ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আলোচনায় বসেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা চালানোর পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে সরাসরি বৈঠক হচ্ছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর বৈঠকে দুই পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে যে দেশে যুদ্ধ চলছে, সেই ইউক্রেন বা তার মিত্র ইউরোপের দেশগুলোর কাউকে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আজকের বৈঠক সমঝোতা আলোচনা শুরু করার জন্য নয়। বরং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে রাশিয়া ‘আন্তরিক’ কি না সেটা বোঝার জন্য এই আলোচনায় বসা। আর রাশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে তারা।

বৈঠকে রাশিয়ার পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ ছাড়াও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকোভ রয়েছেন। তিনি এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর ৭২ বছর বয়সী সের্গেই লাভরভ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছেন।

অপরদিকে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ উপস্থিত রয়েছেন।

আলোচনার টেবিলে আয়োজক দেশ সৌদি আরবের পক্ষে উপস্থিত আছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল–সৌদ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসায়েদ বিন মোহাম্মদ আল–আইবান।

মার্কো রুবিওর সঙ্গে সৌদি আরব সফরে থাকা বিবিসির যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরবিষয়ক প্রতিনিধি টম বেটম্যান জানিয়েছেন, শুরুতে সাংবাদিকেরা প্রায় এক মিনিটের মতো দুই দেশের প্রতিনিধিদের ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন। এ সময় তাঁরা চুপচাপ বসেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ কিছু নোট লিখছিলেন।

সাংবাদিক টম বেটম্যান খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, সৌদি আরবের প্রতিনিধিরা শুধু স্বাগত বক্তব্য দেবেন। তারপর তাঁরা দুই দেশের প্রতিনিধিদের আলোচনার সুযোগ করে দিয়ে ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসবেন।

টম বেটম্যান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে প্রশ্ন করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র কি ইউক্রেনকে পাশে ঠেলে দিচ্ছে? এবং রাশিয়াকে কোন কোন বিষয়ে ছাড় দিতে বলা হবে?

এই দুই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি মার্কো রুবিও।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র ইউক র ন ব ষয়ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ