স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে
Published: 2nd, March 2025 GMT
বাংলাদেশে রেকর্ডসংখ্যক রাজনৈতিক দল থাকা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক কাঠামো সংহত করা যায়নি। এর অন্যতম কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো বরাবর জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে যে নতুন দল গঠন করা হলো, তার মূল্যায়ন করতে হবে। এই দলের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রায় সবাই গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নতুন দলের নেতাদের সবাই বয়সে নবীন, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ও প্রাণশক্তিই তাঁদের প্রধান সম্বল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলের নেতারা বিভাজনের রাজনীতির বদলে ঐক্যের রাজনীতি, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ (দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র) প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন, ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলার অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন। ঘোষণাপত্রে নতুন ‘রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ মাধ্যমে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
তাঁদের বক্তব্য হলো, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্য ঘটেনি। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে জনগণের অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে হবে। রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ডে নেতৃত্ব নির্বাচনের পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় তুলে আনার কথাও বলা হয়েছে এতে।
আমরা যদি ইতিহাসে ফিরে তাকাই দেখব, এ দেশে যতগুলো গণ-আন্দোলন ও অভ্যুত্থান হয়েছে, তরুণেরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এ ক্ষেত্রে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। যখন প্রবীণ নেতৃত্ব ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, ছাত্ররা তা অমান্য করে জীবন দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। উনসত্তর ও নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানেও সামনের সারিতে ছিলেন এই তরুণেরা। যদিও এই দুই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতি তরুণদের হাতে ছিল না। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতারা যে তিন জোটের রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন, তা–ও তারা মান্য করেনি। যখন যাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারে সচেষ্ট থেকেছেন। তিনটি নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করায় কায়েম হয়েছিল ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা।
এই রাজনৈতিক বাস্তবতায় তরুণেরা যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলছেন, তা জনমনে নিশ্চয়ই আশা জাগাবে। নতুন দল যেসব কর্মসূচি ও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে, তার সবটার সঙ্গে সবাই একমত না-ও হতে পারেন। কিন্তু তাঁরা যে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার এবং মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ডে নেতৃত্ব তৈরির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন, তার সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই।
আমরা নতুন দলকে স্বাগত জানাই। তবে একই সঙ্গে তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে তখনই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল হবে, যখন পুরোনো রাজনীতির দুর্বলতা ও ক্ষতগুলো থেকে তাঁরা নিজেদের মুক্ত রাখতে পারবেন। অর্থায়নসহ দলের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে যেমন সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে, তেমনি নেতৃত্ব নির্বাচনও হতে হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বড় দুর্বলতা হলো তারা অগণতান্ত্রিক দল দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, নতুন দল সেই পথে হাঁটবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব র র জন ত কর ছ ন র বদল
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়াবেন না: টুকু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনে বাংলাদেশ রাহুমুক্ত হয়েছে। দয়া করে এটাকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সঙ্গে জড়াবেন না। একটি দেশের স্বাধীনতা একবারই হয়, দুবার নয়। সেই স্বাধীনতা আমাদের একটি মানচিত্র, পতাকা ও সংবিধান দিয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেলে জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তি ও বীর শহীদদের স্মরণে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘‘একটি দল জুলাই আন্দোলনকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা দাবি করছে। তাদের বলি, বাংলাদেশে রাজনীতি করলে দেশের স্বাধীনতা মানতে হবে। পাকিস্তান এই দেশের ওপর শোষণ ও নির্যাতন করেছে, এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। আপনারা স্বাধীনতার ট্রেনে উঠতে পারেননি, ট্রেন মিস করেছিলেন। সেটা আপনাদের ব্যর্থতা। এ জন্য কিন্তু ক্ষমাও চাননি।’’
আরো পড়ুন:
অনির্বাচিত সরকারে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে: আমীর খসরু
টাঙ্গাইল জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতিকে অব্যাহতি
তিনি বলেন, ‘‘জুলাইকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা দাবি করবেন না। জুলাই এমনি এমনি আসেনি। ঘরবাড়ি ছেড়ে, মাঠের মধ্যে ঘুমিয়ে, জেল খেটে, মামলা খেয়ে, নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে আন্দোলন-সংগ্রাম করার পর জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে।’’
টুকু আরো বলেন, ‘‘কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করছে। কিন্তু, জনগণ পিআর পদ্ধতি বোঝে না। বিএনপি নির্বাচনমুখী দল, আমরা নির্বাচন ও জনগণের রায়ে বিশ্বাস করি। তাই বিএনপি অতীতের মতো জনগণের ভোটেই ক্ষমতায় যেতে চায়।’’
ঢাকা/রাসেল/রাজীব