চট্টগ্রামের পানিসংকট কোনো নবীন সমস্যা নয়; তৎসত্ত্বেও এর সমাধানে সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয় না। প্রতিবছর রমজান মাসে নগরবাসী এই সমস্যার সম্মুখীন হন, অথচ কার্যকর সমাধানের অভাবে এই দুরবস্থা ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে।
আকবরশাহ, হালিশহর, ইপিজেড, আগ্রাবাদ, বায়েজিদ বোস্তামী, লালখান বাজার, বহদ্দারহাটসহ প্রায় ২০টি এলাকায় ওয়াসার পানি দুর্লভ হয়ে পড়েছে। এসব স্থলে পানিপ্রবাহ এক ঘণ্টার অধিক স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে নাগরিক জীবনে চরম দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছে।
ওয়াসার পরিসংখ্যান অনুসারে, চট্টগ্রাম শহরে দৈনিক পানি প্রয়োজন ৫৬ কোটি লিটার, অথচ উৎপাদনক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার মাত্র। বর্তমানে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিপ্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় উৎপাদন আরও হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে ঘাটতি নেমেছে ১১ কোটি লিটারে। রমজানের কারণে চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। অথচ ওয়াসার প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। প্রতিবছরের মতো ওয়াসা স্বল্পমেয়াদি কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তা নাগরিক দুর্দশা লাঘবের জন্য পর্যাপ্ত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
অথচ পানিসংকটের কারণে চট্টগ্রামের বহু পরিবারকে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে, যা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর অতিরিক্ত আর্থিক ভার আরোপ করছে। অনেকে সুদূর প্রান্ত থেকে পানি আহরণে বাধ্য হচ্ছেন, যা বিশেষত রমজান মাসে কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু ভবনে গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করা হলেও এতে বিদ্যুৎ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই সংকট নিরসনে ওয়াসার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আবশ্যক। প্রথমত, পানি শোধনাগারগুলোর উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। কর্ণফুলী ও মদুনাঘাট শোধনাগারের উৎপাদন বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত। দ্বিতীয়ত, গভীর নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধি করে বিকল্প সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তৃতীয়ত, সংকটাপন্ন এলাকাগুলোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্তসংখ্যক পানিবাহী যান সংযোজন অপরিহার্য। প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম একটি করে নিয়ন্ত্রণকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, যাতে সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হয়।
এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য ওয়াসার জরুরি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা কর্তব্য। মহানগরবাসী পানিপ্রাপ্তির মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। যথাযথ পরিকল্পনা ও সুচিন্তিত উদ্যোগ ব্যতিরেকে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা
রাবেয়া বেগম আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা থেকে পাবনার বেড়াগামী আলহামরা পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন। গন্তব্যের ২০ কিলোমিটার আগে পৌঁছার পর জানতে পারেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হয়ে পাবনার বাস যেতে পারবে না। শাহজাদপুর বাসস্ট্যান্ডের অনেক আগে তালগাছি এলাকায় সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাঁকে বেড়ায় পৌঁছাতে হয়।
পাবনা ও শাহজাদপুরের অনেক যাত্রীকে আজ রোববার দিনভর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই দুর্ভোগের কারণ, পাবনা ও শাহজাদপুর বাসমালিকদের পুরোনো দ্বন্দ্ব। আজ সকাল থেকে দুই এলাকার বাস চলাচল আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। পাবনা থেকে শাহজাদপুর হয়ে ঢাকা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে কোনো বাস চলাচল করছে না। একইভাবে শাহজাদপুর থেকেও পাবনার দিকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।
বাসমালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে চলতি বছরেই অন্তত চারবার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। আর গত সাত-আট বছরে বাস চলাচল বন্ধ ছিল অন্তত ৩০ বার। একবার বাস চলাচল বন্ধ হলে তা চালু হতে সময় লেগেছে পাঁচ দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত।
বাসমালিক ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি ও পাবনার নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রুট ও সময়সূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। পাঁচ-ছয় দিন আগে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির লোকজন শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির মালিকানাধীন নবীনবরণ পরিবহন নামের একটি বাস আটকায়। এর প্রতিবাদে শাহজাদপুরের বাসমালিকেরা নগরবাড়ী সমিতির মালিকানাধীন বাসগুলো চলাচলে বাধা দেন। ঘটনার জেরে গতকাল শনিবার পাবনার দাশুড়িয়ায় নবীনবরণ পরিবহনের একটি বাস আটকে রাখে পাবনা বাসমালিক সমিতি। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আজ সকালে শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে পাবনার সড়ক দিয়েও শাহজাদপুরের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাবনা ও শাহজাদপুর উভয় সমিতির দুই শতাধিক বাস আজ সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকেরাও।
এদিকে পাবনা থেকে বেড়া হয়ে ঢাকাগামী বেশির ভাগ পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। দু–একটি বাসের কাউন্টার খোলা থাকলেও সেসব বাস বেড়া থেকে যাত্রী নিয়ে কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে অথবা নাটোরের বনপাড়া হয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।
পাবনা এক্সপ্রেস পরিবহনের বেড়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘শাহজাদপুর হয়ে পাবনার কোনো বাস যেতে না পারায় আমাদের বাসগুলো হয় ফেরি হয়ে, না হয় নাটোরের বনপাড়া ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।’
শাহজাদপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাবনা ও নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতি আমাদের বাস চলাচলে বাধা দেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনি উভয় মালিক সমিতিরই ক্ষতি হচ্ছে। দুই পক্ষ আলোচনায় বসলে আশা করি সমাধানের পথ পাওয়া যাবে।’
পাবনা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোমিন মোল্লা বলেন, ‘শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির লোকজন প্রায় এক মাস ধরে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির বাসগুলো শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে যেতে দিচ্ছিল না। আজ থেকে তারা পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দিল। শাহজাদপুর মালিক সমিতি ছোটখাট যেকোনো ব্যাপার হলেই তাদের এলাকার ওপর দিয়ে পাবনার বাস চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।’