অন্তর্বর্তী সরকারের কমিশনগুলোর প্রস্তাবনায় রাজনীতিকরা অপাঙক্তেয় এবং ভবিষ্যতে অনির্বাচিতদের দেশ পরিচালনায় নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির। দলটি বলেছে, প্রস্তাবনায় এমন কার্যপরিধি রাখা হয়েছে, যার ফলে স্তরে স্তরে অনির্বাচিতরা সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন। সাংবিধানিকভাবে তাদের ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো গৃহীত হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কোনো গুরুত্ব থাকবে না।

গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংস্কার বিষয়ে বিএনপির মতামত রোববার ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সুপারিশমালায় সাংবিধানিক কমিশনসহ (এনসিসি) নতুন নতুন বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কমিশনের এখতিয়ার, কর্মকাণ্ডের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব আন্ডারমাইনিং করা এবং ক্ষমতাহীন করাই উদ্দেশ্য। যার ফলে একটি দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিট, কমিশনের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিবৃতি-বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। এতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে, সব বিষয় একটি পূর্বপরিকল্পনার অংশ, যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কিনা, বলা মুশকিল।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে। যেসব বিষয় প্রস্তাব আকারে আসতে পারত, তার প্রস্তাব না রেখে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন: প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কিনা– ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কিনা?

তিনি বলেন, সংবিধানের ‘প্রস্তাবনার’ মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি।

স্প্রেডশিটে ৭০টির মতো প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ প্রায় ১২৩টি। একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে রয়েছে মাত্র ২৭টি। আমরা মনে করি, স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশমালার ওপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।

সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া একসঙ্গে
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো, জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এবং জবাবদিহি ও আইনের শাসনের নিশ্চয়তা বিধান করা। সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত করা। আগে সংস্কার নাকি নির্বাচন– এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের অবকাশ নেই। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটি একই সঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরি হতে পারে, নির্বাচিত সরকার পরে যা বাস্তবায়ন করবে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল করণীয় হলো একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রথমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা। এর পর দ্রুত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। নির্বাচিত সরকার জনগণের কাঙ্ক্ষিত ঐকমত্যের সংস্কার সম্পন্ন করবে। কেননা, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য সংস্কার করা সম্ভব।

অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা অবস্থান বজায় রাখা আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করারও নানা লক্ষণ এবং প্রমাণ প্রকাশ পাচ্ছে।

তারেক রহমান ফিরবেন উপযুক্ত সময়ে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, উপযুক্ত সময় এলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। এ বিষয়ে আমরা এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ করিনি। আমাদের যখন মনে হবে এখন উপযুক্ত সময়, তিনি তখন আসবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র প রস ত ব র জন ত ক সরক র র ব এনপ র ঐকমত য ফখর ল ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়। খবর বাসসের।

বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকে সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেসব আলোচনা হয়েছে, সে ব্যাপারে কমিশনপ্রধানকে অবহিত করেন। কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক এবং সফর রাজ হোসেনও তাতে অংশ নেন। সেই আলোকে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপি-গণসংহতি আন্দোলনের বৈঠক: নির্বাচনের ঘোষিত সময়ে সংস্কারে ঐক্য
  • অনির্বাচিত সরকারের করিডোর দেওয়ার এখতিয়ার নেই: বিএনপি
  • অনির্বাচিত সরকারের করিডোর দেওয়ার এখতিয়ার নেই
  • ‘মানবিক করিডর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে: চরমোনাই পীর
  • সংস্কার ও নির্বাচন একই সঙ্গে চলতে পারে: বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
  • এই প্রথম সকলে মিলে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে: আলী রীয়াজ
  • ঐকমত্য কমিশন দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারলে দ্রুত রাজনৈতিক বোঝাপড়া সম্ভব: সাইফুল হক
  • প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক
  • রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরিতে আলোচনার সিদ্ধান্ত গণসংহতির
  • জনগণ গণতন্ত্রের জন‍্য রক্ত দিয়েছে, কোনো মহামানবের প্রতিষ্ঠার জন্য নয়: আমীর খসরু