ভোলা জেলায় ১০৯টি ইটিভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টির বৈধ কাগজপত্র নেই। এসব ভাটায় মাটি কেটে ড্রাম চিমনি ও সাধারণ মানের চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে। এর পরও নানা কারণে ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না।
আজ ১৭ মার্চ থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পাঁচ বিভাগের সব অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভোলা জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এর পর আবার চালু করা হয়েছে অবৈধ ইটভাটাগুলো। নীতিমালা অমান্য করে অধিকাংশ ভাটায় চলছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব। ভ্রাম্যমাণ আদালত মোটা অঙ্কের জরিমানা ও ভাটা ভেঙে দিয়েও দমিয়ে রাখতে পারছেন না।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মার্চ চরফ্যাসনের মাদরাজ এলাকায় মেসার্স ক্রাউন ব্রিকসের চিমনি ও কিলন ভেঙে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। সততা, আনিশা, সরমান, এ আলী ও মধুমতি ব্রিকসের মালিককে ২৯ লাখ টাকা জরিমানা করে কাঁচা ইট, স-মিল ও চিমনি ভেঙে দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয় এসব অবৈধ ইভাটার। এর আগে সদর উপজেলার রূপালী ব্রিকস, ফাইভ স্টার, পান্না, বাঘা ও গাজী ব্রিকসকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এর একদিন পর ৭ মার্চ ক্রাউন ব্রিকস কর্তৃপক্ষ নতুন চিমনি বসিয়ে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো শুরু করে। ভেঙে ফেলা স-মিল মেরামত করে কাঠ চেরাইয়ের কাজ চলছে। শ্রমিকরা ব্যস্ত ইট তৈরির কাজে। একইভাবে মেরামত কাজ চলছে সততা ব্রিকসে। চরফ্যাসনের চর নুরুল আমিন গ্রামে কৃষি জমিতে উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আল আমিন মুন্সি অবৈধভবে করা ‘পদ্মা-২’ নামের ইটভাটা গড়ে তোলেন। ৫ আগস্টের পর সাবেক ইউপি সদস্য মোরশেদ আলম সেখানে ‘ঢাকা ব্রিকস’ নামে নতুন সাইনবোর্ড টানিয়ে কাঠ পোড়ানো অব্যাহত রাখেন। একই গ্রামের তেঁতুলিয়া ব্রিকসেও কাঠ পোড়ানো অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে মেসার্স ক্রাউন ব্রিকসের ম্যানেজার মো.
আইন অমান্য করা ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া। জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান জানান, অবৈধ ইটভাটার চিমনিসহ অন্যান্য উপকরণ ভেঙে বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর পরও যারা নতুন করে ভাটা চালুর চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থঅ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’