সাংগঠনিক আলোচনা, গান-গল্পে সুহৃদদের আনন্দময় দিন
Published: 23rd, February 2025 GMT
মায়েদের বাজনা থামলে বল কোথায়, শিশু ও বাবাদের ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ আর অতিথিদের জন্য ভাগ্য পরীক্ষাসহ নানা ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং র্যাফেল ড্রতে পুরস্কার পাওয়ার আনন্দে দারুণ এক উৎসবময় দিন কাটিয়েছেন ঈশ্বরদীর শতাধিক সুহৃদ ও তাদের পরিবার।
শনিবার দিনভর ঈশ্বরদীর পাকশীতে রূপপুর রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে ‘সুহৃদ উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের উদ্বোধন করেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী জামিল আখতার এলাহী।
এ সময় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন– রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মাহ্বুবুর রহমান পলাশ, ঈশ্বরদী পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমদাদুল হক আমান, ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ, পাকশী রেলওয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা ইমরুল কায়েস পারভেজ, পাকশী বিপিএড কলেজের অধ্যক্ষ আখতার আনজাম হোসেন ডন, বিনা পয়সার পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা তাহেরুল ইসলাম, ঈশ্বরদী সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের সহসভাপতি জাহিদুল আলম সনু, আবুল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রসুল, সুহৃদ সমাবেশের সাবেক সভাপতি শেখ আমান উল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান আল-আমিন, ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ।
সমকালের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি সেলিম সরদার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমন্বয় করেন স্বর্ণকলি বিদ্যাসদনের পরিচালক মনিরুল ইসলাম বাবু। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন– সুহৃদ সমাবেশের সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার তৌফিক আলম সোহেল, আয়োজনের সমন্বয় করেন সাংগঠনিক সম্পাদক দুর্জয় ইসলাম, লিমন মণ্ডল ও প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক হাসান চৌধুরী।
সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ঈশ্বরদী ইউনিটের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল আলীম বিশ্বাস মিঠুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল ইসলামের সমন্বয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন– প্রবীন নারী রেজিয়া বেগম, নারী উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক নাসরিন আক্তার শেলী, ফরিদা খাতুন মিমি, কৃষিবিদ অনুজ পারভেজ পাভেল, ব্যবসায়ী মতিউর রহমান সন্টু প্রমুখ। এ আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে ‘কলের গান’-এর পরিচালক মানিক মণ্ডলের অনবদ্য সংগীত পরিবেশনায় মুখরিত ছিল এ সুহৃদ উৎসব। দিনভর এ আনন্দ আয়োজনে সুহৃদ উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, তানজিরুল আলম মিটো, মাসুদুল আলম, দেলোয়ার হোসেন ডাবলু, পিয়ারুল ইসলাম, আলিউজ্জামান রুহেল, সুমন আলী, সুহৃদ পরিতোষ পাল, সজীবুর রহমান, হিটু খন্দকার, রাকিবুল ইসলাম রূপম, খায়রুল ইসলাম সবুজ, সাবিত হাসান মুহিমসহ অন্যরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন। বিকেলে প্রধান অতিথিসহ অন্যরা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও র্যাফেল ড্রতে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প বন
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।