ফের উত্তেজনা ছড়াল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বাংলাদেশি গরু পাচারকারীদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হিলি সীমান্তের কাছে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মল্লিকপুর বিওপি এলাকা। গুলি-পাল্টা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছে এক বিএসএফ জওয়ান ও এক বাংলাদেশি নাগরিক। আহতদের বর্তমানে চিকিৎসা চলছে পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গারামপুর সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। পুরো ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এটেছে স্থানীয় প্রশাসন।

বিএসএফের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় এখনো অফিসিয়াল বিবৃতি না এলেও বিএসএফের স্থানীয় বর্ডার আউটপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ভোররাতে  ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের মল্লিকপুর সীমান্তে। গুলিবিদ্ধ ওই বাংলাদেশি পাচারকারীর নাম মুহাম্মদ আলাউদ্দিন (৩২) তিনি বাংলাদেশের দিনাজপুরের বাসিন্দা। আহত বিএসএফ জাওয়ানের নাম ওরফেজ কুমার (২৭) তিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাট এলাকার বাসিন্দা। আহত ৯১ নম্বর ব্যাটালিয়ানের বিএসএফ ব্যাটেলিয়নের জওয়ান ওয়াফেজ বুধবার মল্লিকপুর বিওপিতে কর্তব্যরত ছিলেন।

বুধবার ভোররাতে প্রায় পাঁচজন সশস্ত্র বাংলাদেশি পাচারের উদ্দেশে ঢুকে পড়ে ভারতীয় সীমান্তে। এ সময় কর্তব্যরত ওই জওয়ান বাধা দিতে গেলে অতর্কিত হামলা চালায় ওই বিএসএফ জওয়ানের ওপর। এ সময় বিএসএফ জাওয়ানের রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে। বাধা দিলে ধরানো অস্ত্রের কোপ দিয়ে গুরুতর আহত করা হয় তাকে। এরপরেই আত্মরক্ষার্থে পাচারকারীদের উদ্দেশে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ওই বিএসএফ জওয়ান। ঘটনায় মুহাম্মদ আলাউদ্দিন নামে ওই বাংলাদেশি পাচারকারী গুলিবিদ্ধ হলে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বাকিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

এদিকে এমন খবর প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায় সীমান্তবর্তী এলাকায়। সীমান্তে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। অন্যদিকে আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই চলছে দুই আহতের চিকিৎসা। ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্তে নেমেছে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ।

সম্প্রতি গঙ্গারামপুরের সুখদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই মল্লিকপুরের উন্মুক্ত সীমান্ত এলাকায় শুরু হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ। ফলে এই এলাকায় বিএসএফ-বিজিবির পাল্টাপাল্টি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে কয়েক গুণ। তারপরেও পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য থামাতে রীতিমত ঘাম ছুটছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এসএফ ব এসএফ জ এল ক য

এছাড়াও পড়ুন:

পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু

পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ যুবক মারা গেছেন। শনিবার (১৪ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে আহতাবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

নিহতের নাম রাজু ইসলাম (৩৫)। তার বাড়ি হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঝুলিপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। রাজু সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু পারাপারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ঘাগড়া সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫১ এর বিপরীতে ভারতীয় এলাকার কিছু যায়গায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এলাকাটি ভারতীয় গরু পারাপারের গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে চোরাকারবারিরা। শনিবার মধ্যরাতে এই মেইন পিলারের ৩ নম্বর সাব পিলার সংলগ্ন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন রাজু। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্যাম্পের সদস্যরা তার দুই পায়ে গুলি করে। ঘটনাস্থলের পাশেই রাজুর বাড়ি হওয়ায় গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই রাজু বাড়ি ফেরেন। পরে আহতাবস্থায় পরিবারের সদস্যরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। রবিবার দুপুরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

আরো পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু

হবিগঞ্জে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

এদিকে রাজুর মৃত্যু বিএসএফের গুলিতে নয়, হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে বলে দাবি করেছেন নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে পুলিশ বলছে, প্রাথমিক সুরতহালে মরদেহের পায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘রাজুর হৃদরোগ থাকলেও তার মৃত্যু বিএসএফের গুলিতে হয়েছে। তার দুই পায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে।’’

হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, ‘‘খবর পেয়ে রাজুর বাড়িতে পাই। তার দুই পায়ে ক্ষত চিহ্ন দেখেছি। ধারণা করছি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক বছরে ঘাগড়া সীমান্তে এমন পাঁচ জনের মৃত্যু হলো।’’

নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা বলেন, ‘‘গত রাতে বর্ডারে কোনো গোলাগুলি হয়নি- এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সেখানে বিজিবির পেট্রোল টিম ছিল, আশপাশে বাড়িঘর ছিল। বিএসএফ গুলি করলে শব্দ শোনা যেত, তারা কেউ কোনো শব্দ শোনেনি। চোরাকারবারি দমনে বিএসএফ অনেক সময়েই ফায়ার করে, আমরা সব সময় এসবের প্রতিবাদ করি। যদিও তারা বিভিন্ন সময় বলে, আত্মরক্ষার্থে ফায়ার করে। এ ক্ষেত্রে ফায়ারের শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়। কিন্তু, গত রাতে কোনো শব্দ শোনা যায়নি। আমরা বিএসএফের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও জানিয়েছে কোনো ফায়ার হয়নি। এরপরও সৌজন্য সাক্ষাতে এ বিসয়ে আমরা তাদের আরো জিজ্ঞেস করব।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘রাজুর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, রাজু হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে জেনেছি, তার পায়ে নাকি গুলির চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু, এ বিষয়ে তারা আমাদের কিছুই জানায়নি।’’

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শইমী ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘নিহতের দুই পায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি চিকিৎসক বলতে পারবেন। এছাড়া, মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’’

এ বিষয়ে জানতে রাজুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঢাকা/নাঈম/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘাস খেতে খেতে সীমান্তের ওপারে ১০ গরু, ফেরত দিল বিএসএফ
  • সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যাওয়া ১৫ গরু ফেরত পাঠিয়েছে বিএসএফ
  • পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু
  • নরসিংদীতে তিন গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ১
  • চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে কেউ নিচ্ছেন চিকিৎসা, কেউ করাচ্ছেন পরীক্ষা
  • ১৭ দিন পর কাটলো অচলাবস্থা, চক্ষু হাসপাতালে সেবা চালু
  • ১৭ দিন পর কাটলো অচলাবস্থা, চক্ষু হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু
  • রাজধানীতে ছিনতাইকারীর ছুরিতে দু’জন আহত
  • কুলিয়ারচরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, ৩০ যাত্রী আহত
  • আহমেদাবাদে দুর্ঘটনাস্থলে নরেন্দ্র মোদী, আহতদের দেখতে গেলেন হাসপাতালে