ট্রাম্পের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে কি গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে
Published: 11th, February 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পরবর্তী ধাপে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে কেন তা বিলম্ব করার ঘোষণা দিল হামাস?
বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে নিজেদের ওই ঘোষণাকে ইসরায়েলের জন্য একটি ‘সতর্কীকরণ বার্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে হামাস। তারা বলেছে, নিজেদের বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণে দখলদারদের (ইসরায়েল) ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মধ্যস্থতাকারীদের পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছে তারা।
হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মধ্যে তিনজনকে আগামী শনিবার মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। বিবৃতিতে হামাস বলেছে, পরবর্তী সময়সূচি অনুযায়ী, শনিবার জিম্মি মুক্তির বিষয়টি যেন এগিয়ে নেওয়া যায়, তার জন্য ‘দরজা এখনো খোলা’ আছে। এ থেকে মনে হচ্ছে চুক্তি নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা সমাধানে সময় দিতে চায় তারা। তবে এ অচলাবস্থাটা আসলে কী?
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস একরাশ অভিযোগ এনেছে। সেগুলো হলো—বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজ ঘরবাড়িতে ফেরায় বিলম্ব করানো, তাঁদের ওপর সরাসরি গুলি করা এবং গাজায় নির্দিষ্ট ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়া।
গাজায় যে বিপুল পরিমাণ ফিলিস্তিন ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, তাঁদের নিজ বাড়িতে ফিরতে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অনিচ্ছার কথা উল্লেখ করেছেন হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন অনেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাও।
গাজার বাসিন্দাদের উপত্যকাটি থেকে চলে যেতে উৎসাহিত করার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে ইসরায়েল সরকার যখন রাখঢাক না করে আলোচনা করছে—এমন একটি সময়ে আবাসস্থলের জরুরি প্রয়োজনীয়তার মধ্যে থাকা মানুষগুলোকে ফিরতে ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার কারণে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গাজা থেকে বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এই আশঙ্কাকে বলতে গেলে প্রতিদিনই আরও তীব্র করে তুলছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমে তাঁর পরামর্শে মনে হয়েছিল, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনের সময়টাতে বেশির ভাগ ফিলিস্তিনিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে পরে দেখা যায়, ট্রাম্প সব গাজাবাসীর নিজ ঠিকানা ছেড়ে চলে যাওয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নিয়ন্ত্রণ ও শাসনের কথা বলছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।