কিছু কিছু ব্যক্তি–গোষ্ঠী ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল
Published: 27th, February 2025 GMT
দেশে গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করতে একটি মহল চক্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেছেন, অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির বর্ধিত সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল প্রাঙ্গণে শুরু হয় বিএনপির এই সভা। সভা রাতে শেষ হবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়েছি। শেখ হাসিনাকে তাড়িয়েছি। এখন অপেক্ষা করছি জনগণের যে আশা–আকাঙ্ক্ষা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের যে স্বপ্ন, আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রূপান্তরিত করার, সেই গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করার জন্য, তাকে বাধা প্রধান করার জন্য একটি মহল, একটি গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে চক্রান্ত শুরু করেছে। শেখ হাসিনা বিদেশে গিয়ে তিনি সেই চেষ্টা করছেন। বাইরে থেকেও চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থায়ও কিছু কিছু ব্যক্তি–গোষ্ঠী ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ক্রমান্বয়ে শিক্ষাঙ্গনগুলো, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার কোনো পরিবেশ থাকছে না। আরও মারাত্মকভাবে দেখছি, এই ভূখণ্ডে অবিভক্ত বাংলার যেসব বরেণ্য বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, যাঁদের পূর্ব বাংলাদেশে জন্ম হয়েছে, তাঁদের নাম বাদ দিয়ে এখন কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করছে।’
বর্ধিত সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে ভারতে যাওয়া পরে মানুষ আশা করেছিল দেশের অবস্থার পরিবর্তন হবে। অতিদ্রুত জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে দেখছি, এখনো সেই লক্ষ্যে আমরা সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা পাচ্ছি না।’
দলের নেতা-কর্মীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ১৫ বছর ধরে দলের নেতা-কর্মীরা যে লড়াই করে আসছে, সেই লড়াইকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। এমন কিছু কাজ করা যাবে না, যাতে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। যাত্রা ব্যাহত হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ত কর র ন ত কর অবস থ ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়
নেতা–কর্মীদের সতর্ক করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, আমরা যদি সতর্ক না থাকি তাহলে এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে আইনজীবীদের ভূমিকা: আলোচনা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব।
সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুব সতর্ক থাকতে হবে। আমরা কিন্তু খুব একটা সূক্ষ্ম তারের ওপর দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু চারদিকে আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন, চারদিকে একটু চোখ–কান খোলা রাখেন। দেখবেন কতগুলো ঘটনা ঘটছে, যে ঘটনাগুলোর আলামত ভালো না। এদিকে একটু লক্ষ রাখতে হবে।’
দেশের মানুষ সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন কী, সেটি বোঝে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই সংস্কার হোক। সাধারণ মানুষ কিন্তু চায় যে একটা নির্বাচন হোক, সে নির্বাচন থেকে নতুন সরকার আসুক। যে সরকার তারা নির্বাচিত করতে পারবে, যে প্রতিনিধি তারা নির্বাচন করবে। তাদের কথা বলার লোক তারা পার্লামেন্টে (সংসদ) নিতে চায়। এটা খুব সহজ হিসাব।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এই যে বিষয়গুলো তৈরি করা হচ্ছে কেন? এই বিতর্কগুলো তৈরি করা হচ্ছে কেন? এর পেছনে আপনি যদি মনে করেন এমনি এমনি করা হচ্ছে, তা নয়। এর পেছনে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। সেই উদ্দেশ্যটা সেই এক–এগারোতে ফিরে যাবেন, সেই উদ্দেশ্যটা, সেই একেবারে ফিরে চলে যাবেন এরশাদ সাহেবের ক্ষমতা দখল করা পর্যন্ত। এ দেশে গণতন্ত্রকে চলতে দিতে চায় না। একটা মহল আছে যারা বারবার গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানও এই কাজটা করেছেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) প্রবর্তন করে।’
বিএনপি লিবারেল ডেমোক্রেসি (উদার গণতন্ত্র) চায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের দেশের জনগণ তার ভোটের অধিকার ফিরে পাক। সে ভোট দিক। ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি সে নির্বাচিত করুক। পার্লামেন্ট (সংসদ) তৈরি হোক, সরকার তৈরি হোক। তারা চালাবে পাঁচ বছর। সেই পাঁচ বছরে যদি তারা ব্যর্থ হয়, না পারে, আবার নির্বাচন হবে। নির্বাচনে জনতা তাদের বাদ দিয়ে দেবে, অন্য দলকে দেবে। তাই তো? এই জায়গাটায় যেতে এত তর্ক–বিতর্ক কেন?
নির্বাচনের জন্য আর দেরি করা অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের জন্য সঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শুরুতে যে ডেডলাইন (সময়সীমা), এর পরে হলে আপনি যে সম্মান নিয়ে এসেছেন, সমগ্র বিশ্বে আপনার যে সম্মান, সেই সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’
সভায় প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা গত এক বছরে বাংলাদেশের জন–আকাঙ্ক্ষার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন এবং পুরা জিনিসটাই আপনি সংস্কারের নামে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে এত বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন; শেষ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আমার ব্যক্তিগত অপিনিয়ন (মতামত), সংস্কারের নামে অপসংস্কার কুসংস্কার তৈরি করে নিয়ে যাবেন। একটু থামেন, আপনার তো এত ম্যান্ডেট নাই। সবকিছু নিয়েই আপনি বসে পড়েছেন। জুলাই সনদ হবে, জুলাই ঘোষণা হবে, সবই ঠিক। আর কত সময় নেবেন?
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে কিন্তু খুব বেশি সময় নাই। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর কোনো ব্যত্যয় যেন না ঘটে। আইনজীবীসহ সারা দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে আবার রাজপথের আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য আমাদেরকে বাধ্য করবেন না।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঐকমত্য দেখি না, নির্বাচনের রোডম্যাপ দেখি না। গণতন্ত্রের পথে হাঁটুন, আইনজীবীরা কালো কোট পরে মাঠে নামলে কেউ থাকতে পারে না। নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে বিদায়ের চিন্তা করুন।’ সরকারে থাকা দুই তরুণ উপদেষ্টাকে যেন তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, সেই আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার প্রতি জানান তিনি।
সভার শুরুতেই একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মো. কামাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।