Samakal:
2025-09-18@03:33:27 GMT

বিজেপির দিল্লি জয়ের বার্তা

Published: 9th, February 2025 GMT

বিজেপির দিল্লি জয়ের বার্তা

দিল্লি ভারতের একটি শহর। এখানে যে-ই বসুক, এর ক্ষমতা সীমিত। তবে শনিবার প্রকাশিত লোকসভা নির্বাচনের ফলে যেভাবে বিজেপির জয় আমরা দেখেছি, তাতে এ জয় জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। অপ্রত্যাশিত ধাক্কার পর গত বছর হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র প্রদেশে বিজেপি ফিরে আসার অসাধারণ ক্ষমতা দেখিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটি তার মিত্রদের ধরে রাখার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, শিবসেনার (ইউবিটি) একটি দল শিগগিরই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দিতে পারে।

২৭ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রচেষ্টার পর বিজেপি দিল্লি দখল করেছে। প্রথমে শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে জয়লাভ, যখন তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তারপর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছ থেকে, যিনি শীলা দীক্ষিতকে ২০১৩ সালে পরাজিত করেছিলেন এবং ২০১৫ ও ২০২০ সালে দিল্লিতে ক্ষমতায় বসেন। এমনকি নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে লোকসভার ৭/৭ আসনে জয়ী হয়েছিলেন। মানুষ ভারতের জন্য মোদি এবং দিল্লির জন্য কেজরিওয়ালকে চেয়েছিল। বর্তমানে সে পরিস্থিতি বদলে গেছে। দিল্লির ফলাফল ইঙ্গিত দেয়, ২০২৪ সালে কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মোদির জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে। আম আদমি পার্টিপ্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ওপর ভার্চুয়াল গণভোটে যে আস্থা দেখা গিয়েছিল, তারই ফল বিজেপির বিজয়।

এটি তখনই হলো, যখন ট্রাম্পবাদ ভারতসহ অনেক দেশের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যেখানে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অবৈধ অভিবাসীদের শিকল বেঁধে ফিরিয়ে দেওয়া শুরু হয়েছে। দিল্লিতে বিজেপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে– ৮ থেকে ৪৮; যেখানে তাদের ভোট প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে। আম আদমি পার্টি (এএপি) ১০ শতাংশ ভোট হারিয়েছে, যা পরিবর্তনের পাটাতনের পরিস্থিতি তুলে ধরে। স্পষ্টতই পার্টির পক্ষে কেবল মধ্যবিত্তের সমর্থন ছিল না, যারা এএপির প্রতি বিরাগভাজন হয়েছিল এবং বিজেপির দিকে মুখ ফিরিয়েছিল। 

এটিও দিল্লির জন্য একটি বড় প্রভাব ফেলতে বাধ্য। এটি কেবল একটি কসমোপলিটন কেন্দ্র নয়, বরং অভিবাসীদের একটি শহরও। পাঞ্জাবিরা দেশভাগের পর এখানে বসতি স্থাপন করেছিল এবং প্রাথমিক পর্যায়ে বিজেপির মূল ভিত্তি তৈরি করেছিল। পূর্বাঞ্চলের লোকজন (আজকের প্রায় ৩০ শতাংশ), যারা উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছে অথবা দলিতদের মধ্যে বল্মীকি কিংবা জাতের মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেসব মহিলা বিগত দুটি নির্বাচনে এএপির পক্ষে জোরালোভাবে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু এখন তারা সরে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিজেপির বয়ান হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের ব্যাপারে সঠিক পথে হাঁটতে সাহায্য করেছিল। দিল্লিতে মধ্যবিত্তরা এই যুক্তি খরিদ করেছে বলে মনে হচ্ছে, ‘বিনামূল্যে’ দরিদ্রদের জোগান দেওয়া হয়েছিল। অনেকে নিশ্চিত হয়েছিল, ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার তাদের জন্য উপকারী হবে। বিজেপির সাংগঠনিক প্রভাবের পাশাপাশি আরএসএস যেভাবে তার সমর্থন দিয়েছিল, তা দলটির জন্য কাজে লেগেছে। যেমন হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের কথা বলা যায়। 

আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে জড়িতরা ৫০ হাজার ‘ড্রয়িংরুম’ সভার কথা বলেছিল, যেগুলো আরএসএস কর্মীরা সমর্থন পেতে ছোট ছোট দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল। নির্বাচনের আগে কয়েক মাস ধরে কেজরিওয়াল ও তাঁর সহকর্মীকে জেলে রাখা হয়েছিল। এ সময় এজেন্সিগুলো কেজরিওয়াল সরকারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তৎপর ছিল, যখন তার প্রতি স্বাভাবিক সহানুভূতি আসার কথা, সেটি ছিল অনুপস্থিত।

ভারতের বেশির ভাগ আঞ্চলিক দল দিল্লিতে কেজরিওয়ালকে সমর্থন করেছিল; কংগ্রেসকে নয়। কারণ, দুটি দল আলাদাভাবে লড়াই করেছিল। এটা সম্ভব যে, এএপি ও কংগ্রেস উভয়ই গত দুটি নির্বাচনে ‘শূন্য’ আসনের রাজকীয় সংখ্যার বাইরে যেতে পারেনি। তারা একসঙ্গে লড়াই করলে আরও ভালো ফল করতে পারত। স্পষ্টতই বিরোধী দলগুলো প্রাসঙ্গিক থাকতে চাইলে ভারত জোটকে নতুন করে সাজাতে হবে। কংগ্রেসের ভোট ব্যাংক প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে ৬.

৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্তত তারা ৬০টি আসনে জামানত হারিয়েছে, কিন্তু ১৩টি আসনে আম আদমি পার্টির পরাজয়ের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।
আম আদমি পার্টির নেতারা এখন সব আসন ও আস্থা ফিরে পেতে রাস্তায় কাজ করার জন্য ডাক দিয়ে আগামী দিনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেবেন।  

নীরজা চৌধুরী: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর; দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য কর ছ ল ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ