Prothomalo:
2025-08-01@21:51:40 GMT

এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম

Published: 14th, February 2025 GMT

মানুষ কি প্রেমে পড়ার পর কবি হয় নাকি কবি হওয়ার পর প্রেমে পড়ে? ব্যাপারটা হয়তো এ রকম, খ্যাতিমান লেখক হওয়ার আগের প্রেমের খবর রাখে না কেউ, নামজাদা লেখক হলেই প্রেম হয়ে ওঠে আলোচনার খোরাক। প্রেম কবি-লেখকের জন্য যেমন হয়ে উঠতে পারে অনুপ্রেরণার উৎস, তেমনই ডেকে আনতে পারে বিপর্যয়। আমাদের সর্বক্ষেত্রে অপরিহার্য রবীন্দ্রনাথের বড় কোনো উল্লেখযোগ্য প্রেমকাহিনি নেই, তারপরও পৃথিবীর সব কবির হয়ে প্রেমের শাশ্বত রূপের কথা লিখেছেন তিনি: ‘আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি/ যুগল প্রেমের স্রোতে/ অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।/.

.. একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে/ সকল প্রেমের স্মৃতি/ সকল কালের সকল কবির গীতি।’ 

রবীন্দ্রনাথের জীবনে প্রেম কি একেবারেই আসেনি? কাদম্বরী দেবী, আনা তড়খড় কিংবা বিদেশিনী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্ভাব্য সম্পর্কের কথা কেবল আভাসে-ইঙ্গিতেই বলা হয় প্রমাণহীনভাবে। আনা তড়খড়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দুই মাসের সান্নিধ্যের সময় তাঁদের মধ্যে প্রকৃত প্রেমের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল কি না, সেটি তথ্যপ্রমাণসহ বলা না গেলেও রবিজীবনীকারদের ইঙ্গিতটা সেদিকেই। পূরবী কাব্যগ্রন্থের ‘ক্ষণিকা’ কবিতার ‘গোধূলিবেলার পান্থ জনশূন্য প্রান্তরে’, ‘তার ভীরু দীপশিখা’ নিয়ে দিগন্তের অজানা পারে চলে যাওয়া ‘ক্ষণিকা’ই যে আনা, সেটিও গবেষকদের ধারণা। একই গ্রন্থের ‘বিদেশি ফুল’ কবিতাটি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে নিয়ে লেখা হলেও হতে পারে। তবে যে পূরবী কাব্যগ্রন্থে আনা তড়খড় ও ওকাম্পোকে নিয়ে লেখা বলে অনুমিত কবিতা গ্রন্থিত হয়েছে, গ্রন্থটিও উৎসর্গ করা হয়েছে জনৈকা ‘বিজয়া’কে, যে নামে ওকাম্পোকে ডাকতেন রবীন্দ্রনাথ। কিংবা কাদম্বরী দেবীকে নিয়ে লিপিকার ‘কৃতঘ্ন শোক’ অথবা কড়ি ও কোমল-এর ‘কোথায়’ কবিতা দুটিকে আমরা কীভাবে নেব? 

রবীন্দ্রনাথ-ওকাম্পো প্রসঙ্গে এসে যায় সমিল আরেকটি ঘটনা। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বহু প্রেম ও প্রেমিকার মধ্যে সবচেয়ে অসম বয়সী অনুমিত সম্পর্কটি ছিল আদ্রিয়ানা ইভানচিচের সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ ও ওকাম্পোর মধ্যে বয়সের পার্থক্য ছিল উনত্রিশ বছর, আর হেমিংওয়ের সঙ্গে আদ্রিয়ানার একত্রিশ। হেমিংওয়ের মধ্যে আদ্রিয়ানার জন্য যে পরিমাণ আকুলতা দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথের তপস্বীর মতো আচরণে সে রকম কিছুই ছিল না, বরং বিষয়টি ছিল ঠিক বিপরীত, ওকাম্পোরই বরং অমোঘ আকর্ষণ ছিল ভারতীয় এই কবির প্রতি। ওকাম্পোকে লেখা চিঠির নিচে যে ভালোবাসার কথা লিখতেন রবীন্দ্রনাথ, তার মধ্যেও বোধ করি ছিল না কোনো অনৌচিত্যবোধ।

হেমিংওয়ের জীবনে যতবার প্রেম এসেছে, তার তুলনা বিরল। প্রেমকাতুরে এই লেখক নিজেকে জড়িয়েছেন একের পর এক নারীর সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে চারজনের সঙ্গে স্থাপিত হয়েছিল বৈবাহিক সম্পর্ক। মূলত কৈশোরোত্তীর্ণ বয়স থেকেই নানান বয়সী মেয়েদের সঙ্গে ছিল তাঁর প্রেমের সম্পর্ক। বিবাহিত জীবনেও আটপৌরে হয়ে যাওয়া দাম্পত্য সম্পর্কের ফাটল গলে আবির্ভূত হয়েছেন প্রেমাস্পদা নারীরা। ১৮ বছর বয়সে প্রেমকাতুরে হেমিংওয়ের জীবনে প্রথম প্রেমিকার আগমন ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আহত হওয়ার পর ইতালির যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেখানকার এক নার্স অ্যাগনেস কুরোওস্কির প্রেমে পড়েন হেমিংওয়ে। স্বল্পস্থায়ী সেই প্রেমের করুণ সমাপ্তির আগে ও পরে তাঁর জীবনে একে একে আসেন মার্জোরি বাম্প, কেট স্মিথ, গ্রেস কুইনল্যান, আইরিন গোল্ডস্টেইন, পলিন স্নো, ফ্রান্সেস কোটস ও ক্যাথরিন লংওয়েল নামের নারীরা। তারপর আবারও তিনি প্রেমে পড়েন তাঁর চেয়ে আট বছরের বড় হ্যাডলি রিচার্ডসনের। প্রেম থেকে দাম্পত্যে গড়ানো এই সম্পর্কের পাঁচ বছরের মাথায় হেমিংওয়ের জীবনে প্রেমিকা ও পরে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে আসেন ভোগ ফ্যাশন ম্যাগাজিনের সাংবাদিক পলিন ফেইফার। পলিন ও হেমিংওয়ের দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের জন্মের পর দুজনের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বৃদ্ধি পেলে বাইশ বছরের তরুণী সোনালি চুল আর ডাগর নীলাক্ষির দীর্ঘাঙ্গী জেন ম্যাসনের মধ্যে হেমিংওয়ে খুঁজে পান তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারঙ্গম আর এক রমণীকে, তবে এই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। এবার তাঁর নতুন প্রেমিকা হয়ে আসেন সাংবাদিক মার্থা গেলহর্ন। তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্কের স্থায়িত্ব ছিল পাঁচ বছর। প্রেমিকা মেরি ওয়েলশ এসেছিলেন তাঁর চতুর্থ ও সর্বশেষ স্ত্রী হয়ে। হেমিংওয়ে ও মেরির জীবনের কিউবা পর্বে লিওপোল্ডিনা রড্রিগেজ নামের এক নারীর সঙ্গে হেমিংওয়ের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এঁরা ছাড়া হেমিংওয়ের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কানাঘুষা ছিল পেইন্টার জেরাল্ড মারফির স্ত্রী সারাহ, ব্যারন ফন ব্লিক্সেনের স্ত্রী ব্যারনেস ইভা ব্লিক্সেন, জার্মান অভিনেত্রী মার্লিন দিয়েত্রিচকে নিয়ে। প্রায় অর্ধেক বয়সী আদ্রিয়ানা ইভানচিচও এ সময়ের মানসী। হেমিংওয়ের জীবনে আসা নারীদের দীর্ঘ তালিকার তুলনায় এত নারীর প্রেমে রমণীয় ছিল না অন্য লেখকদের জীবন।   

তবে হেমিংওয়ের ৬২ বছরের জীবনে যে কজন নারী এসেছিলেন, সে হিসাবে মায়াকোভস্কির ৩৬ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে আসা কমপক্ষে পাঁচজন প্রেমিকাকেও নেহাত কম বলা যায় না। ২০ বছর বয়সে তাঁর জীবনে প্রথম আসা এলসা ত্রিয়োলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা–পরবর্তী জীবনে ঢাকা পড়ে যায় এলসার বড় বোন লিলিয়া ব্রিকের প্রেমে। এমনকি মায়াকোভস্কির সঙ্গে লিলিয়ার শারীরিক সম্পর্কের কথা জানার পরও সব মেনে নিয়েছিলেন লিলিয়ার স্বামী রুশ লেখক ওসিপ ব্রিক। বাকি জীবন এই দম্পতির সঙ্গে যুক্ত থেকেও একের পর এক নারীর প্রেমে পড়েছেন মায়াকোভস্কি। তাঁর সঙ্গে বহুভাষী অনুবাদক ও ফ্যাশন মডেল এলি জোনসের পরিচয় ঘটে ১৯২৫ সালে নিউইয়র্কে। দেড় বছরের সেই ভালোবাসার ফসল হিসেবে মায়াকোভস্কি রেখে গেছেন এক কন্যাসন্তান, প্যাট্রিসিয়া টমসন, রাশিয়ায় যিনি পরিচিত ইয়েলেনা ভ্লাদিমিরনোভা মায়াকোভস্কায়া নামে। বাবা–মায়ের সম্পর্ক নিয়ে একটা বইও লিখেছেন প্যাট্রিসিয়া।

তাতিয়ানা ইয়াকোভলেভার সঙ্গে মায়াকোভস্কির পরিচয় হয় ১৯২৮ সালে প্যরিসে এবং প্রথম দেখায়ই প্রেম। মায়াকোভস্কির প্যারিসবাসের মাসাধিককালের অধিকাংশ সময় কেটেছে তাতিয়ানার সান্নিধ্যে। মায়াকোভস্কির কবিতায় তাতিয়ানার উপস্থিতি টের পাওয়ার পর লিলিয়া বুঝতে পারেন সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর পাল্লায় পড়েছেন তিনি। অবশ্য তত দিনে লিলিয়ার সঙ্গে কবির প্রেমে ফিকে হয়ে এসেছে শরীর, রয়ে গেছে কেবল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। একসময় রাশিয়ায় ফিরতে আসতে হয় মায়াকোভস্কিকে। তাতিয়ানাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার বহু চেষ্টা করলেও রাজি হননি এই নারী। দেশে ফেরার আগে প্যারিসের এক ফুলের দোকানে বেশ কিছু টাকা অগ্রিম দিয়ে গিয়েছিলেন মায়াকোভস্কি, যাতে প্রতি রোববার তাতিয়ানার কাছে তাঁর নামে একটা করে ফুলের তোড়া পাঠানো হয়। এমনকি মায়াকোভস্কির মৃত্যুর পরও তাতিয়ানার কাছে সাপ্তাহিক ফুল পাঠানো অব্যাহত ছিল বহুদিন।

মায়াকোভস্কির শেষ প্রেম ১৯২৯ সালে বিখ্যাত অভিনেত্রী ভেরোনিকা পোলোনোস্কায়ার সঙ্গে। পরের বছরই নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন কবি। ধারণা করা হয়, স্বামীকে ছেড়ে আসতে ভেরোনিকার অস্বীকারই মায়াকোভস্কিকে প্ররোচিত করেছিল আত্মহননে।

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের বয়স যখন চৌদ্দ, তখনই তাঁর ভালো লেগে গিয়েছিল নীল নদের সাপের মতো গোপন সৌন্দর্যে ভরপুর নয় বছরের কিশোরী মার্সেদেস বার্চাকে। সেই ভালো লাগা থেকে প্রণয়ের একপর্যায়ে ১৮ বছরের মার্কেস ১৩ বছরের মার্সেদেসকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই প্রণয় শেষাবধি পরিণয়ে পরিণত হয়। মার্সেদেসের সঙ্গে প্রেমপর্বের আগে আরেকজন প্রেমিকা ছিলেন মার্কেসের। আত্মজীবনীতে মার্তিনা ফনসেকা নামের এক বিবাহিতা নারীর কথা অকপটে লিখেছেন মার্কেস। মার্কেসের তখন কৈশোরোত্তীর্ণ বয়স। নাবিক স্বামীর অবর্তমানে এই নারী তাঁকে দিয়েছিলেন অসম বয়সের প্রেম ও শরীরের দীক্ষা। কিশোর প্রেমিকের পড়াশোনার দেখভালও করতেন মার্তিনা, ফলে পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করেছিলেন মার্কেস। অবশেষে একসময় মার্তিনাই ছেড়ে গিয়েছিলেন তাঁকে। সেই ধাক্কা সইতে বেশ কষ্ট হয়েছিল কিশোর প্রেমিকটির। মার্কেসের মৃত্যুর পর উদ্​ঘাটিত হয়, সুসানা কাতো নামে মার্কেসের এক গোপন প্রেমিকা ছিলেন। ইন্দিরা কাতো নামে তাঁদের বিবাহবহির্ভূত এক কন্যাও আছে। উল্লেখ্য, সুসানা ছিলেন মার্কেসের চেয়ে ৩৩ বছরের ছোট।

ইংরেজ কবি পি বি শেলির ঘটনাটা আরও জটিল। উনিশ বছর বয়সে ষোলো বছরের হ্যারিয়েট ওয়েস্টব্রুককে নিয়ে স্কটল্যান্ডে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তিন বছরের মাথায় হ্যারিয়েট যখন সন্তানসম্ভবা, তখন আবারও শেলি ইউরোপে পালিয়ে যান মেরি ওলস্টোনক্রাফটকে নিয়ে। কিছুদিন পর এক ছেলের মা হন হ্যারিয়েট। কিন্তু স্বামীর এই বিশ্বাসঘাতকতা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন তিনি। এবার মেরিকে বিয়ে করার পথে আর বাধা থাকে না। হ্যারিয়েটের মৃত্যুর তিন সপ্তাহের মধ্যেই শেলি বিয়ে করেন মেরিকে। তবে এই দুর্দমনীয় প্রেমের মাধুরী উপভোগ করতে পারেননি শেলি। মেরির ঘরে তাঁর চার সন্তানের মধ্যে তিনজনই অকালে মারা যায়। শেলি নিজেও নৌকাডুবিতে মারা যান ত্রিশ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই।

সিমন দ বুভোয়ার মেধায় আকৃষ্ট হয়ে জ্যঁ পল সার্ত্রে প্রেমে পড়েছিলেন তাঁর। তবে তাঁদের মধ্যকার সম্পর্কটা ছিল ভিন্নতর, ছাঁদনাতলায় না গেলেও পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধনহীন জীবনে একধরনের আত্মিক বিবাহবন্ধনে কাটিয়েছিলেন তাঁরা। 

প্রেমের শাশ্বত রূপ কবিদের রচনায় থাকলেও তাঁদের জীবনেই কখনো নেমে আসে অপূর্ণতার গুরুভার যন্ত্রণা। তা না হলে সিলভিয়া প্লাথের মাত্র একত্রিশ বছরের জীবন এভাবে তছনছ হয়ে যায় না। কবি টেড হিউজের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর দুর্নিবার প্রেমের পূর্ণতা পাওয়ার আগেই কয়েক মাসের মাথায় ঘর বাঁধেন এই কবি দম্পতি। ছয় বছর পর টেড-সিলভিয়াদের বাড়ি ভাড়া নেন জার্মান কবি আসিয়া ওয়েভিল এবং তৃতীয় স্বামী ডেভিড ওয়েভিল। আসিয়াকে দেখে প্রেমে পড়ে যান টেড। তাঁর কবিতা ‘ড্রিমার্স’-এ খোলাখুলিভাবে এই জার্মান সুন্দরীর কথা লিখেছেন, ‘আমার ভেতরের স্বপ্নবাজটি প্রেমে পড়ে যায় তার।’ সিলভিয়া তখন দুই সন্তানের মা। ঘর বাঁধতে তাঁদের যেমন দেরি হয়নি, ভাঙতেও সময় লাগেনি। বছর না ঘুরতেই রান্নাঘরের গ্যাস খুলে দিয়ে আত্মহত্যা করেন সিলভিয়া প্লাথ। আসিয়াকে বিয়ে না করলেও তাঁর গর্ভে এক কন্যাসন্তান ছিল টেডের। সিলভিয়ার আত্মহননের ছয় বছর পর আসিয়াও হিউজের কন্যাসন্তানটিকে নিয়ে একই কায়দায় গ্যাস দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন।

পাশ্চাত্য বিশ্বের লেখকদের জীবনের প্রেম অনেক উদ্দাম ও বৈপ্লবিক হলেও আমাদের অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল সমাজে এ রকম দৃষ্টান্ত বিরল নয়। মাইকেল মধুসূদনের প্রথম প্রেম ছিল রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ যুবতীর সঙ্গে। সাত বছরের দাম্পত্য জীবন কাটিয়ে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে, তারপর বিয়ে করেছিলেন এমিলিয়া আঁরিয়েতা নামের এক ফরাসি রমণীকে।

কবি নজরুলের জীবনের প্রথম নারী ছিলেন নার্গিস। কিন্তু একটি রাতও কাটানোর আগে শেষ হয় তাঁদের দাম্পত্য জীবন। তারপরের প্রেম ফজিলাতুন্নেসা। রানু সোম, কানন দেবী—এঁদের সঙ্গে সত্যিকার প্রেমের সম্পর্ক বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। শেষাবধি পরিণয়ে রূপ পেয়েছিল প্রমীলা সেনগুপ্তার সঙ্গে নজরুলের প্রণয়।  

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মার্গারিট এবং জীবনের পরবর্তী পর্বে স্বাতীর কথা বাংলাভাষী পাঠকদের অনেকেরই জানা। হুমায়ূন আহমেদে আর গুলতেকিন এবং তারপর শাওনের সঙ্গে প্রেম ও বিয়ের কথা জানেন না, এমন মানুষ বাংলাদেশে খুব কমই আছে। উড়নচণ্ডী কবি আবুল হাসান আর সুরাইয়া খানমের পবিত্র প্রেম ছিল কবির প্রতি কবির মুগ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। আর অপূর্ণ প্রেমের নায়িকা হেলেনকে ভালোবেসেই একটা পুরো জীবন নিঃসঙ্গ কাটিয়ে গেছেন কবি হেলাল হাফিজ। 

কবি-লেখকদের জীবনে অপূর্ণ প্রেম বা বিরহের যন্ত্রণাই কি তাঁদের সৃষ্টির প্রসববেদনা হয়ে ওঠে? এ রকম ধারণার কোনো ভিত্তি আদৌ আছে কি না, সেটি গবেষণাসাপেক্ষ। তবে যে রবীন্দ্রনাথ ‘যুগল প্রেমের স্রোতে নিখিলের সুখ’ দেখতে পান, তিনিই আবার লেখেন, ‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র এক ন র দ র জ বন বছর র ম জ বন র হয় ছ ল ত হয় ছ ত রপর হওয় র র বয়স শ বছর প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ