Samakal:
2025-08-01@05:05:08 GMT

গাজায় অনিঃশেষ গণহত্যা

Published: 18th, March 2025 GMT

গাজায় অনিঃশেষ গণহত্যা

গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে দুই মাস হলো। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখনও ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে, যদিও আপাতত একটানা বোমাবর্ষণ বন্ধ হয়েছে। গাজা উপত্যকায় অত্যন্ত জরুরি সহায়তা দেওয়ার যে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তা দুই সপ্তাহ আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গত দেড় মাসে যতটুকু সাহায্য সেখানে গেছে, তা গাজার ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনরায় গড়ে তুলতে পারেনি। বিশেষ করে উত্তরে এত বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ধ্বংস হয়েছে; মানবিক সংস্থাগুলোকে লাখ লাখ আহত ব্যক্তির মৌলিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য তাঁবু বসাতে হয়েছে। যেসব চিকিৎসা সরঞ্জাম এসেছিল, তা ইতোমধ্যে প্রায় ফুরিয়ে গেছে। এই অব্যাহত যন্ত্রণার মধ্যে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরুই করা যাচ্ছে না; বেসামরিক পর্যায়ে বিপর্যস্ত একাধিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলা তো দূরের কথা। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হলো, ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলের বিস্ফোরক অস্ত্রের নির্বিচার ব্যবহারে অসংখ্য ব্যক্তির অঙ্গহানি ঘটেছে, যা ভয়াবহ। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাজায় ২২ হাজার ৫০০ লোক বিভিন্নভাবে আহত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে গুরুতরভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন কিংবা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া, মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত, মস্তিষ্কজনিত ট্রমা ও বড় ধরনের পোড়ার ঘটনা। গণহত্যা চলাকালীন সাহায্য সংস্থা ও চিকিৎসা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনমতে, গাজায় প্রতিদিন ১০ জনের বেশি শিশু এক বা একাধিক অঙ্গ হারাচ্ছিল। অনেকের অ্যানেস্থেশিয়া ছাড়াই অস্ত্রোপচার করা হচ্ছিল এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস না হলে অনেকের এসব অঙ্গ বাঁচানো যেত। ডিসেম্বরে জাতিসংঘ বলেছিল, গাজায় ‘বিশ্বে মাথাপিছু হিসেবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারানো শিশু’ রয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় আমি প্রত্যক্ষ করেছি, গাজার শেষ কার্যকরী হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি বিস্ফোরক অস্ত্রের আঘাতে আহতদের সাহায্য করার জন্য কীভাবে লড়াই করছিল। আমি যখন হাসপাতালে পৌঁছাই, তখন বেশ কয়েকটি বোমা হামলার কারণে অনেক লোক আহত হয়েছিল।
কর্মীর তীব্র অভাব থাকায় আমি সাহায্যের জন্য ছুটে যাই। আমি প্রথম যে রোগীর চিকিৎসা করি, সে ছিল ৪ বছর বয়সী, তালা নামে। বোমা হামলার কারণে সে তার একটি পা হারিয়েছিল এবং চিৎকার করে কাঁদছিল। তার মাও গুরুতরভাবে আহত। তিনি মেয়েকে শান্ত করতে এগিয়ে আসতে পারেননি। আমি ছোট্ট মেয়েটির জন্য তার ব্যান্ডেজ পরিবর্তন এবং তাকে ব্যথানাশক দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি। তারপর আমি আবদুল্লাহ নামে এক যুবককে দেখতে পাই, যে গুরুতর আহত ও অজ্ঞান ছিল। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তার বাকি পা কেটে ফেলা হয়েছিল। তার বাবা আমাকে বলেছিলেন, আবদুল্লাহর দাদি এবং তার এক ভাই ও বোন নিহত হয়েছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমি আবার হাসপাতালে যাই, যেখানে আমি দুই ছোট্ট বালিকাকে দেখেছি। হানানের বয়স ৩ বছর এবং মিস্কের ১ বছর ৮ মাস। কয়েক মাস আগে তারা ইসরায়েলি আক্রমণে তাদের অঙ্গ এবং মাকে হারিয়েছে। হানানের দুটি পা কেটে ফেলা হয়েছিল। একই সময় তার বোন মিস্কের একটি পা বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছিল। আমাকে তাদের খালা তাদের যত্ন নিতে গিয়ে তাঁর বাঁচামরার লড়াইয়ের কথা শুনিয়েছিলেন। বোমা হামলায় তার পা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সময় মিস্ক সবে হাঁটতে শিখেছিল। হানান বয়সে এমন পর্যায়ে ছিল যে, সে তার বয়সী অন্যান্য বাচ্চার পা বুঝতে এবং লক্ষ্য করতে পারত। সে জিজ্ঞাসা করত– কেন তার পা নেই।

এগুলো এমন হাজার হাজার শিশুর গল্পের কয়েকটি মাত্র, যাদের শৈশব ইসরায়েলি বোমা হামলায় কেটেছে। এখন তারা তাদের সমবয়সীদের সঙ্গে দৌড়াতে বা খেলতে অক্ষম। তারা এমন এক জায়গায় তীব্র ট্রমাগ্রস্ত হয়ে ভোগান্তিতে রয়েছে, যেখানে তাদের মৌলিক চিকিৎসাও দেওয়া যাচ্ছে না। এই গণহত্যা চালানোর আগে থেকেই গাজায় বিপুলসংখ্যক অঙ্গহীন মানুষের অস্তিত্ব ছিল, যারা পূর্ববর্তী ইসরায়েলি যুদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকালে হামলার শিকার।
ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতাল ও অস্থায়ী ক্লিনিকগুলো দীর্ঘস্থায়ী রোগের জন্য কোনো চিকিৎসা দিতে সক্ষম নয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তো দূরের কথা। রাফা সীমান্ত ক্রসিং এখন আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং আহতদের কেউ চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ করতে পারছে না। হাজার হাজার কৃত্রিম অঙ্গ, ক্রাচ ও হুইলচেয়ারের মতো সহায়ক ডিভাইসের জরুরি প্রয়োজন। কিন্তু সেগুলো ঢোকানোর অনুমতি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
গাজার স্বাস্থ্যসেবা খাত যে পরিমাণে ধ্বংসের সম্মুখীন, তাতে এটি পুনর্নির্মাণে বছরের পর বছর সময় লাগবে। আর যদি ইসরায়েল গাজাবাসীদের শাস্তি দিতে সাহায্য আটকানো এ মুহূর্তে বন্ধ করে দেয়, তাহলেও গাজা পুনর্নির্মাণে ওই সময় লাগবে। এই সময়ে যারা অঙ্গ হারিয়েছে, তারা অনিবার্যভাবে শুধু যত্ন ও পুনর্বাসনের অভাবে ভুগবে না, বরং গভীর মানসিক ট্রমাতেও বিপর্যস্ত থাকবে। এটি হবে গাজার নীরব মহামারি।

হাদিল আওয়াদ: গাজায় বসবাসকারী একজন লেখক ও সেবিকা; আলজাজিরা থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

‘রাষ্ট্রীয় শোক’ প্রত্যাখ্যান

গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন–নিপীড়ন–হয়রানি চলছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ক তখনো আটক ছিলেন ডিবি কার্যালয়ে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে লোকদেখানো ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ পালন করা হচ্ছিল ৩০ জুলাই। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের এই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে সেদিন ‘মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং তা অনলাইনে প্রচারের কর্মসূচি’ পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে ২৯ জুলাই রাত (২০২৪ সাল) থেকেই ফেসবুকের প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম ব্যবহার শুরু হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, সাংবাদিক, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান।

ফেসবুকে অভূতপূর্ব সাড়ার পাশাপাশি নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ৩০ জুলাই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও সড়কে মিছিল করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দিতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকার করা রিটের শুনানিতে ৩০ জুলাই হাইকোর্ট মন্তব্য করেন ‘এসব মৃত্যু আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক’।

সেদিন দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা)। অধ্যাপক আসিফ নজরুল (বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা), টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী

শিরীন হক, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর যে মাত্রায় বলপ্রয়োগ ও সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করা হয়েছে, তা দেশের জনগণ ও বিশ্ববিবেককে স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে।’

অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ দেওয়া ও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ৩০ জুলাই বিবৃতি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

গণ–অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলো সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের (বর্তমানে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক) চলতি জুলাই মাসের ৬ তারিখ রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ২৯ জুলাই (২০২৪ সাল) সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় শোক এবং কালো ব্যাজ ধারণের ঘোষণা দেওয়ার পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। নাছির উদ্দীন তাঁকে রাষ্ট্রীয় কালো ব্যাজের বিপরীতে লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাব দেন। পরে মো. আবু সাদিক কায়েমকে (ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা) ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন আবদুল কাদের। সাদিকও সম্মতি দেন। নাছির উদ্দীন ও আবু সাদিকের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেই মুখে–চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা ও তা অনলাইনে প্রচার করার কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পিডিবির ভুলে ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হলো বাংলাদেশকে
  • নির্বাচনের রোডম্যাপে কবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • জন্মহার বাড়াতে চীনের নতুন উদ্যোগ, শিশুদের জন্য মা-বাবা পাবেন ভাতা
  • সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ প্রত্যাখ্যান
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০ হাজার ছাড়াল
  • গণহত্যার বিচারের পর পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি রেজাউল করীমের
  • শেখ হাসিনা যে অপরাধ করেছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও তা করে নাই: আসিফ নজরুল