বড় প্রত্যাশা নিয়ে নারীদের ঢাকা লিগ
Published: 18th, February 2025 GMT
মাঝে সোনালী রঙের ট্রফি। দুই পাশে দাঁড়িয়ে দেশের ৯ নারী ক্রিকেটার। নারীদের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের অফিসিয়াল ট্রফি উন্মোচনে হাজির হয়েছিলেন ৯ ক্লাবের ৯ অধিনায়ক। একাডেমি ভবনে ট্রফি উন্মোচনের আগে মিরপুরের সবুজ গালিচাতেও বসেছিলেন তারা। যেখানে মধ্যমনি হয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। কেননা দল পাল্টে তার ঠিকানা হয়েছে নতুন ক্লাব শেলটেক ক্রিকেট একাডেমি।
মিরপুরে লম্বা সময় ধরে নারীদের ঢাকা লিগের খেলা হচ্ছে না। এবার সেই সুযোগটি পেয়েছেন নিগার সুলতানারা। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) নতুন আসরের উদ্বোধনী দিনে মিরপুরে মাঠে নামবে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও শেলটেক ক্রিকেট একাডেমি। এদিন আরো দুইটি ম্যাচ হবে বিকেএসপি ও ইউল্যাবে। বিকেএসপিতে আবাহনীর প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ পুলিশ ক্রিকেট ক্লাব। ইউল্যাবে খেলবে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি ও গুলশান ইয়ুথ ক্রিকেট ক্লাব। এছাড়া টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করছে বিকেএসপি, বাংলাদেশ আনসার এবং কলাবাগান ক্রীড়া চক্র।
এবারের প্রিমিয়ার লিগকে ঘিরে বড় প্রত্যাশা ক্রিকেটারদের। প্রথমত, যথাসময়ে লিগ আয়োজন করায় বোর্ডকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তারা। দ্বিতীয়ত, তাদের প্রত্যাশা ভালো বলে, স্পোর্টিং উইকেটে প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ম্যাচ খেলার। তৃতীয়ত, এই লিগ থেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে আসা এবং চতুর্থত, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সাম্ভাব্য প্রস্তুতি নিশ্চিত করা।
আরো পড়ুন:
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ধারাভাষ্য প্যানেলে তারকার ছড়াছড়ি, আছেন এক বাংলাদেশি
আয়োজক পাকিস্তানের শিকল ভাঙার গান
নিগার সুলতানার কণ্ঠে ফুটে উঠে সব, ‘‘এবার দল কমেছে, তবে দলগুলি অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। অন্তত চার-পাঁচটি দল বেশ শক্তিশালী হয়েছে। কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলার জায়গা হবে ক্রিকেটারদের জন্য। জাতীয় দলের দুয়ার সবসময় সবার জন্য খোলা, যারাই ভালো করবেন, তারাই আসবেন। স্থায়ী কিছু নেই। প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্য এটি তাই চ্যালেঞ্জ। সবাই তো ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন করেন। অনেকে বিভিন্ন একাডেমিতে নিজে খরচ করে অনুশীলন করে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এই টুর্নামেন্ট খেলতে আসেন। তাদের জন্য এটি বড় সুযোগ নিজেদেরকে মেলে ধরার।”
“সামনে যেহেতু আমাদের কোয়ালিফায়ার আছে, এর আগে এই টুর্নামেন্ট আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কদিন আগে আমরা চার দিনের একটি ক্যাম্প করেছি। যে ক্রিকেটাররা সেখানে ছিল, বেশির ভাগই বিভিন্ন ক্লাবের ক্রিকেটার। সেখানেও এভাবে সবাইকে বলা হয়েছে যে, এই টুর্নামেন্ট (ঢাকা লিগ) যেন আমরা সেই ভিত্তিতেই খেলি, যেভাবে আমরা নিজেদের দেখতে চাই কোয়ালিফায়ারে। এখানে যদি আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, সেটির প্রভাব কোয়ালিফায়ারে পড়বে।”-
যোগ করেন নিগার সুলতানা। পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে হবে এই প্রতিযোগিতা। খেলা শুরু হবে সকাল ১০টায়।
ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য এক ড ম
এছাড়াও পড়ুন:
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
নিয়োগপত্র নেই। এ কারণে চাকরির নিশ্চয়তাও নেই। দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র। নেই কর্ম ঘণ্টার হিসাব। তবে রয়েছে মজুরিবৈষম্য ও জীবনের ঝুঁকি। এ চিত্র খুলনার বরফকলে কর্মরত বরফ শ্রমিকদের।
অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত বরফকলের শ্রমিকেরা জানেন না মে দিবসের অর্থ। তারা শুধু এটুকু জানেন, কাজ থাকলে মজুরি পাবেন, অন্যথায় জুটবে না কিছু। খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, শিপইয়ার্ড ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বরফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ঝুঁকি ও বৈষম্যের এই চিত্র।
সরেজমিনে জানা গেছে, লবণ পানি এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংমিশ্রণে বরফের প্রতিটি ক্যান তৈরি হয়। এ কাজে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়াও অধিকাংশ সময় হাত-পা ভিজে ঠান্ডা থাকায় ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। এর বাইরে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এখানকার শ্রমিকেরা। পাতলা বরফে অনেক সময় হাত-পা কেটে যায়। কিন্তু মালিক বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের অ্যাপ্রোন বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন না। তবে দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
আরো পড়ুন:
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, নিউমার্কেট, শিপইয়ার্ড, রায়েরমহল এবং রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি বরফকল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসায় সর্বাধিক বরফকল রয়েছে। এসব কলে গড়ে দশ জন হিসেবে দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।
রূপসার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করেন মোহাম্মদ রাসেল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি হলেও পরিবার নিয়ে রূপসার জাবুসা এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বরফকলে কাজ করছেন তিনি। রাসেল জানান, তাদের মাসিক বেতন নেই। নেই নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র। মূলত উৎপাদনের উপর প্রতি পিস বরফের ক্যান অনুযায়ী ১২ টাকা হারে মজুরি পান। নামমাত্র এ মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার ঠিকমতো চলে না।
‘‘তিন বছর আগে নির্ধারণ করা মজুরি এখনো চলছে। লোকসানের অজুহাতে মালিকপক্ষ মজুরি বাড়াতে চান না। তাদের মতো শ্রমিকদের কোন বেতন-বোনাস নেই। নো ওয়ার্ক, নো পে অর্থাৎ কাজ থাকলে মজুরি আছে কাজ না থাকলে নেই। মালিকদের এ সিদ্ধান্ত না মানলে চাকরিও থাকে না।’’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন রাসেল হোসেন।
একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গড়ে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু মাসিক খাবার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা চলে যায়।’’
তবে জাকির হোসেন ব্যাচেলর হওয়ায় কারখানার মধ্যেই থাকেন। বিয়ের পর এ কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।
বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১-এ অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মোঃ সেলিম শেখ। তার জন্ম নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা হলেও কর্মসংস্থানের কারণে রুপসার বাগমারা গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বয়স ৮৪। ২০ বছর বয়স থেকেই বরফ কারখানার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে হেলপার হিসেবে ২৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে মাসিক ১৫ হাজার টাকা পান। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করতে হয়। তবে সবসময় উৎপাদন না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা কারখানায় থাকতে হয়। ছুটি পান না।
‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি কখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হননি বলে জানান তিনি।
‘মায়ের দোয়া আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজে’র শ্রমিক জাকারিয়া হাওলাদার বলেন, ‘‘চার বছর বরফকলে কাজ করছি। চাকরির ভবিষ্যৎ নেই। শ্রম দিতে পারলে মজুরি হয়, না হলে হয় না। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেন না মালিকপক্ষ। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তারা আমলে নেন না।’’
একই এলাকার ‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করছেন মোঃ মুন্না গাজী ও মোঃ হাসান শেখ। তারা নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুজনেই মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।
‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’র ম্যানেজার আশিকুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীন। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার মাঝেমধ্যেই লিক হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৩২টি আইস উৎপাদনের ক্যানের প্লান্ট রয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। ছয়জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান তিনি।
‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ- ২'র ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বরফের মূল ক্রেতা চিংড়ি ও সাদা মাছের ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে গ্রীষ্ম মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ও দোকানে শরবত বিক্রেতারাও কারখানা থেকে বরফ কিনে নেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের ৬ মাস চাহিদা থাকে এবং কিছুটা লাভের মুখ দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমের ছয় মাস বরফের চাহিদা কম থাকে। তখন কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিয়ে লোকসান গুণতে হয়।’’
জামাল উদ্দিন স্বীকার করেন কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা এড়াতে কোন সরঞ্জাম নেই। তবে অপারেটরদের অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঝুঁকি প্রতিরোধে মাক্স সরবরাহ করা হয়।
‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১'র মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ-উল-জান্নাত সৈকত বলেন, ‘‘ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। কখনো লাভ, কখনো লোকসান এভাবেই চলছে। গত বছর কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’’
তবে লাভ হলে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে শ্রমিকদের সংগঠন রূপসা বেড়িবাঁধ হ্যান্ডলিং শ্রমজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিপন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বরফকলের ৪০ জন শ্রমিক তাদের ইউনিয়নের সদস্য। বিগত দেড় বছর আগে মজুরির সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে দুই একজন শ্রমিক অভিযোগ করলে ইউনিয়নের মাধ্যমে সেটির সমাধান করে দেন তারা। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না।’’
বরফকলের শ্রমিকদের নিয়ে তারা মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তারা//