সুরা ইয়াসিন পবিত্র কোরআনের ৩৬তম সুরা। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এর ৫ রুকু, ৮৩ আয়াত। প্রথম দুটি অক্ষর থেকে এই সুরাটির নাম। মহানবী (সা.) এই সুরাকে পবিত্র কোরআনের হৃৎপিণ্ড বলে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর একত্ব ও মহানবী (সা.)-এর রিসালাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অংশীবাদের সমালোচনা, পৌত্তলিকদের অমরতা, অবিশ্বাসীদের কূটতর্কের উল্লেখ করে ইসলামের সত্যতা ও কিয়ামতের পুনরুত্থানের বর্ণনা রয়েছে। মহানবী (সা.
শান্তিপূর্ণ মৃত্যুর জন্য এ সুরাটি অনেকে পড়ে থাকেন। এ সুরা আমল করার মধ্যে রয়েছে প্রকৃত পূণ্য। সুরার শুরুতে আল্লাহ রাসুল (সা.) রিসালাতের সত্যতার ব্যাপারে কোরআনে শপথ করেছেন। এরপর কুরাইশ কাফেরের আলোচনা করা হয়েছে, যারা কুফর ও গোমরাহ করত, তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি। এরপর এক জনপদের আলোচনা করা হয়েছে, যারা একে একে তিনজন নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চেয়েছ। আল্লাহ সেই জনপদের হেদায়েতের জন্য নবী পাঠানো সত্ত্বেও তারা হেদায়েতের পথে চলেনি। তারা একে একে তিনজন নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। তখন এক ব্যক্তি দৌড়ে সে সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে আসেন। মুফাসসিররা বলেন, তাঁর নাম ছিল হাবিবে নাজ্জার। তিনি বলেন, নবীদের পীড়ন করলে আল্লাহর আজাব নেমে আসতে পারে। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে সতর্ক করে তাদের নবীদের অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। এর পর সবার সামনে নিজের ইমান আনার ঘোষণা দিলে সবাই তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে হত্যা করে। মৃত্যুর পর তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন।
আরও পড়ুনসুরা আহকাফের সারকথা২৮ নভেম্বর ২০২৩আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাতের নেয়ামত প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাওয়ার পর তাঁর মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে আসে, আল্লাহ যে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমাকে সম্মানিত ও সৌভাগ্যবান করেছেন, আমার সম্প্রদায় যদি তা জানত! (তাফসিরে ইবনে কাসির)
আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ব এবং সৃষ্টির বিষয় কোরআনে উল্লেখ হয়েছে। বৃষ্টি ঝরিয়ে মাটিকে সতেজ রাখা, দিন–রাত ও চন্দ্র-সূর্যের অস্তিত্ব, সমুদ্রে চলাচলরত জাহাজ ও নৌকা ইত্যাদি জাগতিক সচলতা হিসেবে আল্লাহ্ যেসব নিয়ামত দেয়েছেন, তার বিবরণ এতে রয়েছে। এ সুরার বিষয়বস্তু: মৃত্যুর পর পুনরুত্থান। এ সুরায় বলা হয়েছে, ‘আমি মৃতকে জীবিত করি আর লিখে রাখি ওরা যা পাঠায় ও ওদের যে পায়ের চিহ্ন রেখে যায়। এক সুস্পস্ট গ্রন্থে আমি সব সংরক্ষণ করে রেখেছি।’ (আয়াত: ১২)
নবীদের প্রতি যারা ইমান এনেছে এবং নবীদের যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চেয়েছে—উভয় দলের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন এবং তাদের প্রতিদানও এতে বর্ণনা করা হয়েছে। যুক্তি দিয়ে এতে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের বর্ণনা করা হয়েছে। সুরা ইয়াসিনে রয়েছে মোমিন ও কাফিরদের প্রতি প্রতিদানের কথা এবং জাগতিক নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করে আল্লাহ যে একত্ব ও অদ্বিতীয় তার নিশ্চয়তা বিধান।
আরও পড়ুনরুমির মুদিদোকানি ও তোতা পাখির গল্প২৮ নভেম্বর ২০২৩যে রাসুলদের প্রতি ইমান আনে এবং তাদের সত্যায়ন করে, সে স্বজাতিকে আল্লাহর পথে আহ্বান করে এবং জীবনে-মরণে তাদের কল্যাণ কামনা করে। বিশ্বাসীরা আরেক বিশ্বাসীতে সহায়তা করে। একে অপরের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়।
বিশ্বজগতের সৃষ্টি, বিন্যাস ও শৃঙ্খলা অবিশ্বাস্য সূক্ষ্ম ও নিখুঁত। এর উদাহরণ অগণিত। এমন সময় কিয়ামত এসে হানা দেবে, যখন মানুষ বাজারে কেনাকাটার মতো দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যস্ত থাকবে। কোরআন থেকে কেবল জীবিতরাই উপকৃত হতে পারে।
শিঙায় দুটি ফুৎকারের কথা আল্লাহ উল্লেখ করেছেন: প্রথম ফুৎকারে পৃথিবীর সবাই ভীত-প্রকম্পিত হবে, সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আল্লাহ যাদের ইচ্ছা করেন, তারা ছাড়া সবাই মারা যাবে।
আল্লাহ বলেন, ‘আর যেদিন শিঙায় ফুৎকার দেওয়া হবে, সেদিন আসমানমণ্ডলী ও জমিনের সবাই ভীত-বিহ্বল হয়ে পড়বে, তবে আল্লাহ যাদের চাইবেন তারা ব্যতীত এবং সকলেই তাঁর নিকট আসবে বিনীত অবস্থায়। আর (কিয়ামতের দিন) শিঙায় ফুৎকার দেওয়া হবে, তখন যাদের আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তারা ব্যতীত আসমানমণ্ডলী ও জমিনের সবাই।’
আরও পড়ুনজান্নাতের সুসংবাদ২৭ নভেম্বর ২০২৩এ সুরায় রয়েছে রাসুল হিসেবে মুহাম্মদ (সা.) সত্যতা এবং তাঁকে পাঠানোর উদ্দেশ্য। মানুষের সমস্ত কর্ম ও কর্মের প্রভাব এতে লেখা রয়েছে। অতীতে অনেকেই রাসুলদেরও প্রত্যাখ্যান করেছে, কিন্তু পুনরুত্থান ও বিচার অনিবার্য। মানুষের কল্যাণে চাঁদ ও সূর্যের জন্য আল্লাহ কক্ষপথ ও অক্ষপথ নির্ধারণ করেছেন। কিয়ামত সংঘটিত হবে একটি প্রচণ্ড শব্দে।
দ্বিতীয়বার সিঙায় ফুঁ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পুনরুত্থিত হবে। মানুষের পার্থিব জীবনের কর্মকাণ্ডের ন্যায্য বিচার করা হবে। সেদিন পূর্ণবানদের থেকে পাপীদের আলাদা করা হবে। কারণ শয়তান সম্পর্কে মানুষকে দুনিয়াতেই সতর্ক করা হয়েছিল। পাপীদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও সেদিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
আরও পড়ুনসুরা লোকমানের উপদেশগুলো২৬ নভেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ য কর ছ ন র জন য ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে বাসদ কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান, আটক ২২
ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সিলেট কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ২২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে নগরের আম্বরখানাস্থ বাসদ কার্যালয় থেকে তাদের আটক করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বাসদ নেতারা অভিযোগ করেছেন, সকালে নিয়মিত পাঠচক্র চলাকালে হঠাৎ পুলিশ কার্যালয় ঘেরাও করে নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা দিল শিবির
বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে এগিয়ে নিতে সিকৃবি উপাচার্যের অঙ্গীকার
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আজ (শনিবার) ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা নগরে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছিল। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে অভিযোগের সত্যতা মিললে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। গ্রেপ্তারদের নাম পরবর্তীতে জানানো হবে।’’
বাসদের সিলেট জেলা সভাপতি আবু জাফর বলেন, ‘‘ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ (শনিবার) চৌহাট্টা থেকে আমাদের পূর্বঘোষিত ‘ভুখা মিছিল’ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতে পুলিশ নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর আমরা কর্মসূচি স্থগিত করি। তবে সব শ্রমিককে তা জানানো সম্ভব হয়নি। সকালে শহীদ মিনার এলাকায় কয়েকজন শ্রমিক জড়ো হন। কিন্তু কার্যালয়ে শুধু পাঠচক্র চলছিল। সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২২ নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে।’’
এর আগে একই ইস্যুতে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) মধ্যরাতে নগরের আখালিয়া কালীবাড়ী এলাকার বাসা থেকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমনকেও আটক করে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকরা। ওই সময় আনোয়ার হোসেন সুমনসহ কয়েকজন বামঘরানার রাজনীতিকও আন্দোলনে অংশ নেন। আন্দোলনকারীরা ব্যাটারি রিকশা চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরে তা মেনে নিতে রবিবার (২ নভেম্বর) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। সেই আলটিমেটাম শেষ হওয়ার একদিন আগে সিপিবির সুমন ও বাসদের ২২ নেতাকর্মীকে আটক করা হলো।
শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, ‘‘ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে সংঘাতের আশঙ্কায় রবিবারের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’
গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সিলেট মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীর উদ্যোগে পরিচালিত এই অভিযানে শতাধিক রিকশা জব্দ ও একাধিক চার্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর থেকে নগরে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ঢাকা/নুর/বকুল