বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) এক শিক্ষার্থীকে বারবার বহিষ্কার ও শাস্তি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের স্বচ্ছতা ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রশ্ন উঠেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হল ফিস্টের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণামূলক গান বাজানোর ঘটনায় কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজমাঈন হাসান মাঈনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি এডিশনাল রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।

এরপর কোনো আপিল বা দরখাস্ত ছাড়াই গত বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রয়ারি) হল প্রাধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যেখানে তাকে হল থেকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আজমাঈন হাসান মাঈন জানান, ওইদিন শাহজালাল হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান চলছিল। গানগুলোও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাই বাজিয়েছিলেন। তিনি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। গানা বাজানোর ঘটনার সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা না থাকার পরেও হল প্রাধ্যক্ষ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তাকে হেনস্থা করার জন্য এসব কাজ করছেন।

ভুক্তভোগীর প্রশ্ন রেখে জানান, হলের অনুষ্ঠানে গান বাজাচ্ছিলেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। আওয়ামীলীগের গান বাজানোর ওই ঘটনায় কেন একমাত্র তাকেই শাস্তি দেওয়া হলো?

হল প্রভোস্টের সাথে ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়ে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রদল নেতার সঙ্গে তার সুসস্পর্ক রয়েছে। এদিকে ছাত্রদলের আরেক নেতা শাহজালাল হলে প্রভাব বিস্তার করার প্রচেষ্টায় আছেন। এ কারণেই ওই শিক্ষার্থীকে হল থেকে সরানোর জন্য এমন কাজ করছেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান। বারবার এভাবে শাস্তি দেওয়া ও পরিবর্তনের ঘটনাকে প্রশাসনের অন্যায্য ও প্রতিহিংসামূলক আচরণ হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগী। 

শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার এডিশনাল রেজিস্ট্রার মো. সারওয়ার জাহান বলেন, “এখানে প্রশাসনিক কিছু ত্রুটি ছিল। হলভিত্তিক সমস্যায় প্রাধ্যক্ষই সবকিছু নির্ধারণ করেন। এ কারণেই প্রথমে শিক্ষার্থী আজমাঈন হাসান মাঈনকে একাডেমিক বহিষ্কার করা হলেও পরবর্তীতে সেটি বাতিল করা হয়েছে। হল প্রাধ্যক্ষ পরবর্তীতে তার বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন।”

শাহজালাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান বলেন, “ওই শিক্ষার্থী যখন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার ওই গানটি বাজাচ্ছিলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তবর্গ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে প্রথমে তার শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শাস্তি কিছুটা কমিয়ে তাকে হল থেকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রথম বর্ষের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।”

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার হলের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আক্রোশ কেন থাকবে? এ রকম হলে তার শাস্তি কমানোর বিষয়ে আমরা ভাবতামই না।”

গত বছর ২৬ ডিসেম্বর বাকৃবির শাহজালাল হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত একটি ফিস্টে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রচারণা এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে অস্তিরতা ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষিপ্ত হয় এবং কেউ ইচ্ছে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার পায়তারা করছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। শিক্ষার্থীরা সে সময় প্রশাসনকে বলেছিলেন, তারা ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্যে গান বাজিয়েছে।

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
  • বিসিআইসির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
  • এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
  • ৪৪তম বিসিএস: মনোনীত প্রার্থীদের তথ্য চেয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
  • ‘আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না’ 
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
  • মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জন এখনো ভর্তি, আইসিইউতে ৩
  • শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তাঁর এখনো প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে: আইন উপদেষ্টা
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে