বইমেলায় আক্রমণ মতপ্রকাশের ওপর আঘাত
Published: 11th, February 2025 GMT
হামলা ও বাধার ঘটনাগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ধারাবাহিক সহিংসতার অংশ। বইমেলায় যে আক্রমণ হয়েছে, তা মতপ্রকাশের ওপর আঘাত। দেশের ১২৪ জন লেখক-শিল্পী-অধিকারকর্মী এক বিবৃতিতে এ কথা উল্লেখ করে মেলার নিরাপত্তা জোরদার করা ও আক্রমণকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে ওই বিবৃতি পাঠানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফেসবুকে আগাম হুমকি দিয়ে গতকাল সোমবার সব্যসাচী স্টলে হামলা চালানো হয়েছে। এই মব (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) আক্রমণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর আঘাত। এই মবগোষ্ঠী দেশের জনগণের মৌলিক মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আক্রমণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০০৪ সালে লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর নৃশংস হামলা, ২০১৫ সালে লেখক অভিজিৎ রায় এবং প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ড থেকে সম্প্রতি মাজার ভাঙা, নারীদের ফুটবল খেলতে বাধা দেওয়া, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সময় বেঁধে দেওয়া একই ধরনের সহিংসতার ধারাবাহিকতার অংশ। বিশেষত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ভিন্ন চিন্তা ও বৈশিষ্ট্যের মানুষদের হত্যার ক্ষেত্রে প্রথমে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর প্রচারণা ও সম্মতি উৎপাদন; পরবর্তী সময়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও পরোক্ষ মদদে এসব হত্যার ঘটনা ঘটেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়েও একইভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন হতে দেখা যাচ্ছে।
বইমেলার বর্তমান নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পূর্ণ অকার্যকর উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তাব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে বহুগুণ জোরদার করতে হবে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সব হামলাকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এ ধরনের কার্যকলাপ প্রতিরোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। এই ন্যূনতম দাবিগুলোও পূরণ না হলে বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, নৃবিজ্ঞানী নাসরিন খন্দকার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম সারওয়ার, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষক লাবনী আশরাফি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসউদ ইমরান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ, লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা, আইনজীবী মানজুর আল মতিন, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।