নিউইয়র্কে ১ লাখ হাঁস মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত
Published: 27th, January 2025 GMT
নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে একটি বাণিজ্যিক পোল্ট্রি ফার্মে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় ১ লাখেও বেশি হাঁস মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউ ইয়র্কের স্বাস্থ্য বিভাগ। সাফোক কাউন্টি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা পরীক্ষার মাধ্যমে ১৭ জানুয়ারি উক্ত ফার্মে বার্ড ফ্লু শনাক্ত করেন।
নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে প্রায় ৬৬ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত ডাক ফার্মটির মালিক আকুয়েবোগের ক্রিসেন্ট ডাক। গত সপ্তাহে তারা প্রথম লক্ষ্য করেন যে উক্ত ফার্মের হাঁসের ঝাঁক অসুস্থ। সাফোক কাউন্টি স্বাস্থ্য বিভাগ পরীক্ষার মাধ্যমে ফার্মে বার্ড ফ্লু শনাক্ত করেন।
লং আইল্যান্ডের শেষ বাণিজ্যিক হাঁসের ফার্মটি বন্ধ করতে এবং ১ লাখেরও বেশি হাঁস নিধনের প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধ্য করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হতে এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময় লাগবে। সাফোক কাউন্টির স্বাস্থ্য কমিশনার ড.
স্বাস্থ্য বিভাগের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত কোনো ফার্ম কর্মীর অসুস্থতার খবর পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সংস্পর্শে আসা কর্মীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেছেন এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের পরীক্ষা ও প্রতিরোধমূলক ওষুধ প্রদান করছেন। ড. পিগট জানিয়েছেন যে ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে ট্যামিফ্লু এবং ট্যামিভির।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ফার্মের মালিককে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, যেমন সঠিকভাবে হাত ধোয়া এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারের বিষয়ে শিক্ষাও প্রদান করা হচ্ছে। পিগট আরও বলেন, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি খুবই কম কারণ এই ভাইরাস বর্তমানে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় না। সম্পূর্ণ তদন্ত চলছে কারণ সংক্রমিত পাখি থেকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সংস্পর্শে থাকা কর্মীদের মধ্যে এইচ৫এন১ বার্ড ফ্লু সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।
সাফোক কাউন্টি স্বাস্থ্য বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে এবিসি নিউজের মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি। এবিসি নিউজ ক্রিসেন্ট ডাক ফার্মের কাছে মন্তব্য চেয়ে একটি বার্তা রেখে গেছে। বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোল্ট্রি এবং ডেইরি গরুর মধ্যে প্রাদুর্ভাব ঘটাচ্ছে, সাম্প্রতিক মানব কেস পোল্ট্রি এবং ডেইরি কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে।
২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে দেশে মানব কেস সনাক্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০টি রাজ্যে ৬৭টি নিশ্চিত কেস রয়েছে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুযায়ী। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিউ ইয়র্কে কোনো মানব কেস রিপোর্ট করা হয়নি।
মানব কেসগুলোর বেশিরভাগই মৃদু হয়েছে এবং রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত কেবল লুইজিয়ানায় ৬৫ বছরের বেশি বয়সী, অন্যান্য চিকিৎসাগত সমস্যা থাকা একজন রোগীর মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। সিডিসি এবং অন্যান্য জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে বর্তমানে মানব থেকে মানব সংক্রমণের কোনো প্রমাণ নেই এবং সাধারণ জনগণের জন্য ঝুঁকি কম।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন উইয র ক
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।