকে চাপ দিতে আগ্রহী। সেই সময়ের মধ্যে ট্রাম্প দাবি করতে পারেন, তিনি ইউক্রেনে শান্তি দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নিম্নলিখিত আলোচনাগুলো এড়িয়ে গেছেন। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে এখনও যেসব দেশ ব্যবসা করে সেগুলোকে শাস্তি দিয়ে বাইডেনের চেয়ে আরও এগিয়ে যেতে চাইছেন। এর মধ্যে শুধু ইরান ও উত্তর কোরিয়া পড়বে না, যারা রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে। সম্ভবত চীন ও ভারতের মতো অন্য দেশগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যারা রাশিয়ার তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান ক্রেতা।

ইউক্রেন ট্রাম্পের শর্তে সম্মত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি চাপের মধ্যে থাকতে পারে। কারণ দেশটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আজ যদি রাশিয়া তার সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে পুতিনের জন্য রাজনৈতিক ক্ষতি হবে। দেশটিতে অসংখ্য সৈন্য মারা গেছে এবং সে দেশের আর্থিক রিজার্ভ প্রায় নিঃশেষ হয়ে পড়েছে। তবে এটি রাশিয়ার মিডিয়া ও ভিন্নমতের কঠোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। অন্যদিকে ইউক্রেন ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছে। এ সিদ্ধান্ত যে কোনো আলোচনায় ইউক্রেনকে সরাসরি রাশিয়ার বিরোধিতার মুখে ফেলে দেয়। আমরা শিগগিরই দেখতে পাব ট্রাম্পের মতো একজন জবরদস্তিমূলক মধ্যস্থতাকারী উভয়ের অবস্থান পরিবর্তনে কী করতে পারেন।

ডেভিড জে.

গ্যালব্রেথ: বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক 
নিরাপত্তার অধ্যাপক; এশিয়া টাইমস থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আমি আজ যা কিছু, সবই নারীদের জন্য: শাহরুখ

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। একষট্টি বছর বয়সেও ধারাবাহিকভাবে ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিয়ে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। মেধা, কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প তাকে ‘সুপারস্টার’ মর্যাদা এনে দিয়েছে। যশ-খ্যাতির পাশাপাশি অঢেল সম্পদের মালিক ‘কিং খান’। তবে শাহরুখ খান নিজের কৃতিত্ব নিজে নেন না। বরং এই সাফল্যের কৃতিত্ব তার জীবনের নারীদেরকে দিয়েছেন। বিশেষ করে তার সহঅভিনেত্রীদের।

এর আগে দ্য গার্ডিয়ান-কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শাহরুখ খান। এ আলাপচারিতায় তার জীবনের নারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পুরোনো সেই সাক্ষাৎকার নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।

আরো পড়ুন:

জাতীয় দল থেকে অবসরে স্বর্ণ জয়ী রোমান সানা

ক্রিমিয়ায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন

শাহরুখ খান বলেন, “খুব ছোটবেলায় আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি, তারপর মাকেও। কিন্তু আমার জীবনের নারীরা, অভিনেত্রীরা—আমাকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন। আমি আজ যা কিছু, সবই তাদের (নারী) কারণে। তারাই সব কাজ করেন, আর বেশিরভাগ সময় আমি সেই কাজের কৃতিত্ব নিয়ে নিই। আমি শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে কেউ শাহরুখ খান হয়ে ওঠেননি। কিন্তু আমি চাই তারা হোক। আমি অহংকার করছি না।”

বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত, জুহি চাওলা ও কাজলের উদাহরণ টেনে শাহরুখ খান বলেন, “নাচের দৃশ্যে মাধুরী দীক্ষিত আমার হাত ধরে রাখতেন, সে আমাকে লিড দিয়েছে, আমি নই। জুহি চাওলা আমাকে কমেডি টাইমিং শিখিয়েছে, কাজল আমাকে কাঁদতে শিখিয়েছে। তারা প্রাণপণে কাজ করেছে, আর সিনেমা শেষে বলা হয়—‘শাহরুখ খান: দ্য সুপারস্টার’। আমি জানি এটা। আমি এসব অস্বীকার করতে পারি না, কোনোদিন ভুলবও না। আমি আজ যেখানে আছি, সবই নারীদের জন্যই।”

“আমার ভদ্রতা, সৌজন্যতা, জেন্টলম্যান সুলভ আচরণ—সবই তাদের প্রতি আমার ধন্যবাদ জানানোর উপায়। তারা সিনেমায় অসাধারণ কাজ করে, প্রতিটি সিনেমাতেই।” বলেন শাহরুখ খান।

নারী পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে অন্য একটি সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছিলেন, “পুরুষেরা তাদের অনুভূতিকে ভাগ করে রাখে। কিন্তু নারীরা অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও ব্যাপকভাবে অনুভব করেন। তারা সব দিকেই ছড়িয়ে যান। আমার মনে হয়, আমি নারীদের সঙ্গে করতে উপভোগ করি। কারণ নারীদের সংবেদশীলতা। তারা সিনেমাকে আরো সুন্দর করে তোলেন।”

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন মোট পাঁচবার।  তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ