ওয়ান-ইলেভেনে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মার্কিন সরকারের নীতি এবং ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভূমিকায় বিরাট ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত ড্যানিলোভিচ আজ শনিবার সকালে এক আলোচনায় এ মন্তব্য করেছেন।

‘নতুন ভোরের পথে ঢাকা: গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন গতিপথ’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) মিলনায়তনে ওই আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তৃতা করেন সংস্থার চেয়ারম্যান মুনিরা খান। এরপর সঞ্চালকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাবেক ওই দুই মার্কিন কূটনীতিক। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অতিথিদের প্রশ্নের উত্তর দেন তাঁরা।

আলোচনায় সাবেক দুই মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের দেশের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতি নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বের ভূমিকা এবং নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আলোকপাত করেন।

উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, ‘আমরা একটি ছোট সংগঠন গঠন করি এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে সচেতন করার জন্য কাজ করি। গত পাঁচ বছরে আমরা অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছি এবং এই উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। বিশেষ করে গত ১০ বছরে ভিসা না পাওয়ায় আমি বাংলাদেশ সফর করতে পারিনি।’

জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘(মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে) আমি প্রথম স্বীকার করছি ২০০৭-০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিরাট ভুল করেছিল। তবে রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস কিংবা আমার সহকর্মীরা এক–এগারো ঘটাননি। আমি মনে করি না, কোনো গোপন “কফি গ্রুপ” সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাংলাদেশের জনগণকে বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছিল। ’৯০ সালে গণতন্ত্রের যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা থেকে বিচ্যুতি ঘটেছিল। বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে হলে মৌলিক সংস্কার দরকার। তখন জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ারদের মতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ কী চায়, তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। আমরা নাগরিক সমাজ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু আমরা সেনাবাহিনীর কথাই বেশি শুনেছি। সম্ভবত সে কারণেই গণতন্ত্রের উত্তরণ নিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি।’

সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে নিজেদের ভুলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ঢাকায় তিনবার কূটনীতিকের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে জন ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘আমাদের দ্বিতীয় ভুলটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র দেশ হিসেবে এবং ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস হিসেবে আমরাও নির্বাচনের সময়সীমার ওপরই বেশি জোর দিয়েছিলাম। নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের দীর্ঘ সময়ের রায় (ম্যান্ডেট) ছাড়া কোনো সরকার পরিচালিত হতে পারে না। আর নির্বাচিত সরকারকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত। ওই সময় মৌলিক কিছু সংস্কার সাধনের প্রয়োজন ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংস্কারের এজেন্ডাও এগিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু একটা সময়ে এসে যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নির্বাচনের আয়োজন করে দায়িত্ব হস্তান্তরই তাদের প্রধান অগ্রাধিকার।’ তিনি বলেন, ‘এরপরেই তখনকার সরকার রাজনৈতিক দলের ওপর থেকে তাদের সব ধরনের প্রভাব হারিয়ে ফেলল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়াটা হয়েছিল গোপনে। তাই আমাদের জানা সম্ভব ছিল না সাবেক প্রধানমন্ত্রী কোন শর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আপসরফা করেছিলেন। আমরা এর কোনো পক্ষ ছিলাম না।  তখন আমাদের ধারণা হয়েছিল যে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছিল এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবেন।’ সাবেক মার্কিন কূটনীতিক আরও বলেন, ‘ইতিহাস ভুল প্রমাণ করল। আমাদের যেটা বলা হয়েছিল তার ভিত্তিতে ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। আমরা দেখলাম ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অধোগতি ঘটতে থাকল, যার চূড়ান্ত রূপ দেখলাম ২০২৪ সালের নির্বাচনে।’

জন ড্যানিলোভিচ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখন সংস্কারের বিষয়ে যা করছে, তা হলে ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণের প্রতিফলন। এখনকার জটিল পরিস্থিতিতে করছে রাজনৈতিক দলগুলোকে যুক্ত করে বেসামরিক সরকারের গুরুত্ব তুলে ধরে বর্তমান সরকার সংস্কারের বিষয়ে যেভাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র ক ন ক টন ত ক গণতন ত র র ক সরক র র র জন ত ক হয় ছ ল র র জন আম দ র সমর থ

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ 

‘দেশের বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল কারিগর’ সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারে সোপর্দকরণ এবং উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালতে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ বিচারকদের অপসারণের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বিক্ষোভ মিছিল ও আইনজীবী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির বার ভবনের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে আদালত পাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

বিক্ষোভ মিছিল থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শ্লোগান দেয় আইনজীবী ফোরামের নেতারা। 

এসময়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ছিলেন ফ্যাসিস শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর। দেশের বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল কারিগর খায়রুল হক। তার কারনেই দেশের আইনের শাসন কলঙ্কিত হয়েছিল।

অবিলম্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে  গ্রেপ্তার ও বিচারে সোপর্দকরণ করার দাবি জানাচ্ছি। পাশপাশি সমাবেশ থেকে উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালতে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ বিচারকদের অপসারণের দাবিও জানান তারা। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক এড. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এড. কাজী আঃ গাফফারের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ মিছিল ও আইনজীবী সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. আঃ বারী ভূঁইয়া, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. সরকার হুমায়ূন কবির, সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান, জেলা আইনজীবী ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. খোরশেদ আলম মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. আবুল কালাম আজাদ জাকির, জেলা আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এড. বেনজির আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক এড. জহিরুল হক, এড. মেহেবুব আরেফিন শিমু, এড. কায়সার আলম চৌধুরী টুটুল, এড. আসমা হেলেন বিথি, এড. শামসুন্নুর বাঁধন, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আজিজুল হক হান্টু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এড. একেএম ওমর ফারুক নয়ন, সিনিয়র আইনজীবী এড. রফিক আহমেদ, এড. বেনজীর আহমেদ, এড. বোরহান উদ্দিন সরকার, এড. হাফিজুর রহমান মোল্লা, এড.সৈয়দ মশিউর রহমান শাহিন, এড. রকিবুল হাসান শিমুল, এড. মানিক মিয়া, এড. আলম চৌধুরী, এড. আজিজুর রহমান মোল্লা, এড. ফয়সাল আরেফিন টুটুল, এড. জাহিদ হাসান মুক্তা, এড.একেএম মাহমুদুল হক আলমগীর, এড. নজরুল ইসলাম মাসুম, এড. সিদ্দিকুর রহমান, এড. সুমন মিয়া, এড. হৃদয়, এড.এসএম সায়েম রানা, এড. মাঈনউদ্দিন রেজা, এড. সালাউদ্দীন ভুঁইয়া সবুজ, এড. ফজলুর রহমান ফাহিম, এড. সুমন মিয়া, এড. মাসুদা আক্তার ,এড. লিজা, এড. আসমা হেলেন বিথী, এড. রাসেল মিয়া, এড. আমিনুল ইসলাম, এড. শাহআলম শামীম, এড. জামান মিয়া, এড. কাজী সুমন, এড.আবুল কালাম আজাদ, এড. আদনান মোল্লা, এড.আবু রায়হান, এড. আশরাফুল বারী ভুঁইয়া, এড. খোরশেদ আলমসহ প্রমূখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোদির যুদ্ধপ্রবণ মনোভাবের নিন্দা ইমরান খানের
  • ‘মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর দেওয়া স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকট’
  • ‘মানবিক করিডর’ প্রদানের বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন: জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
  • মিয়ানমারকে মানবিক করিডর দেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই: সিপিবি
  • সাবেক বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ 
  • কোনো মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
  • কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
  • কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু
  • জনগণ গণতন্ত্রের জন‍্য রক্ত দিয়েছে, কোনো মহামানবের প্রতিষ্ঠার জন্য নয়: আমীর খসরু
  • নতুন কর্মসূচি দিল যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদল