Samakal:
2025-05-01@01:00:14 GMT

ফগলাইট কেনাকাটায় অনিয়ম

Published: 25th, January 2025 GMT

ফগলাইট কেনাকাটায় অনিয়ম

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ঘন কুয়াশার মধ্যেও ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ২০১৫ সালে প্রায় ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চলাইট লাগানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তির ফগ অ্যান্ড সার্চলাইট বসানোর কথা থাকলেও বসানো হয় শুধু সার্চলাইট। ফলে এসব লাইট ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো কাজেই আসেনি।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ রাজবাড়ী-মানিকগঞ্জের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া। শীতের মৌসুম শুরু থেকে ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় প্রতিদিন এ নৌরুটে ফেরি চলাচল ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এতে যানবাহন পারাপারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ফগলাইট স্থাপন করা রো রো ফেরি ভাষাশহীদ বরকতের মাস্টার মুনসুর আহম্মেদ বলেন, এই লাইটের আলোতে ভারী কুয়াশা তো নয়ই, মাঝারি কুয়াশায়ও কিছু দেখা যায় না। এ ছাড়া স্থাপনের কয়েক দিন পরই ফেরির লাইট নষ্ট হয়ে যায়।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান রো রো ফেরির মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে উদ্দেশ্যে ফগলাইট স্থাপন করা হয়েছিল, তার কিছুই হয়নি। কুয়াশায় ফগলাইটে কিছুই দেখা যায় না। হালকা কুয়াশায় আগের লাইটে মার্কিং পয়েন্ট যতটুকু দেখা যায়, ফগলাইটে তাও দেখা যায় না।
২০১৫ সালের জুনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় টেন্ডারের মাধ্যমে ১০টি ফেরিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফগলাইট স্থাপন করে। সাড়ে ৭ হাজার কিলোওয়াটের প্রতিটি ফগলাইট কিনতে খরচ পড়ে ৫০ লাখ টাকা। আনুষঙ্গিক খরচসহ মোট খরচ হয় ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। তখন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, নেভিগেশনাল এইড (নৌ পরিচালন সহায়ক উপকরণ) সংযোজনের মাধ্যমে এ বাতি দেশের ফেরিতে প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু আগের সার্চলাইটে কুয়াশার মধ্যে নৌ চ্যানেলের মার্কার (বিকনবাতি) যতটুকু দেখা যেত, নতুন স্থাপন করা ফগলাইটে তাও দেখা যায় না। কোনো কাজে না আসায় এগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারের মাধ্যমে কেনা ফগলাইটগুলো আমেরিকার তৈরি এবং সে দেশ থেকে আমদানি দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কিছু যন্ত্রপাতিতে ‘মেইড ইন কোরিয়া’ লেখা রয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র দুটি ফেরিতে দুটি ফগলাইট লাগানোর সিদ্ধান্ত থাকলেও বিশেষ মহলের চাপে নিয়ম ভেঙে ১০টি ফগলাইট কেনা হয়। ২০১৫ সালের ৫ জুন ফগলাইটগুলো ফেরিতে সংযুক্ত করা হয়। ফগলাইট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জনি করপোরেশন।
বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের (ঘন কুয়াশা) মধ্যে ফেরি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সদস্য ও বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে একটি প্রকল্প কমিটি করা হয়। প্রকল্প কমিটির সভায় প্রকল্পের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিল, পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ধাপে দুটি ফেরিতে ফগলাইট স্থাপন করা হবে। সাফল্য পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, প্রকল্পের পরিচালক সাবেক জিএম (মেরিন) শওকত সরদারসহ প্রকল্পের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) করতে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। প্রকল্পের সদস্যরা সেখানে বসেই প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন কাজটি সম্পন্ন করেন।
সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফগলাইট ফেরিতে স্থাপনের সময় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে প্রকল্পের রিসিভিং কমিটির সদস্যরা লাইটগুলো গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। শিডিউলের সঙ্গে ফগলাইটের মালপত্রের মিল না থাকায় কমিটি তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে। এক পর্যায়ে কমিটির কয়েকজনকে বদলিসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে লাইটগুলো গ্রহণে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, ঘন কুয়াশার মধ্যে নির্বিঘ্নে ফেরি চলাচলের জন্য ১০টি ফগ অ্যান্ড সার্চলাইট কেনার আগে তা পরীক্ষা করা হয়েছিল গ্রীষ্মকালে দিনের বেলায়। ২০১৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির আকাশে যখন ঝলমলে রোদ, সেই সময় ওই লাইট জ্বালিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন বিআইডব্লিউটিসির চার কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, বিআইডব্লিউটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী ড.

জ্ঞানরঞ্জন শীল, জিএম (মেরিন) ক্যাপ্টেন শওকত আলী সরদার (ডিরেক্টর অপারেশন) এবং উপসচিব পঙ্কজ কুমার পাল নামের ওই কর্মকর্তারা ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে এ ফগলাইট পরীক্ষার জন্য গেলেও তারা মূলত প্রমোদ ভ্রমণ করেছেন সেখানে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা লাইট পরীক্ষার জন্য কাজ করেছেন তারা।
ফেরিতে ফগলাইট স্থাপনের কয়েক মাস না যেতেই দেখা যায়, কুয়াশা ভেদ করে ফেরি চলাচল করতে পারছে না। কারণ, ফগ অ্যান্ড সার্চলাইটের পরিবর্তে শুধু সার্চলাইট যুক্ত করা হয় ফেরিতে। 
এ নিয়ে ২০১৭ সালে তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফগ অ্যান্ড সার্চলাইট স্থাপনের স্থলে নিম্নমানের সার্চলাইট সরবরাহ করে ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিআইডব্লিউটিসির তিন কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলার আসামিরা হলেন বিআইডব্লিউটিসির সাবেক জিএম ক্যাপ্টেন শওকত সরদার, সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (কারিগরি) ড. জ্ঞানরঞ্জন শীল, মহাব্যবস্থাপক নুরুল হুদা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব পঙ্কজ কুমার পাল, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. রহমতউল্লাহ, মহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল) ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন ও মেসার্স জনি করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী অবসরপ্রাপ্ত লে. কমান্ডার ওমর আলী।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও পিএসআই কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে ফগ অ্যান্ড সার্চলাইটের পরিবর্তে শুধু সার্চলাইটসহ সংশ্লিষ্ট মালপত্র কেনার মাধ্যমে ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি করে এবং বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা লোপাট করেছে বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।
২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেরিগুলোতে বাস্তবে ফগ অ্যান্ড সার্চলাইটের কোনো অস্তিত্বই নেই। প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সংযোজিত লাইটগুলোর গায়ে ও কন্ট্রোল সুইচে ‘সার্চলাইট’ লেখা। এসব ফগলাইট নয়। মূলত এ সার্চলাইটগুলো ৭ হাজার ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। যদিও বিআইডব্লিউটিসির ক্রয়-সংক্রান্ত নথিতে সার্চ অ্যান্ড ফগলাইট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফগলাইট কেনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ও প্রকৌশলী ড. জ্ঞানরঞ্জন শীল, জিএম (মেরিন) ক্যাপ্টেন শওকত আলী সরদারসহ সংশ্লিষ্টরা জড়িত ছিলেন। ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। নানা অজুহাতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বিআইডব্লিউটিসি।
সূত্র মতে, ২০১৪ সালে ৭ হাজার ওয়াটের উচ্চক্ষমতার (১০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত দেখার) ছয়টি ফগ অ্যান্ড সার্চলাইট পরীক্ষামূলকভাবে কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রতিটির দাম ধরা হয়েছিল ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪০০ টাকা। সেখানে স্থাপিত সাধারণ সার্চলাইটের দাম ১ থেকে ২ লাখ টাকা।
স্থানীয় বিআইডব্লিউটিসি সূত্র বলছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রেক্ষাপট অনেকটাই পাল্টে গেছে। বর্তমানে নৌরুটে আর সেই আগের মতো যানবাহনের দীর্ঘ সারি নেই বললেই চলে। বাস্তবতা হলো, ফেরি বন্ধ থাকলেও ভোগান্তি অনেক কমে গেছে। কারণ নৌরুটে চলাচলকারী ফেরিগুলো এখন যানবাহনের অপেক্ষা করে।
বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, কুয়াশার সময় ফেরি বন্ধ থাকলেও সংস্থার আয়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। কারণ যাতায়াতকারী যানবাহনগুলো শীত মৌসুমে কুয়াশার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চলাচল করে থাকে। যেহেতু পর্যাপ্ত ফেরি আছে, তাই নৌরুট স্বাভাবিক থাকাকালে প্রত্যাশিত যানবাহনগুলো পারাপার হয়ে থাকে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র ২০১৫ স ল ঘন ক য় শ র রহম ন থ কল ও পর ক ষ কম ট র সদস য সরদ র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

একটি টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তদের দুটি উচ্চতর গ্রেড পেতে আইনি বাধা কাটল

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীদের ক্ষেত্রে একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী দুই বা ততোধিক উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) পেয়ে থাকলে, তিনি উচ্চতর গ্রেড পাবেন না উল্লেখ করে জাতীয় বেতন স্কেল স্পষ্টীকরণ-সংক্রান্ত পরিপত্র পুরোটাই অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন।

হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক চারটি আপিল ও আটটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) নিষ্পত্তি করে আজ বুধবার রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে থাকা আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় সংশোধন করে এ রায় দেন।

রায়ের পর রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, স্পষ্টীকরণ–সংক্রান্ত পরিপত্রের প্যারা-গ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ২০১৫ সালের জাতীয় পে–স্কেলের উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতাসংক্রান্ত প্যারা-৭ যেমন আছে, তেমনই থাকবে। স্পষ্টীকরণ পরিপত্রের প্যারা-গ-এর কারণে দুটি উচ্চতর গ্রেড পাওয়ায় যে প্রতিবন্ধকতা, তা আর থাকল না। এটি না থাকার কারণে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ যাঁরা ২০১৫ সালের আগে একটা টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন, তাঁদের দুটি উচ্চতর গ্রেড পেতে বাধা আইনি বাধা থাকছে না।

পে-স্কেলের ৭ অনুচ্ছেদে আছে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে’

এর আগে সব পর্যায়ের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতনকাঠামো (জাতীয় পে–স্কেল)–সংক্রান্ত আদেশ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। এটি জাতীয় পে–স্কেল ২০১৫ নামে পরিচিত।

পে–স্কেলের ৭ অনুচ্ছেদে উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতা সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। ৭ (১) উপ–অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো স্থায়ী কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়া একই পদে ১০ বছর পূর্তিতে এবং চাকরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন।

৭ (২) উপ–অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো কর্মচারী তাঁর চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্তির পর পরবর্তী ৬ষ্ঠ বছর পদোন্নতি প্রাপ্ত না হলে ৭ম বছরে চাকরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন।

৭ (৩) উপ–অনুচ্ছেদের ভাষ্য, (১) ও (২) উপ–অনুচ্ছেদে উল্লেখিত আর্থিক সুবিধা বেতন স্কেলের চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে এবং চতুর্থ গ্রেড বা তার ওপরের গ্রেডের কোনো কর্মচারী এই সুবিধা গ্রহণ করে এই আদেশের অধীন তৃতীয় গ্রেড বা তার ওপরের গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন না।

আর ৭ (৪) উপ–অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো কর্মচারী দুই বা ততোধিক সিলেকশন গ্রেড স্কেল বা উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) বা অন্য কোনো স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছার এক বছর পর পরবর্তী উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি এই অনুচ্ছেদের অধীন উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন না।

পরিপত্রের প্যারা-গ অবৈধ

জাতীয় বেতনকাঠামো প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর ‘জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ স্পষ্টীকরণ’ বিষয়ে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর (গ) অনুচ্ছেদে উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতা বিষয়ে বলা রয়েছে।

(গ) (১) উপ–অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী দুই বা ততোধিক উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) পেয়ে থাকলে তিনি এই অনুচ্ছেদের অধীন উচ্চতর গ্রেড পাবেন না।

(গ) (২)–এর ভাষ্য, একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী একটিমাত্র উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) পেয়ে থাকলে উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ছয় বছর পূর্তির পর সপ্তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন।

(গ) (৩) উপ–অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী কোনো প্রকার উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) না পেয়ে থাকলে সন্তোষজনক চাকরির শর্তে তিনি ১০ বছর চাকরি পূর্তিতে ১১তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড এবং পরবর্তী ৬ষ্ঠ বছরে পদোন্নতি না পেলে ৭ম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন।

আর সরকারি কর্মচারীদের প্রদত্ত এসব আর্থিক সুবিধা কোনোক্রমেই ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরের আগে দেওয়া হবে না বলে পরিপত্রের (গ) (৪) উল্লেখ করা হয়।

আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালের পে–স্কেলের ৭ (৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে চতুর্থ গ্রেড বা তার ওপরের কর্মচারী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন না। একই সঙ্গে ২০১৫ পে–স্কেলে আগে যেসব কর্মচারী দুই বা ততোধিক টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন, তাঁরাও উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন না মূল পে–স্কেলে বলা আছে। অথচ ২০১৫ সালের আগে যাঁরা একটি মাত্র টাইম স্কেল অথবা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন, তাঁরা একটিমাত্র উচ্চতর গ্রেড পাবেন বলে স্পষ্টীকরণ–সংক্রান্ত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ২০১৫ সালের জাতীয় পে–স্কেলের ৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পরিপত্র দিয়ে মূল জাতীয় বেতনকাঠামো সংশোধন এখতিয়ারবহির্ভূত। যে কারণে রিটগুলো করা হয়।

মামলার পূর্বাপর

‘জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ স্পষ্টীকরণ’ বিষয়ে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছর রিট করেন কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবী। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে স্পষ্টীকরণ পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। ২০২০ সালে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত আপিল করে।

এ ছাড়া ওই পরিপত্র নিয়ে বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীরা পৃথক রিট করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষিত হয়।

হাইকোর্টের পৃথক রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল করে। ২০২০ সালে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের সঙ্গে অপর আপিল ও লিভ টু আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষের এসব আপিল ও লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আজ রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। রিট আবেদনকারীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন ও আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল শুনানি করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একটি টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তদের দুটি উচ্চতর গ্রেড পেতে আইনি বাধা কাটল