আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি সন্তুষ্ট হবেন না কেন
Published: 22nd, March 2025 GMT
লিওনেল মেসি ছিলেন না, লাওতারো মার্তিনেজও ছিলেন না। এমনকি পাওলো দিবালাও নয়। উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ হয়ে উঠেছিল অনেকটাই ধারহীন। কিন্তু মন্টেভিডিওতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ১৩তম ম্যাচে মেসি–মার্তিনেজের অভাব কি আর্জেন্টিনা খুব বেশি টের পেয়েছে?
বেলা শেষে ফলই যখন বড় হয়ে দাঁড়ায়, তখন উরুগুয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার নতুন চেহারার আক্রমণভাগকে দশে দশ তো দিতেই হবে। হুলিয়ান আলভারেজ, থিয়াগো আলমাদা আর গিলিয়ানো সিমিওনেদের নিয়ে গড়া আক্রমণভাগ আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছে ১–০ গোলের জয়। গোল করেছেন আরমাদা, অ্যাসিস্ট করেছেন আলভারেজ। ম্যাচ শেষে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি তাই আনন্দের সঙ্গেই বললেন, ‘আমি কি সন্তুষ্ট না হয়ে পারি!’
স্কালোনি কেন সন্তুষ্ট হবেন না, যখন তাঁর দল বলের দখলে পিছিয়ে থাকলেও (৫৫%–এর বিপরীতে ৪৫%) ম্যাচে উরুগুয়ের চেয়ে শট নিয়েছে দ্বিগুণ (৬টির বিপরীতে ১২টি)। সবচেয়ে বড় কথা, ৬৮ মিনিটে আলভারেজের বাড়ানো বল ধরে আলমাদার মতো তরুণ যেভাবে তাক লাগানো এক গোল করেছেন।
দলের পারফরম্যান্স নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে আর্জেন্টাইন কোচ ম্যাচ শেষে বলেন, ‘আমি কি সন্তুষ্ট না হয়ে পারি! শুধু জয়ের জন্য নয়; বরং ছেলেরা যেভাবে খেলেছে, তার জন্য। আমরা পরিপূর্ণ একটা ম্যাচ খেলতে পেরেছি। চাপ সয়ে নিতে পেরেছি। যখন আক্রমণাত্মক খেলার দরকার ছিল, খেলেছি। যখন রক্ষণাত্মক দরকার ছিল, সেটাও খেলেছি।’
মেসি–মার্তিনেজের মতো বড় নামের ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের না থাকায় ম্যাচের আগে কিছুটা হলেও ভাবনা ছিল স্কালোনির। তবে এটি তরুণদের নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর ভালো সুযোগ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তখন। উরুগুয়ের মাঠে আলমাদারা সেটি সত্যিই করে দেখানোর পর স্কালোনি মনে করিয়ে দিলেন, সবচেয়ে বড় নাম তো আর্জেন্টিনাই, ‘আমাদের জাতীয় দল এমন একটি দল, কেউ একজন না থাকলে আরেকজন সেখানে ভূমিকা রাখে। এমনকি আজ যখন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন খেলোয়াড় ছিল না, তারপরও আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নেমেছি। হতে পারে পারফরম্যান্স (গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের তুলনা) ভিন্ন। কিন্তু দলটা মাঠে নামে অন্য সব নামকে এক পাশে সরিয়ে রেখেই।’
গত অক্টোবরে বলিভিয়ার বিপক্ষে ৬–০ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে গোল করেছিলেন আলমাদা। অলিম্পিক লিওঁতে খেলা এই ফরোয়ার্ড এবার তারকা ফরোয়ার্ডদের অনুপস্থিতিতে গোল করে দলকে জেতানোর পর বললেন, ‘আমি বলটা নিলাম, মারলাম, সৌভাগ্যক্রমে জালে চলে গেল।’
ম্যাচে তিনটি শট নিয়ে দুটিই লক্ষ্যে রাখতে পারা এই ফরোয়ার্ড কিছু একটা করে দেখাতে যে তেতে ছিলেন, জানালেন সেটাও, ‘আমি কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। চেয়েছি, কী কারণে আমি স্কোয়াডে আছি, সেটা যেন দেখাতে পারি।’
আলমাদার দলের পরের ম্যাচ বাংলাদেশ সময় বুধবার ব্রাজিলের বিপক্ষে। সে ম্যাচে ড্র করলেই ২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলবে আর্জেন্টিনা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন গ ল কর আলম দ
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।