জেমকন গ্রুপের ৬০ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ
Published: 13th, March 2025 GMT
জেমকন গ্রুপের মালিক যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, তাঁর বাবা মৃত কাজী শাহেদ আহমেদ, মা আমিনা আহমেদ, দুই ভাই কাজী আনিস আহমেদ, কাজী ইনাম ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা ৩৬টি কোম্পানির ৪ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের অভিহিত মূল্য ৬০ কোটি ৪৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বলে দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়। বৃহস্পতিবার দুদকের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
অবরুদ্ধ কোম্পানির মধ্যে, ক্যাস্টল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকার ১১৮০টি শেয়ার, জেমকন লিমিটেডের ৫০ লাখ টাকার ৫ লাখ শেয়ার, চার্কা এসপিসি পলিশ লিমিটেডের ৪৫ লাখ টাকার ৪ হাজার ৫০০ শেয়ার, কাজী অ্যান্ড কাজী টি স্টেট লিমিটেডের ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ৪৭ হাজার ৫০০ শেয়ার, চার্কা স্টিল লিমিটেডের ২ কোটি টাকার ২০ হাজার শেয়ার, করোতোয়া টি স্টেট লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ হাজার শেয়ার, রওশনপুর টি ফ্রন্টিয়ার লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ হাজার শেয়ার, জেমকন টি স্টেট লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ হাজার শেয়ার, পাথার লিমিটেডের ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার ২৭ হাজার শেয়ার, জেমকন ফুড এন্ড এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টস লিমিটেডের ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার ১৯ হাজার শেয়ার, জেমকন সিটি লিমিটেডের ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ২৩ হাজার ২৫০টি শেয়ার, জেম জুট লিমিটেডের ২০ কোটি টাকার ২ কোটি শেয়ার, বেঙ্গল হারবাল গার্ডেন লিমিটেডের ২০ লাখ টাকার ২ হাজার শেয়ার, জেমকন সি ফুড লিমিটেডের ২০ লাখ টাকার ২০ হাজার শেয়ার, মিনা সুইটস এন্ড কনফেকশনারি লিমিটেডের ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ১৫ লাখ শেয়ার ও মিনা রিটেইলস লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ লাখ শেয়ার রয়েছে।
এছাড়া আজকের কাগজের ১০ লাখ টাকার ১ হাজার শেয়ার, খবরের কাগজের ৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকার ৪৩৮ শেয়ার, জেমকন স্পোর্টস লিমিটেডের ৬ কোটি টাকার ৬ লাখ শেয়ার, জেমিনি এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ৩০ লাখ টাকার ৩ লাখ শেয়ার, জেম গ্লোবাল ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন লিমিটেডের ৩০ লাখ টাকার ৩ লাখ শেয়ার, জেমকন রিনিউভাল এনার্জি টেকনোলজি লিমিটেডের ৩০ লাখ টাকার ৩ লাখ শেয়ার, বাংলা ট্রিবিউনের ১৫ লাখ টাকার সকল শেয়ার, পাপায়ার্স কমিউনিকেশন লিমিটেডের ৬ লাখ টাকার ৬ হাজার শেয়ার, ক্যাস্টল ইউনিভার্সাল কোম্পানি লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ লাখ শেয়ার, মীনা এডভান্স রিটেইলস ট্রেডিং লিমিটেডের ৩ কোটি টাকার ৩০ লাখ শেয়ার, পাপায়ার্স ডিজিকম লিমিটেডের ৬০ লাখ টাকার ৬ লাখ শেয়ার, মীনা ক্লিক লিমিটেডের ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ১৫ লাখ শেয়ার, জেমকন এগ্রো লিমিটেডের ৪ লাখ টাকার ৪০ লাখ টাকার ৪ লাখ শেয়ার, জেমকন কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ লাখ শেয়ার, জেমকন ব্রিডগার লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ লাখ শেয়ার, জেমকন হাইওয়েজ অ্যান্ড রোডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ লাখ শেয়ার, জেমকন কানেক্টেভিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ লাখ শেয়ার, জেমকন মেরিন ইন্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ লাখ শেয়ার ও অর্গানিক লিমিটেডের ১ কোটি টাকার ১০ লাখ শেয়ার রয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক রেজাউল করিম এসব শেয়ার অবরুদ্ধের আবেদন করেন। আবেদেন তিনি বলেন, অনুসন্ধানে দেখা যায়, জেমকন গ্রুপের মালিকপক্ষ কাজী নাবিল আহমেদ, কাজী আনিস আহমেদ, কাজী ইনাম আহমেদ, মৃত কাজী শাহেদ আহমেদ, আমিনা আহমেদ এবং অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের, তাদের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৪ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ টি শেয়ার যার অভিহিত মূল্য ৬০ কোটি ৪৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, যা অভিযুক্তরা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এটি করতে পারলে অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলা দায়ের, আদালতে চার্জশিট দাখিল, আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় হতে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সকল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। এসব শেয়ার এবং শেয়ার থেকে উদ্ভূত সকল মুনাফা অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি জেমকন গ্রুপের নাবিল আহমেদসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবর দ ধ ট ক র ১০ ল খ শ য় র র ৩০ ল খ অবর দ ধ আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম অধিকার ও সুস্থ কর্মপরিবেশ
আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মেহনতি মানুষদের স্মরণ করিবার দিন। তৎসহিত সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্য মর্যাদাকর জীবন নিশ্চিতকরণের সংগ্রামে নূতন শপথ গ্রহণের দিন।
মে দিবস বিশ্বের শ্রমিকদের সংহতি যদ্রূপ বৃদ্ধি করিয়াছে, তদ্রূপ তাহাদিগকে অধিকার সচেতনও করিয়াছে; প্রেরণা জোগাইয়া চলিয়াছে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে। মে দিবস বাংলাদেশসহ বিশ্বের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়া স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশসমূহের জন্য বিপুল প্রেরণার উৎসরূপে কাজ করিয়াছে।
তাহারই প্রতিফলনস্বরূপ এই সকল দেশে ছুটিসহকারে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। উন্নত দেশসমূহ এই দিবসে পৃথক ছুটির ব্যবস্থা না করিলেও উহার প্রভাব উপেক্ষা করিতে পারে নাই। তাই ভিন্ন প্রকারে সেই সকল দেশেও দিবসটি পালিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে আজিকে শ্রমমান লইয়া যে আলোচনা হয়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রমিকের বহু অধিকার আজিকে যে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বহু দেশে কার্যকর হইয়াছে, উহারও পশ্চাতে রহিয়াছে মে দিবসের চেতনা। তবে ইহা সত্য, বাংলাদেশে ঘটা করিয়া দিবসটি পালিত হইলেও মজুরি ও কর্মপরিবেশ প্রশ্নে খামতি সীমাহীন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহে শ্রমিকদের জন্য এক প্রকার আইনি আশ্রয় থাকিলেও বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে উহার লেশমাত্র নাই। শেষোক্ত খাতে কোটি কোটি শ্রমিক উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য অধিকার হইতে বঞ্চিত।
এই বৎসর শ্রমিক দিবস এমন সময়ে উপস্থিত, যখন গণঅভ্যুত্থানের ফসলস্বরূপ দেশে নূতন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে। সেই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসাবে শ্রম খাতের সংস্কারেও উদ্যোগী। তাহাদের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে প্রতিবেদনও দাখিল করিয়াছে, যথায় দেশের সাড়ে সাত কোটি শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত একগুচ্ছ সুপারিশ রহিয়াছে। প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়োজিত সকল শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ ন্যূনতম মানদণ্ডরূপে বিবেচিত হইবে– কমিশনের এই সুপারিশ যুগান্তকারী বলিয়া আমরা মনে করি। উপরন্তু কমিশন ইহাও বলিয়াছে, কোনো খাতের মজুরি কাঠামো নির্ধারণে পরিবারে একক উপার্জনকারী হিসাবে বিবেচনায় লইয়া এমন পরিমাণ নির্ধারণ করিতে হইবে, যাহাতে শ্রমিক তাঁহার পরিবারের প্রয়োজন মিটাইতে পারেন।
বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বৎসর অন্তর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপৎকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন করিবার শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস এবং স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত সুপারিশসমূহও প্রণিধানযোগ্য। একটা সময় ছিল যখন শ্রমিক আন্দোলন বলিতে কারখানা ভাঙচুর ও সম্পদ ধ্বংস বোঝাইত। পরিণামে নিজের রুটি-রুজি লইয়া শ্রমিকদেরই টানাপোড়েনে পড়িতে হইত। ইহার সমাধান দিয়াছিল ট্রেড ইউনিয়ন প্রথা। দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার বিগত দশকসমূহে ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করে। উহার সহিত সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলনও বিরল হইয়া পড়ে।
আমাদের বিশ্বাস, শ্রম সংস্কার কমিশনের ট্রেড ইউনিয়ন-সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ আলোর মুখ দেখিলে শ্রমিক-মালিক উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা হইবে। সর্বোপরি দেশের বিকাশমান শিল্প খাত হইবে লাভবান। উৎপাদন ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তিরূপে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে উদ্যোক্তার যদ্রূপ অবদান, তদ্রূপ শ্রমিকেরও অবদান ব্যাপক। তাই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণে আর কোনো অবহেলা নহে। এইবারের মে দিবসে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করিবে– ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সমকালের পক্ষ হইতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে মে দিবসের অভিনন্দন জানাই।