ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পরবর্তী ধাপে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে কেন তা বিলম্ব করার ঘোষণা দিল হামাস?

বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে নিজেদের ওই ঘোষণাকে ইসরায়েলের জন্য একটি ‘সতর্কীকরণ বার্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে হামাস। তারা বলেছে, নিজেদের বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণে দখলদারদের (ইসরায়েল) ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মধ্যস্থতাকারীদের পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছে তারা।

হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মধ্যে তিনজনকে আগামী শনিবার মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। বিবৃতিতে হামাস বলেছে, পরবর্তী সময়সূচি অনুযায়ী, শনিবার জিম্মি মুক্তির বিষয়টি যেন এগিয়ে নেওয়া যায়, তার জন্য ‘দরজা এখনো খোলা’ আছে। এ থেকে মনে হচ্ছে চুক্তি নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা সমাধানে সময় দিতে চায় তারা। তবে এ অচলাবস্থাটা আসলে কী?

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস একরাশ অভিযোগ এনেছে। সেগুলো হলো—বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজ ঘরবাড়িতে ফেরায় বিলম্ব করানো, তাঁদের ওপর সরাসরি গুলি করা এবং গাজায় নির্দিষ্ট ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়া।

গাজায় যে বিপুল পরিমাণ ফিলিস্তিন ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, তাঁদের নিজ বাড়িতে ফিরতে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অনিচ্ছার কথা উল্লেখ করেছেন হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন অনেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাও।

গাজার বাসিন্দাদের উপত্যকাটি থেকে চলে যেতে উৎসাহিত করার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে ইসরায়েল সরকার যখন রাখঢাক না করে আলোচনা করছে—এমন একটি সময়ে আবাসস্থলের জরুরি প্রয়োজনীয়তার মধ্যে থাকা মানুষগুলোকে ফিরতে ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার কারণে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গাজা থেকে বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

এই আশঙ্কাকে বলতে গেলে প্রতিদিনই আরও তীব্র করে তুলছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমে তাঁর পরামর্শে মনে হয়েছিল, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনের সময়টাতে বেশির ভাগ ফিলিস্তিনিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে পরে দেখা যায়, ট্রাম্প সব গাজাবাসীর নিজ ঠিকানা ছেড়ে চলে যাওয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নিয়ন্ত্রণ ও শাসনের কথা বলছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩