নথিপত্রহীন ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে মার্কিন সামরিক বিমান আজ বুধবার দুপুরে পাঞ্জাবের অমৃতসর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নথিপত্রহীন অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণার পর সে দেশে বসবাসকারী নথিপত্রহীন ভারতীয়দের এটাই প্রথম প্রত্যাবর্তন। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে ১ হাজার ১০০ নথিপত্রহীন ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।

গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে বিমানটি রওনা দিয়েছিল। বুধবার বেলা ২টায় সি-১৭ সামরিক বিমান অমৃতসরে অবতরণ করে। অমৃতসর বিমানবন্দরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য পাঞ্জাব পুলিশকে আগে থেকেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে বিমানবন্দরে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল যথেষ্ট। যাত্রীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়। তাঁদের প্রত্যেককে নিজ নিজ রাজ্যে যাওয়ার ব্যবস্থাও রাজ্য প্রশাসনের পক্ষে করা হয়।

কতজন অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র এই বিমানে ফেরত পাঠায়, তা নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ভিন্ন তথ্য রয়েছে। পাঞ্জাবের সংবাদপত্র দ্য ট্রিবিউন ও এনডিটিভি সংখ্যাটি ২০৫ জানালেও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন হিসেবে এই সংখ্যা ১১৬। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অভিবাসীদের মধ্যে আছেন ৭৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, ২৫ জন নারী এবং ১২ জন কিশোর–কিশোরী। তাঁরা ছাড়া ওই সামরিক বিমানে ছিলেন ১১ জন বিমানকর্মী ও ৪৫ জন মার্কিন কর্তা। বিমানবন্দরে দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মীও উপস্থিত ছিলেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আরও জানায়, অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে গুজরাটের বাসিন্দার সংখ্যা ৩৩, পাঞ্জাবের ৩০। বাকিরা হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। ঠিক কতজন ফেরত এলেন, সে বিষয়ে বিকেল পর্যন্ত সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।

পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিচালক গৌরব যাদব গণমাধ্যমকে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বলবন্ত সিং মানের নির্দেশে বিমানবন্দরে ফেরত আসা ভারতীয়দের সব রকমের সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। ফেরত আসা ব্যক্তিদের কারও বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো অভিযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য পুলিশ যোগাযোগ রাখছে।

এক সরকারি সূত্রের বয়ান অনুযায়ী, এই অবৈধ অভিবাসীদের অধিকাংশ ধরা পড়েছিলেন মেক্সিকো সীমান্তে। তাঁরা বৈধভাবে ভারত ছাড়লেও অবৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তাই তাঁদের এ দেশে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা নেই।

অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে ভারত কখনো আপত্তির কথা জানায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বরং স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, নীতিগতভাবে ভারত অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে। কারণ, তাঁদের জন্য বৈধ অভিবাসীদের নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। যাঁদের অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের সবকিছু খতিয়ে দেখে ফেরত নিতে অসুবিধা নেই।

সামরিক বাহিনীর পরিবহন বিমানে কীভাবে ভারতীয়দের নিয়ে আসা হয়েছে, সে বিষয়ে অবশ্য কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে কোনো কোনো ছবিতে দেখা যাচ্ছে, যাত্রীদের হাতকড়া, কারও কারও পায়ে বেড়ি পরিয়ে বিমানে তোলা হয়েছে। ভারতীয়দেরও ওইভাবে আনা হয় বলে কোনো কোনো মহলের অভিযোগ।

ওই প্রচারকে কংগ্রেস অসম্মানজনক বলে মনে করে। দলের মুখপাত্র পবন খেরা আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ের উল্লেখ করে বলেন, ‘ছবিগুলো সত্যি হলে তা অসম্মানজনক। ভারতীয় হিসেবে তা আমাকে দুঃখ দিয়েছে।’

এই প্রসঙ্গে পবন খেরা পুরোনো এক ঘটনার উল্লেখ করেন। ২০১৩ সালে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে যুক্তরাষ্ট্রে হাতকড়া পরানো হয়েছিল। শরীর তল্লাশি করা হয়েছিল। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং কূটনীতিকের ওই হেনস্তার তীব্র নিন্দা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছিলেন। ইউপিএ সরকারও প্রতিবাদে সরব হয়েছিল।

পবন খেরা বলেন, সে সময় মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল ভারত সফর করছিল। মীরা কুমার, সুশীল কুমার সিন্ডে, রাহুল গান্ধী প্রতিবাদে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং হাতকড়া লাগানোর ঘটনাকে ‘নিন্দনীয়’ বলেছিলেন। মার্কিন দূতাবাসের জন্য দেওয়া বেশ কিছু সুবিধা ভারত তখন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ভারত সরকারের প্রতিবাদের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন।

কংগ্রেস নেতা ও সংসদ শশী থারুর এই প্রসঙ্গে ‘এক্স’ বার্তায় বলেন, এই হইচইয়ের মধ্যে অনেক তথ্য চাপা পড়ে যাচ্ছে। যেমন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা এই প্রথম নয়। বাইডেন প্রশাসনও গত বছর ১ হাজার ১০০ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে।

শশী ওই বার্তায় বলেছেন, ২০২২ সালের হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নথিবিহীন ভারতীয় অভিবাসীর মোট সংখ্যা ৭ লাখ ২৫ হাজার। মেক্সিকো ও এল সালভাদরের পরই ভারতের স্থান। ২০২০ সাল থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ভারতীয়কে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও সীমান্তরক্ষী কর্মকর্তারা আটক করেছে, যাঁরা কানাডা ও মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে সে দেশে প্রবেশ করতে চাইছিলেন। এঁরা সবাই ফেরত পাঠানোর তালিকায় রয়েছেন।

অমৃতসরে আজ অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারত সরকার এখনো নীরব। ট্রাম্পের আমলে এই প্রত্যর্পণ সেই সময় ঘটানো হলো, যখন আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য হয় ছ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ