বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বকেয়া বিল ফের বাড়ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্যাস সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা পাবে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর বকেয়া প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। কোম্পানিগুলো দ্রুত পাওনা পরিশোধে সরকারকে তাগাদা দিচ্ছে। সময়মতো পাওনা অর্থ না পেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে বলে সতর্ক করে তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়েছে। তারা বলছে, চলতি মাসের মধ্যে বকেয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ পরিশোধ না করলে এলএনজি ও ফার্নেস অয়েল আমদানি ব্যাহত হবে। এতে রমজান ও গ্রীষ্মে গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না।

অর্থ সংকটে কয়লা, ফার্নেস অয়েল ও গ্যাস আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গত বছর গরম মৌসুমে বিভিন্ন সময় পায়রা, রামপাল, এস আলমসহ অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ ছিল। এ কারণে লোডশেডিং বেড়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে সরকার তালিকা করে লোডশেডিং দিয়েছিল দেশজুড়ে।

বিদ্যুৎ কেনা বাবদ ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা জমেছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান রেজাউল করিম। প্রায় ছয় মাসের বিল বকেয়া বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, দেশীয় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিপ্পার প্রতিনিধিরা ৮ জানুয়ারি পাওনার বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজের সঙ্গে দেখা করেছেন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দ্রুত বকেয়া পরিশোধের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে একজন সদস্য সমকালকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, তারা সরকারকে জানিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা দিতে। তাহলে তেল আমদানির জন্য এলসি খোলা সম্ভব হবে। তা না হলে রমজান ও গরমে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ফার্নেস আমদানি ব্যাহত হলে গরমে তেলচালিত কেন্দ্রে আড়াই হাজার মেগাওয়াট  বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্নিত হবে।

ভারতের আদানি গ্রুপের বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। কোম্পানিটি গত জানুয়ারিতে এ নিয়ে পিডিবির সঙ্গে বৈঠক করে। রোববার পিডিবিকে পাঠানো এক চিঠিতে আগামী জুনের মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া বিল শোধ করার সময় বেঁধে দিয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে বকেয়া দিলে বিলম্ব ফি মওকুফ করার প্রস্তাব করেছে আদানি। পাওনা নিয়ে গত আগস্টের পর থেকে আদানির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের টানাপোড়েন চলছে। পাওনা আদায়ে নভেম্বর থেকে একটি ইউনিটের উৎপাদন আদানি বন্ধ রাখে। 

চীন ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। সময়মতো অর্থ না পেলে কয়লা আমদানি ব্যাহত হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রটির পরিচালনাকারী বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানির (বিসিপিসিএল) একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সংকটে পায়রা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র। এর উৎপাদন ব্যাহত হলে গরমে প্রচণ্ড লোডশেডিং হবে। এ ছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রায় চার হাজার কোটি টাকা; রামপাল, এস আলম, মাতারবাড়ীসহ বিভিন্ন কেন্দ্রের বকেয়া প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, তারা পাওনা পরিশোধোর বিষয়ে কাজ করছেন। বকেয়া অর্থ দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, কিছু হলেও অর্থ দিতে হবে যাতে আগামী রমজান ও গরমের সময় কেন্দ্রগুলো জ্বালানি সংকটে না ভোগে।

গ্যাসের বকেয়া দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ
বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন গ্যাস বিক্রি বাবদ পেট্রোবাংলার কাছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পাবে। এ অর্থ পরিশোধে গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি বিভাগে তারা চিঠি দিয়েছে। শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার চিঠিতে বকেয়ার অন্তত ৯০০ কোটি টাকা দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, শেভরনের পাওনার মধ্যে ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা গ্যাসের মূল্য। বাকি টাকা কর ও সুদ। শেভরন জানিয়েছে, সময়মতো অর্থ ছাড় না হওয়ায় তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনতে পারছে না। এতে গ্যাস উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানাসহ জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার ক্ষেত্র পরিচালনা করে। এর মধ্যে বিবিয়ানা থেকেই দৈনিক সরবরাহ করা দেশীয় গ্যাসের (১৯৩ কোটি ঘনফুট) প্রায় অর্ধেক (৯৭ কোটি ঘনফুট) উত্তোলন করা হয়।
 
এলএনজিতে বকেয়া
২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি করে। এর মধ্যে কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আনা হয়। এ ছাড়া চুক্তিবদ্ধ ২৩ কোম্পানির মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে প্রতি মাসে চাহিদা অনুসারে এলএনজি কেনে সরকার। এর মধ্যে কাতার রাস গ্যাসের পাওনা ১ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ওমানের ওকিউ ট্রেডিং পাবে ৬০০ কোটি টাকা। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর বকেয়া জমেছে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
বকেয়ার বিষয়ে জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আগামী সপ্তাহে কোম্পানিগুলোর বকেয়া পরিশোধের চেষ্টা চলছে। অর্থ বিভাগের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সবার আগে এলএনজির বকেয়া শোধ করা দরকার। না হলে গ্যাস আমদানি ব্যাহত হবে।

রাস গ্যাস বছরে কমপক্ষে ৪০ কর্গো ও ওকিউ ১৬ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আনা হয় বছরে ২০ থেকে ২৫ কার্গো।

গ্রীষ্মে জ্বালানির সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা
আগামী মার্চ মাসে রমজান। এ সময় গরমও শুরু হবে। ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয় সেচ মৌসুম। ফলে মার্চে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। গত বছরের গ্রীষ্ম, রমজান ও সেচ মৌসুমে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। এবার চাহিদা হতে পারে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট। এ সময় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল ও ১৫-১৬ হাজার টন ডিজেল। দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪০ হাজার টন। বিদ্যুতের জন্য গ্যাস লাগবে দিনে কমপক্ষে ১৩০ কোটি ঘনফুট। গতবার বিদ্যুৎ খাতে গড়ে ১১০-১১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়েছিল পেট্রোবাংলা। বিপুল বকেয়ার কারণে গরমে বিদ্যুতের জন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির সরবরাহ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.

বদরূল ইমাম বলেন, বকেয়ার কারণে গত বছর বিপাকে পড়েছিল জ্বালানি খাত। কয়লা, এলএনজি, তেলসহ দেশের জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর। সময়মতো অর্থ ছাড় না হলে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি মিলবে না। এতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সংকট হবে। কারণ, এলসি খোলা সাপেক্ষে দেশে জ্বালানি পৌঁছতে ১৫ থেকে ৪৫ দিন লাগে। এলসি খুলতে যত দেরি হবে, জ্বালানি পৌঁছাতে তত বেশি সময় লাগবে। সময়মতো জ্বালানি আমদানি করা না গেলে সেচ ও গরমের ভরা মৌসুমে দেশে লোডশেডিং ব্যাপক হারে বেড়ে যেতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর শ ধ র রমজ ন ও সরবর হ র জন য ঘনফ ট সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’

ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান