মান্নাকে নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা
Published: 25th, February 2025 GMT
বগুড়ার শিবগঞ্জে নাগরিক ঐক্য ও বিএনপির মধ্যে সৃষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা বয়কট করেছে বিএনপি। এর সঙ্গে সায় দিয়ে জামায়াত নেতারাও সভা থেকে বের হয়ে যান। শিবগঞ্জ উপজেলা যুবদল সহসভাপতি রনি মিয়ার বাড়িতে ককটেল হামলার প্রতিবাদে ও হামলার সুষ্টু বিচারের দাবিতে সভা বয়কট করেন তারা। সেই সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্নাকে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম।
মঙ্গলবার শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা আহ্বান করা হয়। সেখানে বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম, জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহাদুতজামানসহ বিএনপি ও জামায়াতের নেতা এবং ১২ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় মীর শাহে আলম বলেন, মাহামুদুর রহমান মান্না একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একেকবার একেক দল করেন। তিনি ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের তাঁর দলে নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত করছেন। মান্না বদলি করবেন এই ভয়ে ইউএনও এবং থানার ওসি রনির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করছেন না।
রনির বাড়িতে হামলার জন্য নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীদের দায়ী করে মীর শাহে আলম বলেন, হামলার ঘটনার উপযুক্ত বিচার না হওয়া পর্যন্ত মান্নাকে শিবগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে প্রশাসনকে বিএনপি ও জামায়াত কোন প্রকার সহায়তা করবে না, প্রশাসনের কোনো সভায় আর যোগও দেবে না। তিনি বলেন, নাগরিক ঐক্যের কোনো কর্মসূচি আর শিবগঞ্জে করতে দেওয়া হবে না। নাগরিক ঐক্যের যাকেই পাওয়া যাবে তাকেই ধরে থানায় সোপর্দ করা হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রনির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। উপজেলা প্রশাসনের সভাগুলোতে এরপর থেকে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া অন্য দলের কাউকে আমন্ত্রণ না জানাতে ইউএনর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মীর শাহে আলম বক্তব্য শেষ করেই সভায় উপস্থিত সকলকে নিয়ে সভা বয়কট করে বের হয়ে যান।
এর আগে ২০ ফেব্রয়ারি রাতে শিবগঞ্জ উপজেলা চত্বরের শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় উপজেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ ঘটনার জন্য নাগরিক ঐক্য বিএনপিকে দায়ী করে। এ ঘটনায় নাগরিক ঐক্য শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সরকার বাদী হয়ে বিএনপি সভাপতি মীর শাহে আলমকে ১ নম্বর ও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাবকে ২ নম্বর আসামি করে ৩০ জনের নামে একটি অভিযোগ করেন শিবগঞ্জ থানায়। অভিযোগটি এখনও এজাহার হিসেবে রেকর্ড করেনি শিবগঞ্জ থানা।
এ ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি রনি মিয়ার বাড়িতে ককটেল হামলা ও রনিসহ কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এ ঘটনার জন্য বিএনপির তরফ থেকে নাগরিক ঐক্যকে দায়ী করা হয়। হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিএনপির পক্ষ থেকে সড়ক অবরোধ করে। এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নাগরিক ঐক্যের জেলার অন্যতম সমন্বয়ক সাইদুর রহমান সাগর বলেন, বিএনপির লোকেরা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহীদুলের ওপর হামলা ও ছুরিকাঘাত করে। তারাই আবার এ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নিজেদের কর্মীর বাড়িতে সাজানো হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা মামলা দিতে গেলে এখনও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ।
বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম বলেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্নার হুকুমেই যুবদল নেতা রনির বাড়ি এবং তার ওপর হামলা হয়েছে। আর নাগরিক ঐক্যের শহীদুলের ওপর অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে তাদের দলের লোকেরাই হামলা করেছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন, এখনও কোনো পক্ষ থেকেই মামলা করেনি। দুটি ঘটনাই তদন্ত করা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ শ বগঞ জ উপজ ল দ র রহম ন ব এনপ র ন ত কর ম বল ন ঘটন র এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা