যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক বিমানে ফিরলেন নথিপত্রহীন ভারতীয় অভিবাসীরা
Published: 5th, February 2025 GMT
নথিপত্রহীন ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে মার্কিন সামরিক বিমান আজ বুধবার দুপুরে পাঞ্জাবের অমৃতসর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নথিপত্রহীন অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণার পর সে দেশে বসবাসকারী নথিপত্রহীন ভারতীয়দের এটাই প্রথম প্রত্যাবর্তন। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে ১ হাজার ১০০ নথিপত্রহীন ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে বিমানটি রওনা দিয়েছিল। বুধবার বেলা ২টায় সি-১৭ সামরিক বিমান অমৃতসরে অবতরণ করে। অমৃতসর বিমানবন্দরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য পাঞ্জাব পুলিশকে আগে থেকেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে বিমানবন্দরে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল যথেষ্ট। যাত্রীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়। তাঁদের প্রত্যেককে নিজ নিজ রাজ্যে যাওয়ার ব্যবস্থাও রাজ্য প্রশাসনের পক্ষে করা হয়।
কতজন অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র এই বিমানে ফেরত পাঠায়, তা নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ভিন্ন তথ্য রয়েছে। পাঞ্জাবের সংবাদপত্র দ্য ট্রিবিউন ও এনডিটিভি সংখ্যাটি ২০৫ জানালেও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন হিসেবে এই সংখ্যা ১১৬। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অভিবাসীদের মধ্যে আছেন ৭৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, ২৫ জন নারী এবং ১২ জন কিশোর–কিশোরী। তাঁরা ছাড়া ওই সামরিক বিমানে ছিলেন ১১ জন বিমানকর্মী ও ৪৫ জন মার্কিন কর্তা। বিমানবন্দরে দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মীও উপস্থিত ছিলেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আরও জানায়, অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে গুজরাটের বাসিন্দার সংখ্যা ৩৩, পাঞ্জাবের ৩০। বাকিরা হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। ঠিক কতজন ফেরত এলেন, সে বিষয়ে বিকেল পর্যন্ত সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।
পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিচালক গৌরব যাদব গণমাধ্যমকে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বলবন্ত সিং মানের নির্দেশে বিমানবন্দরে ফেরত আসা ভারতীয়দের সব রকমের সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। ফেরত আসা ব্যক্তিদের কারও বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো অভিযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য পুলিশ যোগাযোগ রাখছে।
এক সরকারি সূত্রের বয়ান অনুযায়ী, এই অবৈধ অভিবাসীদের অধিকাংশ ধরা পড়েছিলেন মেক্সিকো সীমান্তে। তাঁরা বৈধভাবে ভারত ছাড়লেও অবৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তাই তাঁদের এ দেশে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা নেই।
অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে ভারত কখনো আপত্তির কথা জানায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বরং স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, নীতিগতভাবে ভারত অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে। কারণ, তাঁদের জন্য বৈধ অভিবাসীদের নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। যাঁদের অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের সবকিছু খতিয়ে দেখে ফেরত নিতে অসুবিধা নেই।
সামরিক বাহিনীর পরিবহন বিমানে কীভাবে ভারতীয়দের নিয়ে আসা হয়েছে, সে বিষয়ে অবশ্য কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে কোনো কোনো ছবিতে দেখা যাচ্ছে, যাত্রীদের হাতকড়া, কারও কারও পায়ে বেড়ি পরিয়ে বিমানে তোলা হয়েছে। ভারতীয়দেরও ওইভাবে আনা হয় বলে কোনো কোনো মহলের অভিযোগ।
ওই প্রচারকে কংগ্রেস অসম্মানজনক বলে মনে করে। দলের মুখপাত্র পবন খেরা আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ের উল্লেখ করে বলেন, ‘ছবিগুলো সত্যি হলে তা অসম্মানজনক। ভারতীয় হিসেবে তা আমাকে দুঃখ দিয়েছে।’
এই প্রসঙ্গে পবন খেরা পুরোনো এক ঘটনার উল্লেখ করেন। ২০১৩ সালে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে যুক্তরাষ্ট্রে হাতকড়া পরানো হয়েছিল। শরীর তল্লাশি করা হয়েছিল। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং কূটনীতিকের ওই হেনস্তার তীব্র নিন্দা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছিলেন। ইউপিএ সরকারও প্রতিবাদে সরব হয়েছিল।
পবন খেরা বলেন, সে সময় মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল ভারত সফর করছিল। মীরা কুমার, সুশীল কুমার সিন্ডে, রাহুল গান্ধী প্রতিবাদে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং হাতকড়া লাগানোর ঘটনাকে ‘নিন্দনীয়’ বলেছিলেন। মার্কিন দূতাবাসের জন্য দেওয়া বেশ কিছু সুবিধা ভারত তখন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ভারত সরকারের প্রতিবাদের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন।
কংগ্রেস নেতা ও সংসদ শশী থারুর এই প্রসঙ্গে ‘এক্স’ বার্তায় বলেন, এই হইচইয়ের মধ্যে অনেক তথ্য চাপা পড়ে যাচ্ছে। যেমন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা এই প্রথম নয়। বাইডেন প্রশাসনও গত বছর ১ হাজার ১০০ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে।
শশী ওই বার্তায় বলেছেন, ২০২২ সালের হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নথিবিহীন ভারতীয় অভিবাসীর মোট সংখ্যা ৭ লাখ ২৫ হাজার। মেক্সিকো ও এল সালভাদরের পরই ভারতের স্থান। ২০২০ সাল থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ভারতীয়কে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও সীমান্তরক্ষী কর্মকর্তারা আটক করেছে, যাঁরা কানাডা ও মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে সে দেশে প্রবেশ করতে চাইছিলেন। এঁরা সবাই ফেরত পাঠানোর তালিকায় রয়েছেন।
অমৃতসরে আজ অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারত সরকার এখনো নীরব। ট্রাম্পের আমলে এই প্রত্যর্পণ সেই সময় ঘটানো হলো, যখন আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য হয় ছ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস