৭ দফা দাবিতে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন
Published: 29th, January 2025 GMT
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন কলেজটির একদল শিক্ষার্থী। বুধবার বিকেল ৫টার পর থেকে কলেজটির মূল ফটকে সামনে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ ব্যানারে তারা এ অনশন শুরু করেন। এ সময় তারা ৭ দফা দাবি জানান।
অনশনে অংশ নেওয়া কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী এফ রায়হান বলেন, আমি সরকারি তিতুমীর কলেজের একজন শিক্ষার্থী। তিতুমীর ঐক্যের ডাকে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে নিজ দায়িত্বে আমি আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছি। তিতুমীর কলেজের ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিত করা ও ঢাকা উত্তরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই আন্দোলন আজ সময়ের দাবি। আমাদের এই সংগ্রাম শুধু তিতুমীরের নয়, বরং সমগ্র জাতির উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের জন্য।
তিনি আরও বলেন, এই অনশন কেবল আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি আমাদের সবার অধিকারের জন্য লড়াই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনারা যারা ন্যায়বিচার ও শিক্ষার সমতার পক্ষে, তারা এই আন্দোলনে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। আসুন, একসাথে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলি।
বেল্লাল হাসান নামের বাংলা বিভাগ আরেক শিক্ষার্থী বলেন, যেদিন সিদ্দিকুর রহমান ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয় সেদিন নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এদেশে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষার দ্বার তৈরি করে, শিক্ষা সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলবো। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে দেশে শিক্ষার জন্য আর কোনো সিদ্দিক চোখ হারাবে না। শিক্ষা হবে সকলের জন্য উন্মুক্ত। শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার হলেও তা থেকে এদেশের মানুষ বঞ্চিত। দেশের সেরা প্রতিষ্ঠান থেকে তথাকথিত মেধাবী তৈরি হয় না, তৈরি হয় তোতা পাখি।
তিনি আরও বলেন, দেশের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানে তখনই নেওয়া সম্ভব যখন প্রচলিত সিন্ডিকেট ভেঙে শিক্ষা করা হবে সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং তা শুধু মাত্র তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেই সম্ভব। আমি আশা করি আমার জীবনের মধ্য দিয়ে হলেও দেশের শিক্ষা সংস্কার হোক তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে।যার মাধ্যমে দেশে আর কোনো মায়ের বুক যাতে খালি না হয়, সিদ্দিক ভাইয়ের মতো কারো চোখ না হারাতে হয়।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম তিতুমীর ঐক্যের সাত দফা দাবিগুলো হলো- তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ। তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা। শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন ও ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুটি বিষয় আইন ও সাংবাদিকতা বিভাগ সংযোজন।
এছাড়াও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ।
উল্লেখ্য, সরকারি তিতুমীর কলেজকে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বিগত ২৮ বছর ধরে আন্দোলন করছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের সরকারের পটপরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীরা আবারও নতুন করে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করেন তারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ত ম র কল জ আমরণ অনশন ত ত ম র কল জ আমরণ অনশন র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশিদের বন্দর দেওয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে শুরু হওয়া অনশন চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
সকালে শতাধিক শ্রমিক প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হন। একে একে বক্তব্য দেন শ্রমিক সংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মী। তাঁরা দাবি করেন, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব সক্ষমতায় সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে বিদেশি অপারেটরের প্রয়োজন নেই।
স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান খান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেই ভালোভাবে চলছে। বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করে এই প্রতিষ্ঠান। এমন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। ফলে সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।
কর্মসূচিতে বক্তারা অভিযোগ করেন, লাভজনক প্রতিষ্ঠান হয়েও নিউমুরিং টার্মিনাল ও লালদিয়া চর বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁরা বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ কোনোভাবেই এটি সফল হতে দেবে না। বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া মানে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা।
অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার কাউকে না জানিয়ে বিদেশিদের হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার চুক্তি করেছিল। বর্তমান সরকারও সেটি পর্যালোচনা না করে বাস্তবায়ন করছে। এটি দেশের মানুষের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে শুরু হওয়া সেই প্রক্রিয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও এগিয়ে নিচ্ছে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর ইজারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে স্কপ। সমাবেশ শেষে বন্দর এলাকার দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ওই কর্মসূচি থেকেই আজকের গণ–অনশনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ২৭ অক্টোবর ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা।