Samakal:
2025-11-03@05:51:30 GMT

বিজেপির দিল্লি জয়ের বার্তা

Published: 9th, February 2025 GMT

বিজেপির দিল্লি জয়ের বার্তা

দিল্লি ভারতের একটি শহর। এখানে যে-ই বসুক, এর ক্ষমতা সীমিত। তবে শনিবার প্রকাশিত লোকসভা নির্বাচনের ফলে যেভাবে বিজেপির জয় আমরা দেখেছি, তাতে এ জয় জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। অপ্রত্যাশিত ধাক্কার পর গত বছর হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র প্রদেশে বিজেপি ফিরে আসার অসাধারণ ক্ষমতা দেখিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটি তার মিত্রদের ধরে রাখার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, শিবসেনার (ইউবিটি) একটি দল শিগগিরই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দিতে পারে।

২৭ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রচেষ্টার পর বিজেপি দিল্লি দখল করেছে। প্রথমে শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে জয়লাভ, যখন তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তারপর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছ থেকে, যিনি শীলা দীক্ষিতকে ২০১৩ সালে পরাজিত করেছিলেন এবং ২০১৫ ও ২০২০ সালে দিল্লিতে ক্ষমতায় বসেন। এমনকি নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে লোকসভার ৭/৭ আসনে জয়ী হয়েছিলেন। মানুষ ভারতের জন্য মোদি এবং দিল্লির জন্য কেজরিওয়ালকে চেয়েছিল। বর্তমানে সে পরিস্থিতি বদলে গেছে। দিল্লির ফলাফল ইঙ্গিত দেয়, ২০২৪ সালে কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মোদির জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে। আম আদমি পার্টিপ্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ওপর ভার্চুয়াল গণভোটে যে আস্থা দেখা গিয়েছিল, তারই ফল বিজেপির বিজয়।

এটি তখনই হলো, যখন ট্রাম্পবাদ ভারতসহ অনেক দেশের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যেখানে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অবৈধ অভিবাসীদের শিকল বেঁধে ফিরিয়ে দেওয়া শুরু হয়েছে। দিল্লিতে বিজেপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে– ৮ থেকে ৪৮; যেখানে তাদের ভোট প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে। আম আদমি পার্টি (এএপি) ১০ শতাংশ ভোট হারিয়েছে, যা পরিবর্তনের পাটাতনের পরিস্থিতি তুলে ধরে। স্পষ্টতই পার্টির পক্ষে কেবল মধ্যবিত্তের সমর্থন ছিল না, যারা এএপির প্রতি বিরাগভাজন হয়েছিল এবং বিজেপির দিকে মুখ ফিরিয়েছিল। 

এটিও দিল্লির জন্য একটি বড় প্রভাব ফেলতে বাধ্য। এটি কেবল একটি কসমোপলিটন কেন্দ্র নয়, বরং অভিবাসীদের একটি শহরও। পাঞ্জাবিরা দেশভাগের পর এখানে বসতি স্থাপন করেছিল এবং প্রাথমিক পর্যায়ে বিজেপির মূল ভিত্তি তৈরি করেছিল। পূর্বাঞ্চলের লোকজন (আজকের প্রায় ৩০ শতাংশ), যারা উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছে অথবা দলিতদের মধ্যে বল্মীকি কিংবা জাতের মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেসব মহিলা বিগত দুটি নির্বাচনে এএপির পক্ষে জোরালোভাবে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু এখন তারা সরে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিজেপির বয়ান হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের ব্যাপারে সঠিক পথে হাঁটতে সাহায্য করেছিল। দিল্লিতে মধ্যবিত্তরা এই যুক্তি খরিদ করেছে বলে মনে হচ্ছে, ‘বিনামূল্যে’ দরিদ্রদের জোগান দেওয়া হয়েছিল। অনেকে নিশ্চিত হয়েছিল, ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার তাদের জন্য উপকারী হবে। বিজেপির সাংগঠনিক প্রভাবের পাশাপাশি আরএসএস যেভাবে তার সমর্থন দিয়েছিল, তা দলটির জন্য কাজে লেগেছে। যেমন হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের কথা বলা যায়। 

আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে জড়িতরা ৫০ হাজার ‘ড্রয়িংরুম’ সভার কথা বলেছিল, যেগুলো আরএসএস কর্মীরা সমর্থন পেতে ছোট ছোট দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল। নির্বাচনের আগে কয়েক মাস ধরে কেজরিওয়াল ও তাঁর সহকর্মীকে জেলে রাখা হয়েছিল। এ সময় এজেন্সিগুলো কেজরিওয়াল সরকারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তৎপর ছিল, যখন তার প্রতি স্বাভাবিক সহানুভূতি আসার কথা, সেটি ছিল অনুপস্থিত।

ভারতের বেশির ভাগ আঞ্চলিক দল দিল্লিতে কেজরিওয়ালকে সমর্থন করেছিল; কংগ্রেসকে নয়। কারণ, দুটি দল আলাদাভাবে লড়াই করেছিল। এটা সম্ভব যে, এএপি ও কংগ্রেস উভয়ই গত দুটি নির্বাচনে ‘শূন্য’ আসনের রাজকীয় সংখ্যার বাইরে যেতে পারেনি। তারা একসঙ্গে লড়াই করলে আরও ভালো ফল করতে পারত। স্পষ্টতই বিরোধী দলগুলো প্রাসঙ্গিক থাকতে চাইলে ভারত জোটকে নতুন করে সাজাতে হবে। কংগ্রেসের ভোট ব্যাংক প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে ৬.

৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্তত তারা ৬০টি আসনে জামানত হারিয়েছে, কিন্তু ১৩টি আসনে আম আদমি পার্টির পরাজয়ের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।
আম আদমি পার্টির নেতারা এখন সব আসন ও আস্থা ফিরে পেতে রাস্তায় কাজ করার জন্য ডাক দিয়ে আগামী দিনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেবেন।  

নীরজা চৌধুরী: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর; দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য কর ছ ল ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে আরএসএস নিষিদ্ধের দাবি জানালেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে

ভারতের কংগ্রেস দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আবারও দাবি করেছেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে (আরএসএস) দেশে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, স্বয়ং সরদার বল্লভভাই প্যাটেল সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।

খাড়গে বলেছেন, বিজেপি সরকার ২০২৪ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তাই ওই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করতে হবে।

আজ শুক্রবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে খাড়গে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হলো আরএসএসকে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি আরএসএসের আদর্শকে ‘বিষের’ সঙ্গে তুলনা করেন।

খাড়গে বলেন, সরদার প্যাটেল বলেছিলেন, ‘সরকারি চাকরিতে থাকাকালে আরএসএসের জন্য কাজ করা উচিত নয়।’ কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘তিনি সরকারি কর্মচারীদের আরএসএস এবং জামাত-ই-ইসলামীর কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। মোদি সরকার গত বছরের ৯ জুলাই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আমরা দাবি করছি, এই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করা হোক।’

বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। আজ তাঁর জন্মবার্ষিকী। ভারতে এবার বিজেপি সরকার দিনটিকে ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ হিসেবে পালন করছে।

খাড়গে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আরএসএস মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু উদ্‌যাপন করেছিল, এমন কথা সরদার প্যাটেল একটি চিঠিতে লিখেছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে এই কট্টর হিন্দুবাদী গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে যুক্তি দেন।

মল্লিকার্জুন খাড়গে জোর দিয়ে বলেন, সরদার প্যাটেল দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্বাস করতেন, সরদার প্যাটেলের অবদান ছিল অপরিমেয়। ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি আরএসএস সম্পর্কে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আরএসএস গান্ধীজির মৃত্যু উদ্‌যাপন করেছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেছিল। এরপর সরকারের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’

খাড়গে বলেন, প্যাটেলের কাছে পৌঁছানো প্রতিবেদনে দেখা যায়, আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার মতাদর্শের কারণে দেশে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, সেটাই গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল।

বিজেপি অবশ্য কংগ্রেসের এই দাবির সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, কংগ্রেস এত দিন ধরে প্যাটেলের অবদানকে ‘উপেক্ষা’ করে এখন আরএসএসকে আক্রমণ করার জন্য তাঁর নাম ব্যবহার করছে।

খাড়গের নিজ রাজ্য কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে রাজ্য সরকার বিবাদে জড়িয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে আরএসএস নিষিদ্ধের দাবি জানালেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে