গত বছর থেকেই বাজারে নতুন নতুন মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। আয় ততটা বাড়ছে না। মুদ্রাস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। একজন গার্মেন্টস শ্রমিক, একজন রিকশাচালক, একজন ছোট দোকানদার–তারা প্রতিদিন কষ্ট করে উপার্জন করলেও, বাজার থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন না।
এর মধ্যে এসেছে পবিত্র রমজান মাস। ইবাদত ও সংযমের এই মাসে স্বস্তি পাওয়ার বদলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সংকট বেড়েছে। তিনবেলা খাবারের জোগান নিম্নবিত্ত অনেক পরিবারের জন্য প্রতিদিনকার চ্যালেঞ্জ।  

ওদিকে ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্থবিরতা, অসামঞ্জস্যপূর্ণ শুল্ক ও কর ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং সার্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় সব ব্যবসার মালিকদের জন্য শ্রমিকদের সময়মতো মজুরি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, বেতন বৃদ্ধি তো পরের কথা। এই পরিস্থিতিতে শুধু কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক সরকারই সক্রিয় পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণকে উদ্ধার করতে পারে। 
এই মূল্যস্ফীতি যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশ এমনিতেই একটি নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে– ডলার সংকট, বৈদেশিক ঋণের চাপ এবং বেকারত্বের উচ্চহার পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। তার ওপর যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এভাবে চলতে থাকে, তবে এটি শুধু দরিদ্র মানুষকেই নয়; পুরো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে ফেলবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে সাফল্য দেখাতে পারছে না কেন? আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বড় বড় অর্থনৈতিক তত্ত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও, দেশের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা স্থিতিশীল করে তুলতে বর্তমান সরকার সাফল্য দেখাতে পারছে না। একদিকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বাড়ছে, অন্যদিকে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই প্রশ্নও জরুরি, সরকার কি বাজার ও অর্থনীতি নিয়ে অস্থিতিশীলতার বিপদ অনুধাবন করতে পারছে? 
এটি ঠিক, বিভিন্ন সময়ে সরকারি সংস্থাগুলো বাজারে অভিযান চালিয়েছে। সেগুলোতে রাঘববোয়ালরা ধরা পড়েন না; ক্ষতিগ্রস্ত হন ছোট খুচরা বিক্রেতারা। এটি স্পষ্ট যে, বাজারে শক্তিশালী একটি মুনাফাখোর গোষ্ঠী রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো রাজনৈতিক সক্ষমতা এই সরকার এখনও সঞ্চয় করে উঠতে পারেনি। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছা কি রয়েছে? 
হতে পারে, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিকভাবে চর্চিত মুক্তবাজার ধারণার ওপর নির্ভর করছে–বাজারকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখা হবে এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এটি শুধু একটি তাত্ত্বিক নীতি, বাস্তব জীবনে কাজ করে না। যদি বাজারকে সম্পূর্ণ স্বাধীন হিসেবে ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করবেন এবং সাধারণ মানুষ এর শিকার হবে।
পরিস্থিতি উত্তরণে উচিত হবে অবিলম্বে ব্যবসায়ী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা। এই সংকট রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া সমাধান হওয়ার নয়। একইভাবে সরকারের উচিত ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় বসা। 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলাপ না করে বাজার নিয়ন্ত্রিত রাখার আশা বাংলাদেশের বাস্তবতায় বাতুলতা মাত্র। যেমন– মাত্র চার থেকে পাঁচটি বড় ব্যবসায়িক গ্রুপ ভোজ্যতেলসহ আমদানীকৃত নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। পণ্যের বাজারমূল্য বৃদ্ধির সমস্যা সমাধানে সরকারের এই ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করার কোনো উদ্যোগও চোখে পড়েনি।   
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা খুবই কঠিন। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারকে সাহসী ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু বড় বড় বক্তৃতা ও আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন করলেই যে সরকার সফল হয় না, বিগত সময়ে আমরা দেখেছি। কথা কম বলে, কার্যকরভাবে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা কমানোই সরকারের আসল দায়িত্ব।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে জনগণের ক্ষোভ ক্রমেই তীব্র হবে। এর আগেও আমরা দেখেছি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি জনগণের আন্দোলন ও বিক্ষোভের জন্ম দেয়। সরকার যদি ব্যর্থতার পরিচয় দিতে থাকে, তবে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। এখন যদি সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই ব্যর্থতার মাশুল অনেক ভারী হয়ে যেতে পারে। 
মনে রাখতে হবে, দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে স্টারলিংকের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার চেয়ে তাদের পরিবারের জন্য 
খাদ্যনিরাপত্তার নিশ্চয়তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আরাফাত আশওয়াদ ইসলাম: কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, গুলশান সোসাইটি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব যবস থ ব যবস য় র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”

আরো পড়ুন:

বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন 

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির 

রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”

বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”

শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।

তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”

দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”

সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
  • ভুল শুধরে জনগণের আস্থা ফেরানোর সুযোগ এই নির্বাচন: আইজিপি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
  • সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
  • সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করে