জানুয়ারির মাঝামাঝিকে ক্যাম্পে যোগ দেন জাতীয় দলের মেয়েরা। সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমানের অধীনে অনুশীলনে মাসুরা পারভীন-তহুরা খাতুনরা ছিলেন প্রাণবন্ত। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি দুটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলার কথা বাংলাদেশ নারী দলের। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে ঢাকায় আসেন ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর মঙ্গলবার তাঁর অধীনে অনুশীলন করার কথা ছিল মেয়েদের। কিন্তু বাটলারের অধীনে গত পরশু অনুশীলন করেননি সাবিনা খাতুন-ঋতুপর্ণা চাকমারা। বেতন ইস্যুর সমাধান না হওয়া, চুক্তি না করা, নেপাল সাফে দ্বন্দ্বের পরও সমাধান না করে বাটলারকে নিয়োগ দেওয়া, বিদেশি লিগে খেলার প্রস্তাব পেলেও খেলতে অনুমতি না দেওয়া, সাফ জেতায় ঘোষিত ১ কোটি টাকা অর্থ পুরস্কার না পাওয়াসহ আরও নানা কারণে ক্ষুব্ধ নারী ফুটবলাররা।
অতীতে কয়েকবারই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে বসার চেষ্টা করেও তাঁর দেখা পাননি মেয়েরা। তাই নিজেদের সমস্যাগুলো সমাধান না করা পর্যন্ত রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন টানা দু’বার সাফ জেতা মেয়েরা। বুধবারও বাটলারের ডাকে মিটিংয়ে সাড়া দেননি তারা। জানা গেছে, নারী ফুটবলাররা অনুশীলন বয়কট করায় কোচিং স্টাফের অনেকেই ছুটিতে চলে গেছেন।
পিটার বাটলারের সঙ্গে মেয়েদের ঝামেলার শুরু নেপাল সাফ থেকে। সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব নিয়ে যে বিরোধ দেখা দেয়, কোচ-ফুটবলারদের মধ্যে সেটা না মিটিয়েই বাটলারকে ফের দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়াটা ভালোভাবে নেননি জাতীয় নারী দলের খেলোয়াড়রা। কোচ ইস্যুর সঙ্গে মেয়েদের বড় ক্ষোভ পারিশ্রমিক জটিলতার সমাধান না করা। গত অক্টোবর পর্যন্ত বেতন পাওয়া মেয়েদের সঙ্গে নতুন করে কোনো চুক্তি করেনি ফেডারেশন। এই তিন মাস অলস সময় পার করা সানজিদা আক্তার-রুপনা চাকমাদের অ্যাকাউন্টে কোনো অর্থ ঢোকেনি।
কাজী সালাউদ্দিনের সময় অবহেলার শিকার হওয়া মেয়েদের সমস্যা নিরসনে খুব একটা উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে। দেশকে সাফল্য এনে দেওয়ার পরও প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে বাফুফে কর্তাদের অনীহায় বেজায় চটেছেন সিনিয়ররা। আর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে ফেব্রুয়ারি ফিফা উইন্ডোতে ম্যাচ খেলাতে পারছে না দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং নেপাল ঠিকই প্রীতি ম্যাচ খেলছে।
অনুশীলন বয়কটের কারণ জানতে বেশ কয়েকজন নারী ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও এই মুহূর্তে কিছু বলতে অনিচ্ছুক বলে জানান। মেয়েদের বিদ্রোহের বিষয়টি এড়িয়ে মাঠ সংকটের কথা প্রথমে বলেছিলেন বাফুফের একটি সূত্র। নাম গোপন রাখার শর্তে পরে তিনি স্বীকার করেন, মঙ্গলবার অনুশীলন করেননি মেয়েরা। ‘বয়কটের ব্যাপারটা আমার নিশ্চিত না। আমি যতটুকু জানি, কোনো একটি বিষয় নিয়ে তারা সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে। কিন্তু এখন তো সভাপতি নেই। শুনেছি, নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আজকে (বুধবার) বসার কথা।’
মেয়েদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা, তা জানতে ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
২০২২ সালে নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর মেয়েদের নিয়ে স্বপ্নের ফানুস ওড়ায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। কিন্তু নিজেদের পকেট ভারী করে আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে এই মেয়েদের অলিম্পিক বাছাইয়ে খেলতে পাঠায়নি বাফুফে। বেতন না পাওয়াসহ বেশ কিছু কারণে ২০২৩ সালে কয়েকবার অনুশীলন বয়কট করেছিলেন সাবিনারা।
গত বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয়বারের মতো নারী সাফ জেতার পর কৃষ্ণা রানী সরকার-তহুরা খাতুনদের ছাদখোলা বাসে বীরোচিত সংবর্ধনা দেয় দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে নানা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান সংবর্ধনার সঙ্গে দিয়েছেন আর্থিক পুরস্কার। কিন্তু ঘোষণা দিয়েও বাফুফে কর্তারা আছেন শীতনিদ্রায়!
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’