এআই কি রমজানের আধ্যাত্মিকতা বদলে দেবে?
Published: 23rd, March 2025 GMT
প্রযুক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এই পরিবর্তনের একটি বড় অংশ। বিশ্বাস ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ, দেখিয়ে দিচ্ছে যে, এআই কীভাবে পবিত্র রমজান মাস পালনের ধরনকে বদলে দিচ্ছে। ইতিহাস বলছে, প্রতিটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তন রমজানের ওপর ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলেছে। একসময় রেডিও ধর্মীয় বাণী ঘরে পৌঁছে দিত, টেলিভিশন নিয়ে আসে বিশেষ রমজান প্রোগ্রাম, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্বব্যাপী রোজাদারদের সংযুক্ত করেছে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে এই বিবর্তনের পরবর্তী ধাপ।
বদলে দেওয়ার আশঙ্কা কেন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন ভার্সনগুলো ব্যাপকভাবে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মতৎপরতা বিশ্লেষণ করে, আমাদের ভাষার প্রতিটি টোন, সামাজিক মাধ্যমের ক্লিক, এমনকি ভিউ বা পরিদর্শন ব্যাপকভাবে অ্যালগরিদমে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে এআই-চালিত বিশ্লেষণ ব্যবহার করে হাইপার-পারসোনালাইজড বিজ্ঞাপন তৈরি করা, ভোক্তার আচরণ পূর্বানুমান করা এবং লক্ষ্যভিত্তিক প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে রমজানকে বাণিজ্যিকীকরণের ঝুঁকি রয়েছে।
আরও পড়ুনঈদের দিনের আমল১০ এপ্রিল ২০২৪যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এআই
এআই-এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি কাজ করছে বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে। পবিত্র রমজান মাসে ব্র্যান্ড ও ভোক্তাদের সম্পৃক্ততার ধরন জেনে ব্যক্তিগত কেনাকাটায় এমনসব কনটেন্ট তৈরি করে দিচ্ছে এআই, যা আগে এতটা সূক্ষ্মভাবে সম্ভব ছিল না। এআই-চালিত কনটেন্ট এখন বিভিন্ন শিল্প-উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল রমজান’ বাস্তবতা নিয়ে এসেছে।
এ ছাড়া এআই ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ইফতার নিমন্ত্রণপত্র তৈরি করা, আবার দান-সংশ্লিষ্ট তথ্য বিশ্লেষণ করে মানুষের জাকাত দেওয়ার সর্বোত্তম উপায় সুপারিশ করছে এআই। যেহেতু আমরা প্রযুক্তিকে অতিমাত্রায় বিশ্বাস করছি, ফলে তার দেওয়া সুপারিশ ইসলামিক পণ্ডিতদের সুপারিশের তুলনায় বেশি মানবিক মনে হতে পারে।
আরও পড়ুনচাঁদরাত ও ঈদের দিনের আমল২১ এপ্রিল ২০২৩এফএমসিজি ও সৌন্দর্য খাতে পরিবর্তন
দ্রুত বিক্রীত ভোগ্যপণ্য শিল্প বিশ্বব্যাপী এআই গ্রহণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ব্যবহার করে বাজার সম্প্রসারণ, প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডিং ও বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। এআই-চালিত অনুভূতি বিশ্লেষণ ও পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলো এমন গল্প তৈরি করতে পারে, যা ভোক্তাদের পূর্বেকার আচরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে রমজানের প্রচারণায় সাংস্কৃতিক অভিনবত্বের জন্য আমরা আরও বেশি করে এআই নির্ভর হয়ে পড়তে পারি।
২০২৫ সালে এআই-নির্ভর অতি-ব্যক্তিগতকৃত বিপণন আরও বেশি প্রচলিত হবে। রমজানে ব্র্যান্ড ও ভোক্তাদের সংযোগ তৈরির জন্য দানশীলতা, সহনশীলতা ও পরিবারের মূল্যবোধ এনে ‘ইমোশনাল মার্কেটিং’ কৌশল স্থান পাবে; যাতে ধর্মীয় নির্দেশনায় যেই আধ্যাত্মিকতার কথা বলা হয়, তা বাদ দিয়ে বরং মানুষের নিজস্ব অভ্যাসগত মূল্যবোধকে বেশি অনুসরণ করার সম্ভাবনা থাকবে।
আরও পড়ুনরমজানে ৬টি অভ্যাস১০ মার্চ ২০২৫কী করা উচিত
ব্র্যান্ড ও ভোক্তা উভয়কে এটির প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। ব্র্যান্ডগুলোকে অবশ্যই চিন্তাশীল, শ্রদ্ধাশীল ও ব্যক্তিগতকৃত কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যাতে এআই ধর্মীয় ঐতিহ্যকে ব্যাহত না করে বরং সমৃদ্ধ করে। ব্যবসাগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে, এআই-চালিত বিপণন ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। অন্যদিকে, ভোক্তাদেরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা রমজানে কতটা প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।
সূত্র: ক্যাম্পেইন এশিয়া
আরও পড়ুনরোজার নিয়ত কখন করবেন১০ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর এআই চ ল ত রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’