দিল্লি ভারতের একটি শহর। এখানে যে-ই বসুক, এর ক্ষমতা সীমিত। তবে শনিবার প্রকাশিত লোকসভা নির্বাচনের ফলে যেভাবে বিজেপির জয় আমরা দেখেছি, তাতে এ জয় জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। অপ্রত্যাশিত ধাক্কার পর গত বছর হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র প্রদেশে বিজেপি ফিরে আসার অসাধারণ ক্ষমতা দেখিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটি তার মিত্রদের ধরে রাখার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, শিবসেনার (ইউবিটি) একটি দল শিগগিরই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দিতে পারে।
২৭ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রচেষ্টার পর বিজেপি দিল্লি দখল করেছে। প্রথমে শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে জয়লাভ, যখন তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তারপর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছ থেকে, যিনি শীলা দীক্ষিতকে ২০১৩ সালে পরাজিত করেছিলেন এবং ২০১৫ ও ২০২০ সালে দিল্লিতে ক্ষমতায় বসেন। এমনকি নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে লোকসভার ৭/৭ আসনে জয়ী হয়েছিলেন। মানুষ ভারতের জন্য মোদি এবং দিল্লির জন্য কেজরিওয়ালকে চেয়েছিল। বর্তমানে সে পরিস্থিতি বদলে গেছে। দিল্লির ফলাফল ইঙ্গিত দেয়, ২০২৪ সালে কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মোদির জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে। আম আদমি পার্টিপ্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ওপর ভার্চুয়াল গণভোটে যে আস্থা দেখা গিয়েছিল, তারই ফল বিজেপির বিজয়।
এটি তখনই হলো, যখন ট্রাম্পবাদ ভারতসহ অনেক দেশের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যেখানে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অবৈধ অভিবাসীদের শিকল বেঁধে ফিরিয়ে দেওয়া শুরু হয়েছে। দিল্লিতে বিজেপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে– ৮ থেকে ৪৮; যেখানে তাদের ভোট প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে। আম আদমি পার্টি (এএপি) ১০ শতাংশ ভোট হারিয়েছে, যা পরিবর্তনের পাটাতনের পরিস্থিতি তুলে ধরে। স্পষ্টতই পার্টির পক্ষে কেবল মধ্যবিত্তের সমর্থন ছিল না, যারা এএপির প্রতি বিরাগভাজন হয়েছিল এবং বিজেপির দিকে মুখ ফিরিয়েছিল।
এটিও দিল্লির জন্য একটি বড় প্রভাব ফেলতে বাধ্য। এটি কেবল একটি কসমোপলিটন কেন্দ্র নয়, বরং অভিবাসীদের একটি শহরও। পাঞ্জাবিরা দেশভাগের পর এখানে বসতি স্থাপন করেছিল এবং প্রাথমিক পর্যায়ে বিজেপির মূল ভিত্তি তৈরি করেছিল। পূর্বাঞ্চলের লোকজন (আজকের প্রায় ৩০ শতাংশ), যারা উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছে অথবা দলিতদের মধ্যে বল্মীকি কিংবা জাতের মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেসব মহিলা বিগত দুটি নির্বাচনে এএপির পক্ষে জোরালোভাবে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু এখন তারা সরে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিজেপির বয়ান হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের ব্যাপারে সঠিক পথে হাঁটতে সাহায্য করেছিল। দিল্লিতে মধ্যবিত্তরা এই যুক্তি খরিদ করেছে বলে মনে হচ্ছে, ‘বিনামূল্যে’ দরিদ্রদের জোগান দেওয়া হয়েছিল। অনেকে নিশ্চিত হয়েছিল, ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার তাদের জন্য উপকারী হবে। বিজেপির সাংগঠনিক প্রভাবের পাশাপাশি আরএসএস যেভাবে তার সমর্থন দিয়েছিল, তা দলটির জন্য কাজে লেগেছে। যেমন হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের কথা বলা যায়।
আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে জড়িতরা ৫০ হাজার ‘ড্রয়িংরুম’ সভার কথা বলেছিল, যেগুলো আরএসএস কর্মীরা সমর্থন পেতে ছোট ছোট দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল। নির্বাচনের আগে কয়েক মাস ধরে কেজরিওয়াল ও তাঁর সহকর্মীকে জেলে রাখা হয়েছিল। এ সময় এজেন্সিগুলো কেজরিওয়াল সরকারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তৎপর ছিল, যখন তার প্রতি স্বাভাবিক সহানুভূতি আসার কথা, সেটি ছিল অনুপস্থিত।
ভারতের বেশির ভাগ আঞ্চলিক দল দিল্লিতে কেজরিওয়ালকে সমর্থন করেছিল; কংগ্রেসকে নয়। কারণ, দুটি দল আলাদাভাবে লড়াই করেছিল। এটা সম্ভব যে, এএপি ও কংগ্রেস উভয়ই গত দুটি নির্বাচনে ‘শূন্য’ আসনের রাজকীয় সংখ্যার বাইরে যেতে পারেনি। তারা একসঙ্গে লড়াই করলে আরও ভালো ফল করতে পারত। স্পষ্টতই বিরোধী দলগুলো প্রাসঙ্গিক থাকতে চাইলে ভারত জোটকে নতুন করে সাজাতে হবে। কংগ্রেসের ভোট ব্যাংক প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে ৬.
আম আদমি পার্টির নেতারা এখন সব আসন ও আস্থা ফিরে পেতে রাস্তায় কাজ করার জন্য ডাক দিয়ে আগামী দিনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেবেন।
নীরজা চৌধুরী: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর; দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য কর ছ ল ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কার্যালয়ে মাইক্রোসফট টিমসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করছে জার্মানির একটি স্টেট, কেন
সরকারি কার্যালয়ে মাইক্রোসফটের টিমসসহ বেশ কয়েকটি সফটওয়্যারের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় শেলসভিগ-হোলস্টেইন স্টেট। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আগামী তিন মাস পর পুলিশ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা মাইক্রোসফট টিমস ব্যবহার করতে পারবেন না। তথ্য সংরক্ষণে বিদেশি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
স্টেট গভর্নমেন্টের ডিজিটাল রূপান্তরবিষয়ক মন্ত্রী ডির্ক শ্রোয়েডটার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা তথ্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চাই। এ জন্যই মাইক্রোসফট টিমসের ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছি।’ নতুন সিদ্ধান্তের আওতায় প্রাথমিকভাবে শেলসভিগ-হোলস্টেইন স্টেটের ৬০ হাজার সরকারি কর্মচারীর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী এই পরিবর্তনের আওতায় আসবেন। পরবর্তী ধাপে আরও প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষককে একই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্টেট গভর্নমেন্ট ২০২৪ সাল থেকেই ধাপে ধাপে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ব্যবহারের বিকল্প খুঁজে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে অফিস ব্যবস্থাপনায় মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও এক্সেলের পরিবর্তে ‘লিব্রে অফিস’ এবং ই–মেইল ও ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাপনায় ‘মাইক্রোসফট আউটলুক’–এর জায়গায় ‘ওপেন-এক্সচেঞ্জ’ ব্যবহার শুরু হয়েছে।
পরবর্তী ধাপে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বাদ দিয়ে একটি লিনাক্সভিত্তিক বিকল্প চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ডির্ক শ্রোয়েডটার জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে জ্বালানিনির্ভরতা নিয়ে যেমন সচেতনতা তৈরি হয়েছে, তেমনি ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘এই যুদ্ধ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, আমরা শুধু জ্বালানিতেই নয়, তথ্যপ্রযুক্তিতেও কতটা নির্ভরশীল। এখন সময় এসেছে এসব নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার।’ স্টেট গভর্নমেন্ট জানিয়েছে, মাইক্রোসফটের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনো ক্লাউড সেবার বদলে জার্মানির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ক্লাউড প্ল্যাটফর্মেই তারা সরকারি তথ্য সংরক্ষণ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ইউরোপের নির্ভরতা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই বিতর্ক চলছে। বিশেষত মাইক্রোসফটের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি প্রতিযোগিতাবিষয়ক তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ ছিল, মাইক্রোসফট তাদের ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে টিমস সফটওয়্যার বান্ডিল করে বিক্রি করে, যা বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমিয়ে দেয়। ডির্ক শ্রোয়েডটার বলেন, ‘শেলসভিগ-হোলস্টেইনের নেওয়া এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া