মিউনিখ বিমানবন্দরে ধর্মঘটের ঘোষণা
Published: 26th, February 2025 GMT
জার্মানির মিউনিখ বিমানবন্দরে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন ভ্যার্ডি। আজ বৃহস্পতিবার এ ধর্মঘট শুরু হওয়ার কথা। এতে অন্তত ১ হাজার ৬০০টি ফ্লাইট বাতিল করা হতে পারে। গত মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর মিউনিখ বিমানবন্দর থেকে বৃহস্পতি ও শুক্রবারের তালিকাভুক্ত সব ফ্লাইটের সময়সূচি পরিবর্তন শুরু হয়।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে কোলন-বন ও ডুসেলডর্ফ বিমানবন্দরেও কর্মবিরতি পালন করেছে ভ্যার্ডি।
বিমানবন্দরের কর্মীদের কর্মপরিবেশের মানোন্নয়ন, ৮ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত তিন দিন বেতনসহ ছুটির দাবি জানিয়ে আসছে ভ্যার্ডি। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনায় বসলেও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।
এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষগুলো জানিয়েছে, ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা দুই দিনের ধর্মঘটের কারণে তাদের প্রায় ১ হাজার ৬০০টি ফ্লাইট বাতিল করা হতে পারে। এ জন্য যাত্রীদের সংশ্লিষ্ট ফ্লাইট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মিউনিখ বিমানবন্দরটি জার্মানির অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর। বিশেষ করে জার্মানির রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী লুফথানসা এয়ারলাইনসের কেন্দ্র হিসেবে বিমানবন্দরটি ব্যবহার করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল ইট
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্যের খাঁচা আদৌ কি আমরা ভাঙতে চাই
বাংলাদেশে বৈষম্য বলতে আমরা সাধারণত আয়, সুযোগ বা সামাজিক মর্যাদার পার্থক্য বুঝি। কিন্তু এই বৈষম্যের সবচেয়ে গভীর ও নীরব রূপটি লুকিয়ে আছে আমাদের চিন্তায়, সংস্কৃতিতে ও দৈনন্দিন আচরণে। এটিকে বলা যায় অন্তর্নিহিত বা মানসিক বৈষম্য।
চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয়ে গেছে। প্রায় ১০০ জনের মধ্য থেকে মাত্র ৫ জনকে ডাকা হয়েছে মৌখিক পরীক্ষার জন্য। তাঁদের একজন নারী। লিখিত পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকেও তিনি এগিয়ে।
ইন্টারভিউ বোর্ডে আমি ছাড়া সবাই নারী। তাঁদের প্রায় সবাই উপমহাদেশের প্রখ্যাত জেন্ডারবিশেষজ্ঞ প্রয়াত কমলা ভাসিনের দীক্ষাপ্রাপ্ত। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, চারজন পুরুষ প্রার্থীকে যেসব প্রশ্ন করা হয়নি, নারী প্রার্থীকে সেসব প্রশ্ন করা হচ্ছে।
প্রার্থীকে সক্ষমতা যাচাইমূলক প্রশ্নের বদলে তাঁর পারিবারিক দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন করার প্রতিযোগিতায় সবাই মেতে উঠলেন। তাঁর বিয়ের পরিকল্পনা, বিয়ের প্রথম বছরে সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা–অনিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন করা হলো। মা-বাবা মফস্সলে থাকেন, তাঁরা ঢাকায় এসে মেয়ের সঙ্গে থাকতে চাইবেন কি না; ভবিষ্যৎ স্বামীর যদি বদলির চাকরি হয়, তাহলে তিনি এই চাকরির হ্যাপা সামলাতে পারবেন কি না, তা–ও বাদ গেল না। এ রকম ঘটনা এক–দুবার নয়, বারবার ঘটেছে।
নারীর প্রতি বৈষম্য না করার প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আমরা যতই অংশগ্রহণ করি না কেন, আমাদের মনমগজে গেঁথে থাকা বৈষম্যের লেজ সোজা হওয়ার নয়। এই সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া বা সোশ্যালাইজেশন প্রসেস আমাদের মগজে-মেজাজে গজানো বৈষম্যের চারায় সার–পানি দিতে থাকে। তাতে গাছটি তরতর করে বড় হতে থাকে।
এই বিষবৃক্ষ এতই ‘পয়মন্ত’ যে সেটি চিন্তায়, ভাবনায়, মননে সংস্কৃতির পরতে পরতে বৈষম্যকে বসিয়ে দেয়। ফলে মনের অজান্তেই আমরা বৈষম্যমূলক আচরণ করি। একেই মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অবচেতন পক্ষপাত বা আনকনসাস বায়াস। সেখান থেকেই চাকরির সাক্ষাৎকারে নারী প্রার্থীকে বিব্রতকর প্রশ্ন করা হয়।
যাঁরা ফার্মগেট থেকে বাসে উঠে এদিক-ওদিক যাতায়াত করেন, তাঁরা লক্ষ করবেন, স্কুল-কলেজে যাওয়ার সময় শুধু ড্রেস দেখার পর বাসের চালকের সহকারী বা কন্ডাক্টরের গলার স্বর ও কথা বলার ভঙ্গি বদলে যায়। বাজারে কদর বেশি, এমন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আচরণ আর কম কদরের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আচরণের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য চোখে পড়ে।
আমাদের স্কুলেও দেখেছি, ঈদের ছুটির পর অনেকেই স্কুলড্রেসের বদলে ঈদের জামা পরে আসত। সেদিন শিক্ষকদের চোখেমুখে একধরনের অচেতন পক্ষপাতের ছাপ পড়তই। আমাদের অবচেতন মন কীভাবে যেন শিখিয়ে দিয়েছিল, পুরুষেরা পরিবারের কর্তা হবে, মেয়েদের দায়িত্ব সীমিত।
ভিন্ন ধর্ম, জাতি বা পেশার মানুষকে মনে মনে অনুৎকৃষ্ট বা দ্বিতীয় শ্রেণির ভাবার কাজটাও শুরু হয় অবচেতন পক্ষপাত থেকে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাছে বাড়ি ভাড়া না দেওয়া, ফ্ল্যাট বিক্রি না করা, শুভেচ্ছা বিনিময় থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি নানা কর্মকাণ্ড দেখা যায়।
বৈষম্য মগজে বাসা বাঁধে কীভাবেআমাদের লোকগাথা, রূপকথা, প্রচলিত বাগ্ধারা, শ্লোক—সর্বত্রই হয় বৈষম্যকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে অথবা বৈষম্যের প্রচার–প্রসার করার চেষ্টা করা হয়েছে। ‘গরিবের আবার মান-ইজ্জত কী’—এসব কথা আমাদের মনের গভীরে আটকে থাকা এক অবচেতন বৈষম্যমূলক মনোভাবের আলামত।
আমাদের প্রবাদ-প্রবচন ও লোককথাও এই বৈষম্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। কিছু দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক।
১. লিঙ্গবৈষম্য
মেয়েদের স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল ও অক্ষম হিসেবে তুলে ধরার জন্য বলা হয়, ‘মেয়ে মানুষের মাথায় বুদ্ধি কম।’ নিজের গর্ভে বা ঔরসে জন্ম নেওয়া মেয়েটিকে লক্ষ্মী বললেও তাকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে বলি, ‘মেয়ে মানেই পরের ধন।’ মেয়েকে পরিবারের সম্পদ নয়, বোঝা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। মেয়েদের একটা ‘লক্ষণরেখার’ মধ্যে আটকে রাখার ইচ্ছা থেকে বলি, ‘নারীর স্থান রান্নাঘরে’। এটা মেয়েদের ঘরোয়া কাজেই সীমাবদ্ধ রাখার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে ও রাস্তাঘাটে নানা বৈষম্যের শিকার হয়