রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টরকে ‘ইন্ধনদাতা’ বলার প্রতিবাদে মানববন্ধন–বিক্ষোভ
Published: 4th, March 2025 GMT
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলামকে ‘হামলাকারী’ ও ‘ইন্ধনদাতা’ বলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার মূল আসামিদের অনেককে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। যাঁরা হেলমেট মাথায় দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিলেন, ঘটনার সময় উসকানি দিয়েছিলেন, তাঁরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তখন প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করা শরিফুল ইসলামকে ‘হামলাকারী’ বানানোর অপতৎপরতা চালাচ্ছে একটি পক্ষ।
মানববন্ধনে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী খোকন ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ২ মার্চ জানিয়েছেন, আবু সাঈদ হত্যায় শরিফুল ইসলামসহ অনেকে ইন্ধন জুগিয়েছেন। তাঁরা তাঁর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছেন। শরিফুল ইসলাম প্রক্টর থাকাকালে তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হতে পারেন; কিন্তু হত্যাকারী নন। শরিফুল ইসলামকে ‘হামলাকারী’ বানিয়ে মামলাটি অন্য খাতে নেওয়া হচ্ছে কি না, তা নিয়ে তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে জেবিন বলেন, শহীদ আবু সাঈদ হত্যার আট মাস হতে চলেছে। কিন্তু মামলার অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পুলিশের নির্দেশদাতা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। একইভাবে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এখন প্রক্টরকে প্রধান আসামি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি করেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে মারা যান। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই আন্দোলনকারীদের কর্মসূচির সময় ঘটনাস্থলে আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পুলিশ। এ সময় এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন সাঈদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।
গত ১৮ নভেম্বর আবু সাঈদ হত্যা মামলায় তৎকালীন প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ১৯ নভেম্বর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। গত ২ মার্চ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে শরিফুল ইসলামসহ চারজনকে আগামী ৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেন আদালত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রব জ ঞ ন ব ভ গ
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে হত্যা মামলার বাদীকে হুমকি, স্বজনদের মানববন্ধন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মাকসুদুল হাসান জনি হত্যা মামলার বাদী ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে নিহতের পিতা শুক্কর আলী ও স্ত্রী ইভা আক্তার এ অভিযোগ করেন। এসময় মামলার পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানান তারা।
নিহতের স্ত্রী ইভা আক্তার বলেন, আমাকে যারা অল্প বয়সে বিধবা ও ৩ বছরের প্রতিবন্ধী ছেলে জুনায়েদকে এতিম করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। আসামিরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে এখন আবার হুমকিও দিচ্ছে।
মামলার বাদী নিহতের পিতা শুক্কুর আলী বলেন, আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মামলার এজাহার নামীয় ৩ জন আসামি গ্রেফতার হলেও মূল পরিকল্পনাকারী মহাসিন ভূঁইয়াসহ ৪ জন এখনো গ্রেফতার হয়নি।
তারা পলাতক থেকে তাদের লোকজনের মাধ্যমে মিমাংসা করে মামলা তুলে দেয়ার জন্য আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে। এতে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।
নিহতের মা মাজেদা বেগম বলেন, আমার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আমি ও ছেলের বউ ইভা তার সন্ধান করতে নূরুল আনোয়ারের নির্মাণাধীন তাকওয়া ভবনের সামনে গেলে নিরাপত্তারক্ষী আলমগীর আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি।
অথচ সে জানতো আমার ছেলেকে ওই ভবনের একটি কক্ষে হত্যা করেছে। লাশ ভনের লিফটের হাউজের নর্দমা পানিতে রয়েছে। আমি এ পাষাণদের ফাঁসি চাই। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নিহতের ভাই জুয়েল, ফাহিম ও বোন সুমাইয়া।
মানববন্ধনে নিহতের স্বজন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেন, ফজলুল হক মাদবর, লিটন, মাসুদ, জসিম, আব্দুল মজিদ, সুমন, শাহিন, আসলাম ও বাধনসহ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের ৩ দিন পর গত মাসের ১৮ জুলাই দুপুরে নিমাইকাশারী এলাকার নির্মাণাধীন তাকওয়া ভবনের লিফটের জন্য রাখা ফাঁকা জায়গায় জমে থাকা নর্দমা পানি থেকে জনির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ১৯ তারিখে নিহতের পিতা শুক্কুর আলী বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
মামলার এজাহার নামীয় আসামি আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন ও আকাশ হোসেনকে গ্রেফতার করে র্যাব ও পুলিশ।
গ্রেফতারের পর তারা পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন বলে নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম। গ্রেফতাররা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে বলে জানা গেছে।