শাহজাদপুরে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
Published: 8th, February 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করা নিয়ে উপজেলা বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার বেলা দুইটার দিকে শাহজাদপুর পৌরসভার মনিরামপুর সুপার মার্কেট এলাকায় কার্যালয়টির সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত নেতা–কর্মীদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আহত নেতা-কর্মীদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি গোলাম সারওয়ার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল কুদ্দুস, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম, শাহজাদপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনিছুর রহমান আছেন।
কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ দুপুরে গোলাম সারওয়ার নেতা-কর্মীদের নিয়ে উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে যান। এ সময় জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য এম এ মুহিত পক্ষের নেতা-কর্মীরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সারওয়ার দৌড় দিয়ে চলে যেতে চাইলে তিনি ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়।
হামলায় আহত আনিছুর রহমান বলেন, ‘হামলাকারীরা সবাই আমাদের পরিচিত। এঁদের মধ্যে মিজান, মাসুম, সোহেল ও প্রবীর আছেন। এঁদের নেতৃত্বেই এ হামলা হয়েছে। আমি দলের কাছে এ হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
আহত অবস্থায় গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে গেলে এম এ মুহিতের সমর্থকেরা আমাদের ওপর হামলা চালান। এতে আমাদের ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন। এ হামলায় হকিস্টিক ও কাঠের লাঠি ব্যবহার করা হয়েছে। যাঁরা বিএনপিকে ব্যবহার করে নানা সুযোগ-সুবিধা নিতে চান, তাঁরাই এ হামলা করেছেন।’
এ বিষয়ে কথা বলতে এম এ মুহিতের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁর পক্ষের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাথার রেখে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি গোলাম সারওয়ার হঠাৎ করে উপজেলায় এসে বিএনপির মধ্যে একটি অবস্থান নিতে চাইছেন। বিষয়টি স্থানীয় বিএনপির নেতা–কর্মীরা ভালোভাবে নিতে পারছেন না। এ কারণে এমন হামলা ঘটনা ঘটেছে।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ নিয়ে দলের মধ্যে এমন হামলা সত্যিই দুঃখজনক। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছলাম আলী প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় তেমন কেউ গুরুতর আহত হননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ম স রওয় র ব এনপ র দ কর ম দ র কম ট র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’