বাংলাদেশকে আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এগিয়ে নিতে সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। সম্প্রতি আসিয়ান কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে কাজ করার আহ্বান জানান মাহবুবুর রহমান। গতকাল রোববার সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্সের (আসিয়ান) সদস্য হতে গত জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এ সহযোগিতা চান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে
গত বছরের নভেম্বরে এ বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ার সহযোগিতা চান তিনি।  
আসিয়ান কূটনীতিকরা গত ২০ মার্চ ঢাকায় আইসিসিবি বাংলাদেশ কার্যালয় পরিদর্শন করেন। আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সহসভাপতি এ.

কে. আজাদ ও নাসের এজাজ বিজয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। 

আসিয়ান কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন,  বাংলাদেশ ও আসিয়ানের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে জোটের দেশগুলোতে বাংলাদেশের স্বল্প রপ্তানি। এ বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে তিনি আসিয়ান দেশগুলোকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি বাড়ানোর আহ্বান জানান।
বৈঠকে আসিয়ান ঢাকা কমিটির চেয়ারম্যান ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ই এনগুয়েন মাঙ্ক কুয়াং বলেন, আসিয়ান বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় রপ্তানি বাজার হিসেবে দেখে। তবে বাংলাদেশকে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং আসিয়ান দেশগুলোতে তার পণ্য সম্পর্কে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
কূটনীতিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত নিনা পি. কাইংলেট, ব্রুনাই দারুসসালামের হাইকমিশনার হাজি হারিস বিন হাজি ওথমান, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ কিয়াও সোয়ে মো, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত, থাই দূতাবাসের মিনিস্টার কাউন্সিলর পানোম থোংপ্রায়ুন এবং ইন্দোনেশিয়ান দূতাবাসের অর্থনৈতিকবিষয়ক তৃতীয় সচিব এম রব্বি ফিরলি হারখা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ