বিনা নোটিশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ করে দিয়ে নওগাঁয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে সংশ্লিষ্ট খাতের মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

বুধবার সকাল ৮টা থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রেখেছেন সংগঠনটির মালিক ও শ্রমিকরা। 

শহরের জেলখানার মোড়ে অবস্থিত মেসার্স অতিথি ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা জ্বালানি তেল নিতে আসছেন। তবে পেট্রোল পাম্প বন্ধ থাকায় তেল না পাওয়ার কারণে অনেকটাই বিপাকে পড়েন পেট্রল নির্ভরশীল বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকরা পড়েছেন বিপাকে। তেল না পেয়ে ভোগান্তিতে অফিসগামী মানুষরাও।

এনজিওতে চাকরি করেন আব্দুর রউফ। বাসা থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে তেল শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আধা কিলোমিটার ঠেলে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় পেট্রল পাম্পে নিয়ে আসেন। পাম্প বন্ধ থাকায় আবার ঠেলে নিয়ে চলে যেতে হয়। পাম্প বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

তার মতো অনেকেই অফিসগামী মোটরসাইকেল আরোহী ও জ্বালানি নির্ভর বিভিন্ন যানবাহনগুলো পাম্পে এসে বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যানবাহন চালকদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান যানবাহন চালকরা।

পেট্রল পাম্পে তেল নিতে আসা হাবিবুর রহমান বলেন, সারা দিন কর্মের প্রয়োজনে মোটরসাইকেল নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। সকালে পেট্রল পাম্পে তেল নিতে আসলে বলে তেল ফুরিয়ে গেছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন করার কোনো মানে হয় না বলে জানান তিনি।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বগুড়া সড়ক জনপথ বিভাগ। এসময় সান্তাহারে অবস্থিত হামিম ফিলিং স্টেশন ও আনিকা ফিলিং স্টেশনের তেলের মিটার উচ্ছেদসহ ফিলিং স্টেশন দুটিতে ভাঙচুর করা হয়। পূর্ব ঘোষণা, নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিয়ে আকস্মিক উচ্ছেদ পরিচালনা করার প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ম প বন ধ বন ধ থ ক চ লকর

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ