ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে দেশের পত্র-পত্রিকায় একটি খবর বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সরকার সব প্রতিষ্ঠানে ই-ফাইলিং চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এতে আমরা জানতে পারি, সরকারি সব অফিসে ই-ফাইলিং করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সরকারের কাজের সমন্বয় সহজ ও দ্রুত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। ই-ফাইলিং হলে দুর্নীতিও কমে আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন এস্তোনিয়ায় কীভাবে দুর্নীতি কমেছে, সেটি বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করতে চেয়েছে। বাংলাদেশও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে।’ এর মাধ্যমে সহজে ফাইল মনিটর ও ট্র্যাক করা যাবে বলেও তিনি জানান। 
সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে আগামী দিনে তার ফলাফল সবার কাছে আরও স্পষ্ট হবে। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডিজিটালাইজেশনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলে সব সরকারি কর্মকর্তার জন্য ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক এবং বড় করপোরেশনগুলোকে তাদের পুরো সংস্থায় ই-রিটার্ন গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হয়। ফলে সরকারি কর্মকর্তারা এবার ই-রিটার্নের মাধ্যমে কর বিবরণী দাখিলের সুবিধা পেয়েছেন। আইসিটির কল্যাণে জনগণের ঘরে বসে সেবা পাওয়ার সুযোগকে অবারিত ও ভোগান্তি কমাতে সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিশ্চয় প্রশংসার দাবিদার। 

সরকারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও ডিজিটালাইজেশন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বা অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার বড় হাতিয়ার, তা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের জরিপেও উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ মনে করে, সরকারি সেবাদান প্রক্রিয়া জনবান্ধব নয় এবং ৮৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ জনপ্রশাসনে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করে। শুধু তাই নয়, ৪১ দশমিক ৮৮ শতাংশ মানুষ সিস্টেমেটিক পরিবর্তনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছে। এতে ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ডিজিটালাইজেশনে জোর দিয়েছে। সরকার শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ করে সংস্কার কমিশনের সুপারিশই প্রদান করেনি; সেটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়নে স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। সুতরাং আমরা আশা করতেই পারি, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে গঠিত ঐকমত্য কমিশন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই আইসিটি সার্ভিস বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক নবযুগের সূচনা করবে। 

সব দপ্তরে ই-ফাইলিং চালু করার সঙ্গে যে প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি জড়িত, সেসব বিষয়ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি। কেননা, একটা দপ্তরকে ই-ফাইলিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করার সঙ্গে ওই দপ্তরের ইন্টারনেট পর্যাপ্ততা, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক লজিস্টিকস, দপ্তরের জন্য বরাদ্দকৃত সার্ভার স্পেস, স্টোরেজ, ব্যান্ডউইথ ইত্যাদি বিষয় যেমন জড়িত; তেমনি ই-ফাইলিং­-পরবর্তী সিস্টেম অপারেশন, দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রশিক্ষিত জনবলও গুরুত্বপূর্ণ। 

বিগত সরকারের সময় ডিজিটালাইজেশন হয়েছে বটে, তা বেশির ভাগই কাগজ-কলম কিংবা পরিসংখ্যানে। ফলে প্রতিটি প্রকল্প শ্বেতহস্তী হয়ে গেছে, যা আমরা পত্র-পত্রিকার বরাতে দেখছি। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে পাওয়া দেশকে বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে এখন কাজগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করাই আমাদের করণীয়। তাই সমতাভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আইসিটির ব্যবহারকে সর্বত্র সুসংহত করতে আইসিটির বিস্তৃত ব্যবহার জরুরি। দুর্নীতির অবসান, স্বজনপ্রীতি রোধ ও সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারের আইসিটিভিত্তিক সেবা দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাষ্ট্র মেরামতের কাঠামোগত সংস্কারের অংশ হিসেবে এবং জনগণের আইসিটিভিত্তিক সেবা পাওয়ার অধিকার সমুন্নত করতে আইসিটি সার্ভিসের দ্রুত বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। বিভিন্ন দপ্তরে রিসোর্স অপটিমাইজেশন, আইসিটি ডিভিশনকে শক্তিশালী করা, সরকারি আইসিটি সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, সর্বোপরি জনগণের ভোগান্তিমুক্ত আইসিটিভিত্তিক নাগরিক সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে বলে আশা করছি। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশের পর বাকি প্রশাসনিক কাজ হয়তো দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইন মিনিস্ট্রি রুটিনওয়ার্ক হিসেবেই সম্পন্ন করবে। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, আইসিটির কোনো বাউন্ডারি নেই। নেই কোনো বর্ডার। ফলে আইসিটির সীমান্ত শত্রুরও অভাব নেই। যাই হোক, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, এনআইডি, ই-জিপি, ই-রিটার্ন, ই-পাসপোর্ট, ই-টিআইএন, ইএফটির মতো নাগরিককেন্দ্রিক সেবা যেমন নির্বিঘ্ন হবে, তেমনি ভার্চুয়াল জগৎ সুরক্ষিত করার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাইবার থ্রেট থেকে প্রিয় দেশমাতৃকা নিরাপদ থাকবে। 

মো.

মনিরুজ্জামান: যুগ্ম সচিব, গভর্নমেন্ট আইসিটি অফিসার্স ফোরাম 
mone15_cse@yahoo.com
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ গ রহণ সরক র র আইস ট র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’

তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’

পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’

আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’

ঢাকা/আসাদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • জুলাই সনদ নিয়ে যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে
  • ফরিদপুরে সীমানা নিয়ে ডিসির চিঠি, এলাকাবাসীর ৫ দাবি
  • জামায়া‌তের তিন‌ দি‌নের কর্মসূচি ঘোষণা