সিনেমাপ্রেমী কোটি দর্শকের কৌতূহলের অন্যতম বিষয় একাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার)। কোন ছবি হতে পারে অস্কার সেরা, কার হাতে উঠতে পারে এ পুরস্কার– তা নিয়ে চলে জল্পনা-কল্পনা। সেই জল্পনা-কল্পনার সূচনা মনোনয়ন তালিকা প্রকাশের পর। বলা যায়, মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান নিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের প্রহর গুনে যাওয়া শুরু হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে সম্ভাব্য বিজয়ীদের নিয়ে মতপ্রকাশ ও তর্ক-বিতর্ক। এবার তার ব্যতিক্রম হবে বলে অনুমান চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের। কেননা, এরই মধ্যে মনোনয়ন ঘোষণার পর্ব শেষ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের বেভারলি হিলসে একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের স্যামুয়েল গোল্ডউইন থিয়েটারে শুরু হয় মনোনয়ন ঘোষণার অনুষ্ঠান। এতে একাডেমি সভাপতি জ্যানেট ইয়েং ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিল ক্র্যামার শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
এরপর একে একে ২৩টি বিভাগে মনোনীতদের নাম জানান ইতালিয়ান-আইরিশ বংশোদ্ভূত আমেরিকান অভিনেত্রী র্যাচেল সেনেট ও চীনা বংশোদ্ভূত আমেরিকান অভিনেতা-কমেডিয়ান বোয়েন ইয়েং। অস্কারের দুটি ওয়েবসাইট ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাস ও হুলু’তে সরাসরি দেখানো হয় এ আয়োজন।
৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের আসরের বড় চমক উঠে এসেছে লাতিন আমেরিকান স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত ফরাসি সিনেমার ‘এমিলিয়া পেরেজ’-এর সর্বাধিক শাখায় মনোনয়ন পাওয়া। সেরা চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে সেরা অভিনেত্রী, সেরা পরিচালক, আন্তর্জাতিক কাহিনিচিত্র, আবহ সংগীত, গানসহ মোট ১৩টি মনোনয়ন পেয়ে ইতিহাস গড়েছে ‘এমিলিয়া পেরেজ’; যার কাহিনি গড়ে উঠেছে ম্যাক্সিকো সিটির স্বল্প পরিচিত অ্যাটর্নি রিটা মোরা কাস্ত্রোকে নিয়ে। যিনি একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বের স্ত্রীর হত্যা মামলার কাজ করে যাচ্ছিলেন।
রিটা মামলা জিতে গেলেও এ নিয়ে তাঁর মনে সংশয় কাজ করছিল। বারবার মনে হচ্ছিল, মহিলাটি আসলে আত্মহত্যা করেছেন। এমন সময় রিটা একটি লোভনীয় অফারসহ একটি বেনামি কল পান। এরপর মৃত্যু নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হতে থাকে। এমন কাহিনি নিয়ে নির্মিত ‘এমিলিয়া পেরেজ’ মুক্তির পর থেকেই ছিল দর্শক আলোচনায়। যে কারণে অস্কারে সর্বাধিক শাখায় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অবাক করেনি সাধারণ দর্শক ও চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের।
এদিকে ‘এমিলিয়া পেরেজ’-এর পরেই অস্কার দৌড়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০টি মনোনয়ন পেয়ে আলোচনা উঠে এসেছে ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘উইকেড’। এ ছাড়া সাহিত্যে নোবেলজয়ী কণ্ঠশিল্পী বব ডিলানের জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘অ্যা কমপ্লিট আননোন’ ও পোপ নির্বাচনের থ্রিলার ‘কনক্লেভ’ ৮টি করে মনোনয়ন পেয়েছে।
অন্যদিকে স্বর্ণপাম জয়ী ‘আনোরা’ ৬টি এবং ‘ডুন: পার্ট টু’ ও ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ সিনেমা দুটি ৫টি করে মনোনয়ন পেয়েছে। আয়োজনসূত্র জানিয়েছে, আগামী ২ মার্চ আনুষ্ঠানিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। উপস্থাপনা করবেন কনান ও’ব্রায়েন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।