আইপিএলকে টক্কর দিতে ৬ হাজার কোটি টাকার লিগ আনছে সৌদি আরব
Published: 16th, March 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট লিগগুলোর রমরমা অবস্থা। এতে সবচেয়ে বড় প্রভাব আইপিএলের, যেখানে খেলতে মুখিয়ে থাকেন ক্রিকেটাররা। থাকবেন নাই–বা কেন? আইপিএল মানেই তো অর্থের ঝনঝনানি।
অর্থের পাশাপাশি জনপ্রিয়তায়, তারকার সমাগমে আইপিএলের সমকক্ষ বা প্রায় কাছাকাছি কোনো লিগ এই মুহূর্তে নেই। ফলে ক্রিকেটে ভারতের দাপট দিন দিন বেড়েই চলেছে। আইসিসি থেকে তাদের আয়ও অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। বড় কয়েকটি দল বাদে অন্যগুলো রীতিমতো ভুগছে।
এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক বোর্ড সদস্য নিল ম্যাক্সওয়েল। ৫৭ বছর বয়সী ম্যাক্সওয়েলের আরেক পরিচয় অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের ব্যবস্থাপক। যুক্তরাষ্ট্রে টি–টোয়েন্টি লিগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর বড় অবদান আছে।
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম দ্য এজ জানিয়েছে, নিল ম্যাক্সওয়েল একটি পরিকল্পনা নিয়ে এক বছর ধরে গোপনে কাজ করছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, টেনিসের গ্র্যান্ড স্লামের আদলে সৌদি আরবভিত্তিক একটি টি–টোয়েন্টি লিগ চালু করবেন তিনি। এতে ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০৬৯ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করবে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রীড়া বিনিয়োগকারী সস্থা এসআরজে স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস। এ ব্যাপারে আইসিসির সঙ্গে সৌদি ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের আলোচনাও চলছে।
আরও পড়ুনসৌদি আরবের পরিকল্পনায় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট লিগ১৪ এপ্রিল ২০২৩টেনিসে বছরে চারটি গ্র্যান্ড স্লাম হয়—অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন ও ইউএস ওপেন। একইভাবে সৌদিও বছরের আলাদা সময়ে ভিন্ন চারটি দেশে ক্রিকেট লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের টুর্নামেন্টও থাকবে। ফাইনাল হতে পারে সৌদিতে।
এসআরজে স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস সৌদি আরবের সর্বজনীন বিনিয়োগ তহবিলের অংশ। ক্রীড়াঙ্গনের প্রসারে তারা ১ লাখ কোটি ডলার (১ কোটি ২১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা) নিয়ে নেমেছে।
পরিকল্পিত টি–টোয়েন্টি লিগের মূল লক্ষ্য নতুন রাজস্ব উৎস সৃষ্টি করা এবং ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়া। বিশেষ করে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বাইরে ক্রিকেটের অর্থনৈতিক স্থিতি নিশ্চিত করার মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এটি ভূমিকা রাখতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল ক্রিকেট বোর্ডগুলো সংকট কাটিয়ে উঠবে।
আইসিসি সভাপতি জয় শাহর অনুমতির অপেক্ষায় আছে সৌদি আরব.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত
লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা।
জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো।
আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।
ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।
আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’
উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।
ঢাকা/লিটন/টিপু