সংস্কার ও নির্বাচন, দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে করে জমিয়ত ও এবি পার্টি
Published: 23rd, February 2025 GMT
প্রয়োজনীয় সংস্কার ও যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন—দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও এবি পার্টি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দল দুটির নেতারা এ বিষয়ে একমত হন।
রোববার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। জমিয়তের সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.
বৈঠক সম্পর্কে জমিয়ত নেতা আবদুর রব ইউসুফী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত এখন দেশ কীভাবে চলছে, আগামী সরকার কেমন হওয়া উচিত, এসব বিষয়ে আমরা মতবিনিময় করেছি। আমরা বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করেছি, বিএনপির সঙ্গেও আমরা মতবিনিময় করেছি।’
এদিকে বৈঠকের পর এক বিজ্ঞপ্তিতে এবি পার্টি জানিয়েছে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমন্ত্রণে এবি পার্টির প্রতিনিধিদল দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে। বৈঠকে দুই দলের নেতারা বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন—এ দুটি বিষয়ের প্রতি সমান গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, বিষয় দুটির মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে গ্রহণযোগ্য সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ছাড়া আসন্ন রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধন এবং জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানানো হয় বৈঠকে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
হামাস থেকে হিজবুল্লাহ: পরাজিত মিত্ররা কি খামেনির পতনের পূর্বাভাস?
ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান এই হামলা একটি ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহের সর্বশেষ রূপ, যার সূচনা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাসের ইসরায়েলে হামলার মাধ্যমে। প্রতিটি ধাপই একদিকে তেহরানকে ক্রমাগত দুর্বল করেছে এবং অন্যদিকে অন্তত সামরিকভাবে ইসরায়েলকে আরো শক্তিশালী করেছে। এই প্রতিটি ধাপ যদি না ঘটত, তাহলে শুক্রবার ইসরায়েলের সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে নতুন এই হামলা চালানো সম্ভব হতো কিনা, তা ভাবা কঠিন।
প্রথম ধাপ ছিল গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান। এই অভিযান রক্তক্ষয়ী এবং ব্যয়বহুল, বিশেষত ফিলিস্তিনিদের জন্য। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হামাস এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, তারা আর ইসরায়েলি নাগরিকদের জন্য তাৎক্ষণিক বড় কোনো হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়নি।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
আরো পড়ুন:
ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে?
ইরানকে পরমাণু আলোচনার প্রস্তাব জার্মানি-ফ্রান্স-যুক্তরাজ্যের
হামাস মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধ জোটের অংশ। এই জোট ইরান গত এক দশকে গড়ে তুলেছিল আঞ্চলিকভাবে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য এবং ইসরায়েলকে তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলা চালাতে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে। ফলে হামাসকে দুর্বল করে দেওয়ার ঘটনাটির ব্যাপক আঞ্চলিক প্রভাব পড়ে, যার সুবিধা নিচ্ছে ইসরায়েল।
এরপর, গত বছরের এপ্রিলে ইসরায়েল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি দূতাবাস কমপ্লেক্সে বোমা হামলা চালায়, যাতে সাতজন নিহত হন। এর জবাবে ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়; যদিও সেটি ছিল অকার্যকর ড্রোন হামলা। এতদিন ধরে ছায়াযুদ্ধ, গুপ্তহত্যা এবং তৃতীয় পক্ষীয় হামলার মাধ্যমে চলা ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব এবার বড় আকারে প্রকাশ্য যুদ্ধের রূপ নিল।
শরতের দিকে, যখন হামাস অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন ইসরায়েল তাদের দৃষ্টি দেয় হিজবুল্লাহর দিকে। লেবাননভিত্তিক ও ইরান-সমর্থিত সংগঠন হিজবুল্লাহ প্রতিরোধ জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ বলে বিশ্বাস করা হয়।
সেপ্টেম্বরে হিজবুল্লাহর পুরো শীর্ষ নেতৃত্বকে নির্মূল করে ইসরায়েল, সেই সঙ্গে তাদের ভয়ংকর মিসাইল ভাণ্ডারের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস করে দেয়। এরপর তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হেজবুল্লাহর ঘাঁটিতে অভিযান চালায়, যেখানে তারা বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েনি। এমনকি হিজবুল্লাহ-সমর্থকরাও স্বীকার করে যে, তারা একটি বড় ধরনের পরাজয়ের শিকার হয়েছে।
পুনরায় ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরেকটি দুর্বল বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বড় একটি অংশ ধ্বংস করে দেয়, যার ফলে গত শুক্রবার ব্যাপক হামলার পথ সুগম হয়।
সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, হঠাৎ করে হিজবুল্লাহর দুর্বল হয়ে পড়া অর্থাৎ তারা সিরিয়ার বাশার-আল আসাদ সরকারকে রক্ষা করতে পারেনি; যা ইরানের আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। যখন বিদ্রোহীরা সেখানে আক্রমণ শুরু করে, হিজবুল্লাহ পাশে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে ডিসেম্বরে সিরিয়ার বাশারের পতনের মধ্য দিয়ে তেহরান-দামেস্কের বহু দশকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অবসান ঘটে। এর ফলে ইরান-সমর্থিত প্রতিরোধ জোট আরো ভেঙে পড়ে, সিরিয়ায় ইরানি মিলিশিয়ারা একা হয়ে পড়ে এবং ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের দুর্বল লক্ষ্যবস্তুতে সহজেই পৌঁছাতে পারে।
সিরিয়া ও ইরাকে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা বুঝে ফেলে যে, মুখে মুখে ইসরায়েলকে আক্রমণের হুমকি দেওয়া আর বাস্তবে আক্রমণ করা এক নয়; এটি হবে ভুল পদক্ষেপ। ফলে প্রতিরোধ জোটের একমাত্র সদস্য হিসেবে ইয়েমেনের হুথিরাই ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় থেকে যায়। তারা লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে বাধা দিতে থাকে, কিন্তু যেসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তারা তেল আবিবের দিকে ছুড়ছিল, তা কোনো কৌশলগত ক্ষতি করতে সক্ষম হয়নি।
এই বছরের শুরুর বসন্তকাল নাগাদ, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যখন দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাদের মিত্র মিলিশিয়াদের (প্রক্সিদের) ওপর ছেড়ে দেন, তখন সেটি একটি ভয়াবহ ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে হতে শুরু করে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সাময়িক সুযোগকে কাজে লাগাতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন এবং বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
এই অভিযান এপ্রিলের মধ্যে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সময়সীমা পেরিয়ে যায়। তবে এই সময়সীমা যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই নির্ধারিত ছিল না; এটি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্ধারিত ৬০ দিনের সময়সীমা; যার মধ্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তেহরানের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে হতো। ইসরায়েল দাবি করে আসছিল, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এই সময়সীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে।
শুক্রবার ইরানিদের উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি আশা করেন ইরানে ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান তোমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ সুগম করবে।
ইসরায়েল হয়তো ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব-পূর্ব যুগে ফিরে যেতে চাইছে না, যখন ইরান ছিল ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তবুও ইসরায়েলি পরিকল্পনাকারীরা যে লক্ষ্যমাত্রা বেছে নিয়েছেন, তা বিপ্লব-পরবর্তী যে শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেবে, সেটিকে কার্যত ভেঙে দিতে পারে।
এর একটি বড় কারণ হলো, আজো ইরানের নেতৃত্বে সেই প্রজন্মের মানুষরাই রয়েছেন, যারা ইরানের শাহ পতনের পরপরই অথবা তারও আগে তাদের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন।
শুক্রবারের প্রথম হামলায় নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ইরানের ইসলামি বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর প্রবীণ কর্মকর্তা, যারা ১৯৮০ সালে গঠিত এই বাহিনীর প্রথম দিককার সদস্য ছিলেন। এই বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল কট্টরপন্থি ধর্মীয় নেতাদের নতুন শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করার জন্য এবং পরে এটি ইরানের বিপ্লবী আদর্শের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। নিহতদের অনেকেই ছিলেন ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের অভিজ্ঞ যোদ্ধা, যে যুদ্ধকে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন বর্তমান শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি।
প্রথম ধাক্কায় নিহতদের মধ্যে একজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও ছিলেন, যিনি রক্ষী বাহিনীর সদস্য ছিলেন। আঘাতের লক্ষ্য হওয়া আরেকজন হলেন আলী শামখানি, যিনি খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা। তিনি ছিলেন ১৯৭০-এর দশকে তৎকালীন শাহবিরোধী ইসলামী আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ গোপন কর্মী। পরে তিনি একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন। খামেনি নিজেও ১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ খোমেনির উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন, তবে তার ইসলামী আন্দোলনের পথচলা শুরু হয় আরো আগে, ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে।
এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইরান যে আবার ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রে পরিণত হবে, তা খুবই অসম্ভব। তবে যা প্রায় নিশ্চিত মনে হচ্ছে, তা হলো যেসব পুরনো নেতা শাহকে উৎখাত করেছিলেন এবং গত চার দশক ধরে বিপ্লবী শাসনব্যবস্থার নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন, তাদের ক্ষমতা এবার মারাত্মকভাবে, হয়তো চিরতরের জন্যই দুর্বল হয়ে পড়বে।
জেসন বার্ক দ্য গার্ডিয়ানের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক সংবাদদাতা।
[লেখক পরিচিতি: জেসন বার্ক দ্য গার্ডিয়ানের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক সংবাদদাতা। গত ২৫ বছর ধরে একজন বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে তিনি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কভার করেছেন। তিনি ডজনখানেক সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন, পাশাপাশি আরো বহু বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি চারটি বইয়ের লেখক, যার মধ্যে সর্বশেষ বইটির নাম দি নিউ থ্রেট]
ঢাকা/রাসেল