বন্দরে রাস্তা থেকে ডেকে নিয়ে ২০ বছরের এক যুবককে জোর পূর্বক বলাৎকারের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ভুক্তভোগী যুবকের মা বাদী হয়ে লম্পট সাঈদকে আসামী করে বন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন তিনি।

যার মামলা নং- ১৭(৩)২৫ ধারা- ৩৭৭ পেনাল কোড ১৮৬০। এর আগে গত শনিবার (৮ মার্চ) রাতে বন্দর থানার ২১ নং ওয়ার্ডের শাহীমসজিদ পল্লী বিদ্যুৎ রোডস্থ লম্পটের বসত ঘরে এ ঘটনাটি ঘটে।

মামলার তথ্য সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদিনী মেঝু ছেলে সরল প্রকৃতির যুবক। গত শনিবার রাতে বাদিনী  (২০) বছরের যুবক ছেলে তাদের ভাড়াটিয়া বাড়ি সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিল। ওই সময় একই এলাকার মঞ্জুর মহজনের লম্পট ছেলে সাঈদ রাস্তায় দাড়ানো থাকা বাদিনী ছেলেকে ডেকে তার বাসায় নিয়ে যায়।

ওই সময় লম্পট সাঈদ উক্ত যুবকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক যৌনসঙ্গম করে বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পরে ভিকটিম বিষয়টি তার পরিবারকে খুলে বললে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী যুবকের মা বাদী হয়ে বন্দর থানায় এ মামলা দায়েরের করেন।

এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পলাতক সাঈদকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে। 
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি চাকরিজীবীরা পেলেন ‘বিশেষ সুবিধা’, অন্যরা পেলেন কী

গতবারের তুলনায় এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় ১৩ লাখ পশু কম কোরবানি হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার ৩৩ লাখ ১০ হাজারের বেশি কোরবানির পশু অবিক্রীত রয়েছে।

এই চিত্র নিশ্চিতভাবেই আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। এবার এত পশু কেন অবিক্রীত থেকে গেল, তার ব্যাখ্যা হিসেবে কাউকে কাউকে বলতে শুনছি, ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত অনেকেই কোরবানি দেননি। কিন্তু এটাও বাস্তবতা যে গত ১০ মাসে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা হাটবাজার, সেতু থেকে শুরু করে জলমহাল, বালুমহাল, টেন্ডারবাজি, ফুটপাত—সবকিছুর দখল চলে গেছে বিএনপির নেতা–কর্মীদের কাছে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন দল এনসিপির নেতা–কর্মীসহ গণ অধিকার পরিষদের অনেক নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি এবং সরকারি কাজে ভাগ–বাঁটোয়ারা, তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের অর্থনৈতিক ভিত্তি আগে থেকেই শক্তিশালী। গত ১০ মাসে তাদের কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নেই পরিচালিত হয়েছে। ফলে রাজনীতিকে আশ্রয় করে নতুন অর্থনৈতিক শ্রেণি দৃশ্যমানভাবেই উপস্থিত। এরপরও কেন এ বছর এত পশু অবিক্রীত থাকল?

এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের অর্থনীতির দিকে ফিরে তাকাতে হবে। শেখ হাসিনা যে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেখানে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত একটি কুলীন গোষ্ঠীই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিল। নাগরিকেরা সেখানে ছিলেন নিছক কর-ভ্যাট-রাজস্বের জোগানদার। ফলে একদিকে ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে সম্পদের বড় অংশটা পুঞ্জিভূত হয়েছে আর অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে মানুষের দারিদ্র্য বেড়েছে।

চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন নিঃসন্দেহে অনন্য এক অর্জন। সব শ্রেণি–পেশার মানুষ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নেমে এসেছিলেন রাস্তায়। কিন্তু অভ্যুত্থান বিশাল জনপ্রত্যাশা তৈরি করেছিল তার একটা বড় জায়গা ছিল, সাধারণ মানুষ ভেবেছিলেন যে তাঁদের ঘাড়ের ওপর সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে বসা ক্রোনিতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আসবে। সরকারি সেবা তাঁরা বিনা ঘুষে, বিনা হয়রানিতে পাবেন। পদে পদে চাঁদা দিয়ে, নেতা, পাতিনেতা বা উপনেতাদের খাজনা দিয়ে তাঁদের টিকে থাকার লাইসেন্স কিনতে হবে না। 

অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স ১০ মাস পেরিয়েছে। সরকারপ্রধানের কাছ থেকে নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময়সীমা জানা গেছে, তাতে সরকারের কার্যকাল অর্ধেকটা পেরিয়েছে। কিন্তু এ সময়টাতে বন্দোবস্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলকতা, বহুত্ববাদ বা সংস্কারের মতো কঠিন শব্দগুলো শোনা গেলেও যেসব পরিবর্তন হলে নাগরিকেরা রাষ্ট্রের কাছে সরাসরি ভোগান্তি, হয়রানি, ঘুষ ছাড়া সেবা পেতে পারেন, সেই উদ্যোগগুলো মোটেই দৃশ্যমান নেই। 

‘আমরা যখন বৈষম্যবিরোধী কথা বলছি, বৈষম্য কমানোর কথা বলছি, তখন কেন শুধু সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটা বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’

এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চাপে আছে অর্থনীতি। আর অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকটটা হলো অনিশ্চয়তা। বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই। নিম্ন আয়ের মানুষেরা বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ কাজ হারিয়েছেন। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) যে ২১ লাখ মানুষ বেকার হয়েছেন, তার ৮৫ শতাংশ নারী। কৃষিতে আদৌ কোনো অভিভাবক আছে কি না, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ফলে পেঁয়াজ, আলু, শীতের সবজি, ধান থেকে শুরু করে গরমের সবজি পটোল—লোকসানের বোঝা দীর্ঘায়িতই হচ্ছে। সর্বস্বান্ত চাষিদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়েছে। 

অর্থনীতির এই অনিশ্চয়তার কারণ হলো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এমন পরিবেশে বিদেশি বিনিয়োগ তো দূরে থাক, দেশি বিনিয়োগকারীরাই তাঁদের পকেট থেকে টাকা বের করেন না। এরপর আবার ঢাকার বাইরে পুলিশ প্রশাসন কার্যত প্রায় নিষ্ক্রিয়। মবতন্ত্রও আছে। সব মিলিয়ে এখন অর্থনীতি বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থানের পক্ষে নয়। 

বিগত সরকার উন্নয়নের ফাঁপানো গল্প দিয়ে চাপা দিতে চেয়েছিল দারিদ্র্য, বেকারত্ব আর কর্মসংস্থানহীনতার রূঢ় বাস্তবতাকে। জুলাই অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বেগের জায়গা থেকে। এই অভ্যুত্থানে সমাজের আর যে তরুণেরা নেমে এসেছিলেন, সরকারি চাকরির সঙ্গে তাঁদের বিন্দুমাত্র সম্পর্কও ছিল না। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে চরম অনিশ্চয়তা, সেই বোধ থেকেই তাঁরা নেমে এসেছিলেন, বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। 

এই অভ্যুত্থানে শুধু পথশিশুই নিহত হয়েছে ১৬৮ জন। আমাদের নীতিনির্ধারকেরা, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি কখনো ভেবে দেখেছে, এই মানুষগুলো কেন চরম আত্মত্যাগ করেছেন? 

সরকার কী দর্শন লালন করছে, তার সবচেয়ে বড় আয়না হলো বাজেট। রাজনৈতিক অর্থনীতি বলে যে শাস্ত্র, সেখানে স্পষ্টতই দেখা যায়, সরকারের নীতিনির্ধারণীতে সেসব গোষ্ঠীই ভূমিকা রাখতে পারে, যারা প্রভাবশালী। দেশে যখন কর্মসংস্থান নেই, ব্যক্তি খাত ও বিদেশি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক, তখন বাজেটে আমরা দেখছি, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথম থেকেই আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হতে দেখা গেছে। হাসিনা সরকার যে চরমভাবে স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠতে পেরেছিল, তার পেছনে প্রধান তিন স্তম্ভের মধ্যে আমলাতন্ত্র একটি। 

কিন্তু গত ১০ মাসে শীর্ষ পর্যায়ে আওয়ামী সুবিধাভোগী মুখগুলো সরানো ছাড়া আমলাতন্ত্রের কাজে, চিন্তায় কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে। বরং যেখানেই সংস্কারের কথা উঠছে, সেখানেই আন্দোলনের হুমকি দিয়ে কিংবা আন্দোলন করে উদ্যোগটা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ নজিরটা আমরা দেখলাম এনবিআর সংস্কারের ক্ষেত্রে। 

যত দিন গড়াচ্ছে, সরকারের সঙ্গে ততই অভ্যুত্থানে থাকা বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে। ফলে সরকারকে যেমন রাজনৈতিক শক্তির জন্য মূলত নির্ভর করতে হচ্ছে এনসিপি, জামায়াত, হেফাজতসহ আরও কিছু ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর ওপর। আবার আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরতা কিংবা তাদের খুশি রাখার নানা প্রচেষ্টাও দেখা যাচ্ছে। এবার ঈদুল আজহায় টানা যে ১০ দিন ছুটি দেওয়া হয়েছে, তার পেছনে এই মানসিকতা কাজ করে থাকতে পারে। অর্থনীতিবিদদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়াটাও সেই একই চিন্তার প্রতিফলন। 

সরকার এর আগে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে বেশি হইচই হওয়ায় সেখান থেকে সরে এসে ‘বিশেষ সুবিধা’ ঘোষণা দিল। এর জন্য বাড়তি প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই টাকা কি তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজে লাগানো যেত না। 

শেষের শুরুটা করা যাক বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের মন্তব্য দিয়ে। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বৈষম্যবিরোধী কথা বলছি, বৈষম্য কমানোর কথা বলছি, তখন কেন শুধু সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটা বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি মনে করেন, এই মুহূর্তে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ বিদ্যমান। তাই বিশেষ পক্ষকে সুবিধা দিলে পরিস্থিতির ওপর আরও চাপ সৃষ্টি হতে পারে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি চাকরির সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্যা ১৫ লাখের মতো। বাকি ১৭ কোটি ৩২ লাখ মানুষের ঘাড়ে কর, ভ্যাটের বোঝা ভারী হওয়া ছাড়া আর কোন ‘বিশেষ সুবিধাটা’ দেওয়া হচ্ছে? 

মনোজ দে প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী

সম্পর্কিত নিবন্ধ