Samakal:
2025-07-31@21:01:34 GMT

শেষ দিনে ফিরে দেখা

Published: 27th, February 2025 GMT

শেষ দিনে ফিরে দেখা

আজ পর্দা নামছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর। এবার মেলার প্রতিপাদ্য ছিল– ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। গণঅভ্যুত্থান-উত্তর এই বইমেলা নিয়ে পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় একরাশ হতাশা নিয়ে আজ শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়বেন প্রকাশকরা।

প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের বইমেলায় সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে কম বিক্রি। বলা যায়, গত বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ বিক্রি কম হয়েছে।
শেষ দিনে এসে চলুন ফিরে দেখি এবারের বইমেলা কতটা আলোচনার জন্ম দিল। গত নভেম্বরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা হওয়া নিয়ে একটা শঙ্কা তৈরি হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৬ নভেম্বর বাংলা একাডেমিকে চিঠি দিয়ে জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন করতে হবে। ১৩ নভেম্বর সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আশ্বাসে সেই শঙ্কা কেটে যায়।

গত ৯ জানুয়ারি মেলা পরিচালনা কমিটি কয়েকটি প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন বাতিল এবং স্টল ছোট করে দেয়। ‘সুবিচারপ্রত্যাশী প্রকাশকবৃন্দ’ ব্যানারে ক্ষুব্ধরা বাংলা একাডেমির কাছে চিঠি দিয়ে এর প্রতিকার চায়। পরে প্রকাশনীগুলোর স্টল, প্যাভিলিয়ন বরাদ্দে অদলবদল আনা হয়।
১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে বইমেলার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলেন ইসলামী যুব আন্দোলন পরিচয় দেওয়া একদল ব্যক্তি। তারা যুব সম্মেলনের জন্য উদ্যান ব্যবহারের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে জানান। এর পর কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা।

এত সব বাধা ডিঙিয়ে বইমেলা যথারীতি শুরু হয় ১ ফেব্রুয়ারি। ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম শিশুপ্রহরে সিসিমপুর না থাকায় শিশুদের মন খারাপ হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি তসলিমা নাসরিনের বই রাখায় মেলায় সব্যসাচীর স্টলে তৌহিদি জনতা চড়াও হয়। তারা স্টলটিতে গিয়ে প্রকাশককে ঘিরে ধরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রকাশক শতাব্দী ভবকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। বাংলা একাডেমি থেকে এ বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। তবে এ বিষয়ে আর কোনো আপডেট সংবাদ পাওয়া যায়নি।

১৫ ফেব্রুয়ারি স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার বিক্রি করায় একটি স্টল বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা তৈরি হয়। স্টল বন্ধ-সংক্রান্ত একটি চিঠি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে লেখা ছিল, ‘বেশ কিছু ইসলামিস্ট গ্রুপ’ স্টলটিতে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রিতে আপত্তি জানায়। পরে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘এই স্টলটি মেলায় নীতিমালা অনুযায়ী অনুমোদন নেয়নি। এ জন্য বন্ধ করা হয়েছে।’
কবি ও শিক্ষক সোহেল হাসান গালিবের একটি কবিতা ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়। তাঁর বিরুদ্ধে কবিতায় ‘নবীকে কটাক্ষ’ করার অভিযোগ ওঠে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো ও রিমান্ডে নেওয়া হয়। ‘আমার খুতবাগুলি’ নামে গালিবের বইটি উজান প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। বইমেলায় স্টলে হামলার শঙ্কায় চার দিন ধরে স্টলটি বন্ধ থাকে। ১৭ ফেব্রুয়ারি লেখক-প্রকাশকরা মেলায় মানববন্ধন করে গালিবের মুক্তির জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।

২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বেচাকেনা শুরু হওয়া মাত্র বৃষ্টি ও বাতাসে মেলাপ্রাঙ্গণ হয়ে পড়ে এলোমেলো। সাময়িক এই বৃষ্টিতে সেদিনের মতো মেলায় আর বিক্রি হয়নি বলে জানান প্রকাশকরা।
এ ছাড়া এবারের পরিবর্তিত পরিস্থিতির বেশ কিছু নতুন বিষয় মেলায় দর্শনার্থী ও পাঠককে আকর্ষণ করেছে। এর মধ্যে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্টল। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকা এই স্টলে গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক যত বই প্রকাশিত হয়েছে, তা পরিবেশিত ও বিক্রি করা হয়েছে। বিশাল খাতায় জুলাই স্মৃতিচারণ করার স্থানসহ জুলাইকেন্দ্রিক বিভিন্ন স্মারক চিহ্ন বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে ছিল ইনকিলাব মঞ্চ। এই স্টলে গণঅভ্যুত্থানের স্লোগান ও ছবিসংবলিত বিভিন্ন অলংকার, শাড়ি, পেইন্টিং বিক্রি করা হয়েছে। তরুণ-তরুণীর ভিড় এই স্টলে ছিল বেশি। এর পাশে দেবাশীষ চক্রবর্তীর জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার পোস্টারের ভিআর বিনামূল্যে প্রর্দশন, পোস্টার ও ভিউকার্ড প্যাকেজ বিক্রি করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের স্টলে থাকা আন্দোলনের সময়কার তথ্যচিত্র, ছবি ঘুরে ঘুরে দেখেন দর্শনার্থী। এ বছর ইসলামিক বইয়ের স্টলগুলো ছিল চোখে পড়ার মতো।
এবারের মেলাজুড়ে প্রতিটি প্রবেশ ও বাহির গেটে হকারদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ছিল পাঠক, দর্শনার্থী। মেলার শুরুর দিকে এর পরিমাণ কম থাকলেও পরে এদের দৌরাত্ম্য লাগামছাড়া হয়। টিএসসি প্রান্তে মেলার গেট দেখতে ছোটখাটো একটা বাণিজ্য মেলা বলে মনে হয়েছে।

এ বছর যেন লেখক খরায় ভুগেছে বইমেলা প্রাঙ্গণ। ইমদাদুল হক মিলন, সেলিনা হোসেন ও আনিসুল হক থেকে শুরু করে স্বনামধন্য লেখকদের দেখা যায়নি। সেজন্য পাঠকরা কিছুটা হতাশাবোধ করলেও আহমাদ মোস্তফা কামাল ও সাদাত হোসাইনকে দেখা গেছে মেলা প্রাঙ্গণে। প্রতি বছরের বাঁধা পাঠকরাও আসেননি। মূলত মব, সহিংসতা, আন্দোলন ও নিরাপত্তা শঙ্কায় মেলায় আসেননি অনেকে।
বই হাতে নিচ্ছেন, বইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ভিডিও  করছেন। এর পর বই রেখে চলে যাচ্ছেন। এই ছবি তোলার হিড়িক এ বছর ছিল প্রকট। 

নতুন বই
গতকাল মেলায় আসে ১৭৬টি নতুন বই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– আবদুল মজিদের সায়াহ্নের কবিতা (প্রিয় বাংলা), ওমর কায়সারের ক্ষুধা ও কপিলা (খড়িমাটি), হৃদয় মোহাম্মদ আলীর কোথাও আলো নেই (সাহিত্যদেশ) ও আলী ইমামের ডায়নোসরের দেশে (ডাংগুলী)।

মঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘একটি অভ্যুত্থানের জন্ম ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। কাজী মারুফের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম রনি। আলোচনায় অংশ নেন সৈয়দ নিজার।

রেজাউল করিম রনি বলেন, ইতিহাসে অনেক আন্দোলনকে গৌরবের সঙ্গে স্মরণ করা হয়। তেমনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান গোটা জাতির জন্য নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে।
সৈয়দ নিজার বলেন, স্বতঃস্ফূর্ততা ও কাঠামোগত দিক থেকে মিল থাকলেও অভ্যুত্থানের প্রথাগত ধারণার সঙ্গে চব্বিশের অভ্যুত্থানের ভিন্নতাও রয়েছে।
লেখক বলছি মঞ্চে আলোচনা করেন সায়ীদ আবুবকর,  মিতা আলী এবং  শিশুসাহিত্যিক জামসেদ ওয়াজেদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন মনজুর রহমান, রফিক হাসান ও জান্নাতুল ফেরদৌসী প্রমুখ।
সংগীত পরিবেশন করেন ছন্দা চক্রবর্তী, ইমরান খন্দকার, নাসরিন বেগম, আফসানা রুনা প্রমুখ।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল গণঅভ য ত থ ন প র ঙ গণ এক ড ম স টলট বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “জুলাই সনদ হতে হবে, জুলাই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। নির্বাচিত যে সরকার আসুক এই সদন বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা থাকবে।”  

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় গাজীপুরের রাজবাড়ি সড়কে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। 

নাহিদ ইসলাম বলেন, “৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র হতেই হবে। এর বিকল্প আমরা দেখতে চাই না। সরকার সনদের খসড়া প্রকাশ করেছে। জুলাই সনদ শুধু সংস্কার হলে হবে না, এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে ঐক্যমত হতে হবে।” 

আরো পড়ুন:

ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ

গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না: নাহিদ

তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, ৫ আগস্টের আগেই অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে পারবেন। আমরা সবাই মিলে আকাঙ্ক্ষিত গণঅভ্যুত্থানের একবছর উদযাপন করতে পারব।” 

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, কেন্দ্রীয় সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মুহিম, মো. মহসিন উদ্দিন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুরের সাবেক আহ্বায়ক নাবিল আল ওয়ালিদ।

এনসিপির পথসভাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন মোড়ে ও সমাবেশস্থলে বিপুল সংখ্যক  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাতে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হয়। রাজবাড়ীর সড়কে বন্ধ থাকে সব ধরনের যান চলাচল। 

এর আগে, এনপিপির কেন্দ্রীয় নেতরা টাঙ্গাইলের পথসভা শেষে গাজীপুরে কালিয়াকৈরে উপজেলা হয়ে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা যান। সেখানে বিকেলে পথসভা শেষে গাজীপুর শহরের রাজবাড়িতে আসেন তারা।

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
  • তিতুমীর কলেজে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী
  • হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না: নাহিদ 
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
  • নরসিংদীতে আজ এনসিপির পদযাত্রা 
  • এনসিপির অনুরোধে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করল ছাত্রদল
  • পাবিপ্রবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রজেক্ট শো
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের সংবর্ধনা দিল জাবি
  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ 
  • নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পথে নেমেছি: নাহিদ ইসলাম