ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি অবসানের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার তিনি বলেছেন, শনিবার দুপুরের মধ্যে হামাস যদি সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তাহলে তিনি এ চুক্তি শেষ করে দিতে পারেন।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনে হামাসের পক্ষ থেকে শর্ত অনুযায়ী জিম্মি মুক্তি স্থগিত করার কথা জানানোর পর ট্রাম্প এমন হুমকি দিলেন।

আরও পড়ুনওয়াশিংটনে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী: গাজা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করেছে আরব দেশগুলো৭ ঘণ্টা আগে

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়। এর মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকায় টানা ১৫ মাসের ইসরায়েলি হামলার লাগাম টানা হয়। শর্ত মেনে এরই মধ্যে পাঁচ দফায় জিম্মি ও বন্দিবিনিময় করেছে হামাস ও ইসরায়েল।

তবে ট্রাম্পের এক ঘোষণায় পরিস্থিতি অনেকটাই ঘোলাটে হয়ে ওঠে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পর ট্রাম্প জানান, গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। খালি করা হবে গাজা উপত্যকা। সেখানকার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যদি শনিবার ১২টার মধ্যে সব জিম্মিকে ফেরত দেওয়া না হয়, আমার মনে হয়, এটাই উপযুক্ত সময়। আমি বলব, এটা (যুদ্ধবিরতি) বাতিল করো।’

আরও পড়ুনজিম্মি মুক্তি স্থগিত হামাসের, সেনা সতর্কতা ইসরায়েলের১০ ঘণ্টা আগে

এএফপির খবরে জানা যায়, হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি জিম্মি মুক্তির কথা রয়েছে। তবে পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তি স্থগিত থাকবে। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের কারণে যুদ্ধবিরতির পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরতে দেরি হয়েছে। তাঁদের গুলির লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে দেয়নি ইসরায়েল। তাই পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তি স্থগিত থাকবে।

পরে আরেক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ‘নির্ধারিত বন্দিবিনিময়ের পাঁচ দিন আগে ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘোষণা (স্থগিতের) দিয়েছিল হামাস। এর উদ্দেশ্য ছিল চুক্তির শর্ত পূরণের জন্য যাতে (ইসরায়েলি) দখলদারির বিরুদ্ধে চাপ তৈরির জন্য মধ্যস্থতাকারীরা পর্যাপ্ত সময় পান। দখলদারেরা চুক্তির শর্ত মেনে চললে পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী ধাপে বন্দিবিনিময়ের কাজ এগিয়ে নিতে দরজা খোলা থাকবে।’

ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী যেকোনো সম্ভাব্য দৃশ্যপটের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

আরও পড়ুন সমালোচনার মুখেও গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে ‘অনড়’ ট্রাম্প১৪ ঘণ্টা আগেসহায়তা বন্ধের হুমকি

গাজা খালি করার জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাবকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলছে জাতিসংঘ। অনেক বিশ্লেষকেরও একই মত। ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে এ প্রস্তাব।

কিন্তু ট্রাম্প অনড়। সোমবার তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জর্ডান ও মিশর যদি গাজা নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার আওতায় ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তিনি ‘সম্ভবত’দেশগুলোর জন্য সহায়তা বন্ধ করে দেবেন।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে বলেছেন, আরব দেশগুলো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরানো এবং উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া-বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করেছে। এর পরই ট্রাম্প এমন হুঁশিয়ারি দিলেন।

এদিকে চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদতুল্লাহর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক করার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনগাজাকে ‘বড় আবাসন এলাকা’ মনে করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প১৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩